হেমন্তের এই রূপবৈচিত্র্য আপনার হৃদয়ে এনে দেবে হিমশীতল অনুভব। কারণ, অন্য সব অঞ্চলের আগে শীতের আমেজ শুরু হয়ে যায় উত্তরের জেলাগুলোতে বিশেষভাবে ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড়ে। সকালের হালকা কুয়াশায় দূর্বাঘাসের ওপর পরে থাকা শিউলি ফুলের স্বর্গীয় ঘ্রাণ দিয়ে শুরু হয় এখানে দিন। সেই সঙ্গে নতুন গাছের খেজুরের রস আর নবান্নের নতুন চালের রকমারি পিঠা তো আছেই। রাস্তার মোড়ে সাজানো থাকে পিঠার পসরা।
এ সময়ে সবচেয়ে উত্তরের জেলাগুলোতে বিকেল এক অপরূপ সাজে সেজে ওঠে, যা লিখে প্রকাশ করা অসম্ভব। এ সুন্দর দৃশ্য আপনাকে নিজ চোখে অবলোকন করতে হবে। এর জন্য চলে যেতে পারেন তেঁতুলিয়ার প্রাচীন কোনো রাস্তায়, যেখানে বিকেলের আকাশে ভেসে ওঠে কাঞ্চনজঙ্ঘার এক অপরূপ দৃশ্য। দূরের সেই হিমালয় উঁকি দিয়ে জানান দেয় তার রহস্যে ঘেরা অস্তিত্ব।
অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পশ্চিম আকাশে খালি চোখে এখান থেকে দেখতে পাবেন এ দৃশ্য। সেই সঙ্গে পাবেন রাস্তার ধারে সারি সারি চায়ের বাগান। এর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। এ ছাড়াও ঘুরে আসতে পারেন মহানন্দা নদী, তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো ও বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট।
পঞ্চগড়ের পাশে অবস্থিত ঠাকুরগাঁও জেলা। হেমন্তের অপরূপ সৌন্দর্যে মেতে ওঠে জেলাটি। এ সময়ে অঞ্চলটির বিশেষ আকর্ষণ দুর্গাপূজা। বেশ বড়ভাবে এ এলাকায় উদ্যাপিত হয় দুর্গাপূজা। সেই সঙ্গে নানা ধরনের মেলার সমাহার তো আছেই। স্থানীয় ভাষায় এ মেলাগুলোকে বলা হয় হাঁটি।
যেখানে আপনি পাবেন স্বর্গীয় স্বাদের রকমারি খাবার। এর মধ্যে গুড়ের জিলাপি, নানা ধরনের বড়া, নাড়ুর নাম উল্লেখ না করলেই নয়। সেই সঙ্গে এই জেলায় রয়েছে এশিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ আমগাছটি। যেটি প্রায় দুই বিঘা জমিজুড়ে রয়েছে। এ ছাড়াও ঘুরে আসতে পারেন রাজা টংকনাথের জমিদারবাড়ি, নারগুন খেজুরবাগান, শালবাগানসহ নানা জায়গায়।
আপনি যদি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো দেখতে ভালোবাসেন, তবে সুনসান নীরব শহর দিনাজপুরের কথা একেবারেই ভুলে যাবেন না। যদিও শহরটি লিচু আর সুগন্ধি চালের জন্য বিখ্যাত, তবে এখানে রয়েছে বেশ কিছু অসাধারণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এখানেই অবস্থিত বিখ্যাত সেই কান্তজির মন্দির। অবিভক্ত ভারতের ১১তম আশ্চর্য ছিল এটি। দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে ঢেপা নদীর তীরে অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দির। মন্দিরটি মূলত শ্রীকৃষ্ণের জন্য নিবেদিত।
কালিয়াকান্ত জিউ, অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ স্থাপনের জন্যই মন্দিরের নামকরণ হয়েছে কান্তজিউ, কান্তজি বা কান্তজির। নির্মাণকালে মন্দিরটির চূড়ার উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট। মন্দিরটির সারা দেহে রয়েছে পোড়ামাটির ফলক বা টেরাকোটার অনিন্দ্যসুন্দর কারুকাজ। প্রায় ১৫ হাজার টেরাকোটার ফলকসমৃদ্ধ এ মন্দির অবিভক্ত বাংলার সবচেয়ে সুন্দর মন্দির হিসেবেও খ্যাত। কারণ, এত সুন্দর টেরাকোটার ফলক দিয়ে সাজানো মন্দির খুব কমই রয়েছে। তবে এখানে আরও বেশ কিছু অসাধারণ স্থাপত্য রয়েছে যেমন দিনাজপুর রাজবাড়ি, নয়াবাদ মসজিদ ও শুরা মসজিদ। এ ছাড়াও ঘুরে আসতে পারেন রামসাগর, সুখ সাগর, সীতাকোট বিহারের মতো স্থানগুলো।
উত্তরের দিকে গেলে আরেকটি জিনিস আপনাকে মুগ্ধ করবে তা হলো সরলতা। সবকিছুর মধ্যেই খুঁজে পাবেন এক স্নিগ্ধ সরলতা। এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের অসাধারণ একটি ক্ষমতা হলো চেনা–অচেনা সবাইকে তাঁরা আপন করে নিতে পারেন।