বৃষ্টিভেজা ধানলদং
শেয়ার করুন
ফলো করুন

ক্যালেন্ডারের হিসাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় তখনো গ্রীষ্ম। তবে বৃষ্টি নামছিল প্রায়ই। ছোটখাটো এক বন্যাও হয়ে গিয়েছিল আগস্টের শুরুতে। মাঝেমধ্যেই হচ্ছিল উথালপাতাল বৃষ্টি, যাকে ইংরেজিতে বলে ক্যাটস অ্যান্ড ডগস।

উপর থেকে সুজু পালবংকে ঠিক এমন দেখায়
উপর থেকে সুজু পালবংকে ঠিক এমন দেখায়

যেখানে আমরা থাকি, সে জায়গাটা চিওনবুক বিভাগের চুংজু জেলার একটি গ্রাম। নাম ধানলদং। গ্রাম হলেও সব রকম নাগরিক সুবিধা পাওয়া যায় এখানে। কংউক ইউনিভার্সিটির একদম গাঘেঁষা বলেই হয়তো। লোকে একে বুড়োদের গ্রাম বলেন।

বিজ্ঞাপন

গ্রামে সব বর্ষীয়ান লোকেদের বাস। তরুণ প্রজন্ম পাড়ি জমিয়েছে দূর শহরে, পড়াশোনা কিংবা জীবিকার তাগিদে। বুড়োরা আগলে রেখেছেন ভিটেমাটি। প্রায় সবাই খেতখামার করেন। রেস্তোরাঁগুলোও চালান তাঁরাই বেশির ভাগ। অবসরে গলফ খেলেন। টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয় নিয়মিত।

সুজু পালবংয়ের উপরের হাইকিং ব্রিজ
সুজু পালবংয়ের উপরের হাইকিং ব্রিজ

বৃষ্টি শেষে রোদ উঁকি দিতেই আজ বের হয়ে পড়লাম বৈকালিক ভ্রমণে। ধানলদংয়ের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একটি নদী। নদীর নাম ধালচিয়ন। আমাদের দেশের খালের মতো নদী আর চারপাশে সবুজ। নদীর পাড় ঘেঁষে উঁচু রাস্তার কিনারা ধরে বসার জায়গা করা। খালের মতো নদীটা তিন দিনের বৃষ্টিতেই কেমন ফুলেফেঁপে একাকার। কলকল শব্দে বয়ে যাচ্ছে। আসার পথে উপড়ে নিয়ে আসছে গাছ, নুড়ি, কাঠের টুকরা। ঘোলাটে পানির কলকলানি, স্রোতের ঘূর্ণি—এই দূর দেশে বসেও মনে করিয়ে দিচ্ছিল দেশের কথা। নদীর ভাষা বোধ হয় সব দেশে একই রকম!

বিজ্ঞাপন

চুংজু জেলাটা পাহাড়বেষ্টিত। ধানলদংয়ের চারধারেও তাই পাহাড়। বৃষ্টির পানি ঝরনার মতো গড়িয়ে পড়ছে পাথুরে সিঁড়ি বেয়ে। সে এক মনোহর দৃশ্য। গেল সপ্তাহে নদীর পাড়ে নেমে আসার সিঁড়ি দিয়ে যেয়ে পা ডুবিয়ে এসেছিলাম নদীর জলে। আজ সেই সিঁড়িতেই ঝরনার আবহ।

একটু বৃষ্টি হলেই উঁচু পহাড়ের ঝিরি থেকে এমন ঝরণাধারা নেমে আসে
একটু বৃষ্টি হলেই উঁচু পহাড়ের ঝিরি থেকে এমন ঝরণাধারা নেমে আসে

হাঁটতে হাঁটতে দেখছিলাম, বকেরা কাদা ঘাঁটছে। বসার জায়গাগুলোতে আজুসসি-আজুম্মারা কেউ কেউ জোড়ায় বসে গল্প করছেন, কেউ কেউ চুপচাপ প্রকৃতিকেই উপভোগ করছেন দুচোখ ভরে।

নদীর হাওয়ায় পেটের খিদে চনমনিয়ে উঠল বলেই চলে গেলাম ধানল ক্যাফেতে। নদীর পাড় ঘেঁষে অনেকটা জায়গা নিয়ে তৈরি ক্যাফেটা। হালকা স্ন্যাকস—রেডি বিন বান, একখানা আইসড আমেরিকানো আর হট কাপুচিনো নিয়ে বসলাম ব্যাকইয়ার্ডে। যেখান থেকে নদী, পাহাড়, আকাশ—সমস্তই দেখা যায়।

হালকা স্ন্যাকস—রেডি বিন বান, একখানা আইসড আমেরিকানো আর হট কাপুচিনো
হালকা স্ন্যাকস—রেডি বিন বান, একখানা আইসড আমেরিকানো আর হট কাপুচিনো

ঠিক সন্ধ্যাবেলায় আধখানা চাঁদের দেখাও মিলল। রেড বিন বানটা অনেকটা আমাদের দেশের তেলপিঠার মতো। তফাতটা হচ্ছে ভেতরে থাকে রেড বিন দিয়ে তৈরি জ্যামের পুর। গরম ধোঁয়া ওঠা কফি, সামনে প্রকৃতির অকৃত্রিম সৌন্দর্য আর পাশে প্রিয় মানুষ—বৃষ্টিস্নাত চুংজুর দিনগুলো এমন মনোরম হবে, তা কি জানতাম!

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২২, ১০: ০৮
বিজ্ঞাপন