ভ্রমণের জন্য গোছগাছ
শেয়ার করুন
ফলো করুন

সপ্তাহান্ত এগিয়ে এলেই হঠাৎ মনে হলো যেন সমুদ্র ডাকছে, অথবা পাহাড়। আবার হয়ত বন্ধুরা মিলেই করা হলো ঝটিকা সফরের পরিকল্পনা। কোথাও তো হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা। তবে বাদ সাধতে পারে কাঁধের ইয়া বড় বোচকা। জুতা-ছাতা, কাপড়-চোপড়ের ভার বইব নাকি ঘুরে বেড়াব—এমন এক দশা। তাই ব্যাকপ্যাকার ট্র্যাভেলারদের কাছে চটজলদি হালকা প্যাকিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। ভ্রমণ বিশেষজ্ঞ ও ভ্রমণকারীদের অভিজ্ঞতার আলোকে সাজানো হয়েছে এই নিবন্ধ।

বিজ্ঞাপন

প্যাকিং তালিকা তৈরি করা

কোথাও যেতে হলে সবার আগে কী নেওয়া হবে, তার তালিকা তৈরি করা প্রয়োজন। ঘন ঘন ভ্রমণ করার অভ্যাস থাকলে এই তালিকা খুবই সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। তালিকা দেখে দেখে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিয়ে আবার ফেরার সময় তালিকা দেখেই ব্যাগ গোছালেই হলো। এ কারণে বোঝা যাবে কিছু ফেলে যাওয়া কিংবা ফেলে আসা হলো কি না।

অর্গানাইজিং ওয়েবসাইট ‘দ্য হোম এডিট’-এর ক্লি শিয়ারার এবং জোয়ানা টেপলিন বলেন, ‘মানুষের সবচেয়ে বড় ভুলগুলোর একটি হলো, কোনো সিস্টেমকে মাথায় না রেখেই শুধু একটি স্যুটকেসে জিনিসগুলো ফেলে দেওয়া।’ তাই একটি প্যাকিং তালিকা তৈরি থাকলে তাতে নিজের সব প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোই নেওয়া হয়। এই তালিকায় চোখ বোলালে বোঝা যাবে, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বা কম প্যাকিং করা হচ্ছে কি না।

বিজ্ঞাপন

সঠিক ব্যাগ ও স্যুটকেসের ব্যবহার করুন

কত দিন ভ্রমণ করা হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে লাগেজ কিংবা ব্যাগ বেছে নিতে হবে। ভ্রমণের ধরনের ওপরেও নির্ভর করে কি সাইজের আর কেমন ব্যাগ নেওয়া উচিত। একটি কমপ্যাক্ট বা মাঝারি আকারের স্যুটকেস সমুদ্রসৈকতে অবকাশযাপনের জন্য আদর্শ। কারণ, এতে সহজেই প্রচুর হালকা পোশাক প্যাক করা যায়। আবহাওয়া গরম থাকলে এবং সারাদিন ঘোরাঘুরি করলে পোশাক বদলানোর প্রয়োজন হতে পারে।
অন্যদিকে পাহাড়ে কিংবা কোন দুঃসাহসিক ভ্রমণের জন্য একটু বিশেষায়িত ব্যাগ দরকার হবে। বিশিষ্ট ভ্রমণবিদ অ্যান ম্যাকালপিনের প্যাকিং নীতি হলো, ‘কম জিনিস, কম চাপ।’ তিনি একবার ২১ দিন ভ্রমণ করেছিলেন মাত্র ২১ ইঞ্চির ক্যারি-অন ব্যাগ নিয়ে। ২১ পাউন্ডেরও কম ওজনের ক্যারি অন ব্যাগটি নিয়ে তিনি ভারত ও জর্ডান থেকে নিউইয়র্ক শহর পর্যন্ত জলবায়ু পরিস্থিতি কভার করেছিলেন। আর আরামে ভ্রমণের জন্য এমন ব্যাগ নেওয়া উচিত যেন দুই কাঁধে সহজেই নেওয়া যায়। এসব ব্যাগ অবশ্যই ওয়াটারপ্রুফ হতে হবে।

নিচের দিকে ভারী জিনিস

ব্যাগের নিচের দিকে কিংবা স্যুটকেসের চাকার প্রান্তে জুতা এবং বইয়ের মতো ওজনদার জিনিস রাখতে হবে। এভাবে সাজালে ব্যাগটিকে দাঁড় করিয়ে রাখা সহজ হবে। বড় জিনিসগুলো সব সময় স্যুটকেসের নিচে থাকা উচিত। এগুলোকে সমতল স্তরে রাখা ভালো।

জামাকাপড় রোলিং ও ফোল্ডিং

কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সময় ব্যাগে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি জায়গা দখল করে, তা হলো জামাকাপড়। জায়গা যেন কম লাগে, তার জন্য কাপড় রোল করে ব্যাগে রাখতে হবে। এ জন্য টপসগুলো উল্টে নিয়ে হাতা দুটো ভাঁজ করে নিচ থেকে ওপরে রোল করতে হবে। প্যান্টের ক্ষেত্র পা দুটো একসঙ্গে রেখে কোমর থেকে নিচের দিকে ভাঁজ করতে হবে।

ভ্রমণবান্ধব কাপড় বেছে নিতে হবে

ভ্রমণের জন্য নিটওয়্যার বেছে নিতে হবে। যেমন স্প্যানডেক্স দিয়ে তৈরি পোশাক খুবই উপযোগী এ ক্ষেত্রে। লিনেন আর সুতির কাপড় কুঁচকে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। তাই রিংকল ফ্রি ফেব্রিকের পোশাক ব্যবহার করা সুবিধাজনক। ভ্রমণে সব সময়ে আবহাওয়া, সময় ও স্থানের জন্য উপযোগী আরামদায়ক পোশাক নির্বাচন করাই শ্রেয়।

একটি অতিরিক্ত টোট ব্যাগ রাখা

অনেকেই বেড়াতে গিয়ে কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন। সেসব নেওয়ার জন্যই ট্র্যাভেল ব্যাগের ভেতরে ভাঁজ করে রাখা যায়, এমন টোট ব্যাগ নেওয়া ভালো। এই
ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখতে পারেন।

মোটা তোয়ালে না নিয়ে গামছা বা পাতলা তোয়ালে নিলে ভালো। এতে ব্যাগে জায়গাও কম লাগবে, দ্রুত শুকিয়ে যাবে। আলাদা একটি ছোট ব্যাগে ব্রাশ, পেস্ট, ফেসওয়াশ, সানস্ক্রিন মিনিপ্যাক, ছোট বোতলে ভরা শাওয়ার জেল, সেফটিপিন, চিরুনির মতো নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র নিতে হবে। রাবারের স্যান্ডেল, ছাতা, রোদ-চশমা, পাওয়ার ব্যাংক, চার্জার, মাল্টিপ্লাগ, ক্যাপ, পলিব্যাগ, পানির বোতল সঙ্গে রাখতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখতে হবে। এ ছাড়া মশা বা পোকার কামড়ের জন্য মলম, ওরস্যালাইন বা গ্লুকোজ এবং স্ট্রিপ ব্যান্ডেজ নেওয়া উচিত। চুল ঢাকার স্কার্ফ বা ব্যান্ডানা রাখা যায়। আবার রোদের হাত থেকে বাঁচতে বা স্টাইলের জন্য স্কার্ফের জুড়ি নেই।

সূত্র: বি মোর উইথ লেস, কন্ডে নাস্ট ট্র্যাভেলার্স, অ্যানি ম্যাকালপিন প্যাক ইট আপ, দ্য হোম এডিট

মডেল: মাহেলেকা জাবীন ও যশ, মেকআপ: পারসোনা, কোরিওগ্রাফি: অখিলা সাহা, স্থান: পারসোনা স্টুডিও, ছবি: সাইফুল ইসলাম

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২২, ১৩: ১৮
বিজ্ঞাপন