ভ্রমণ যখন হতে পারে প্রাণঘাতী
শেয়ার করুন
ফলো করুন

গবেষকেরা বলেন, ভ্রমণের মতো রোমাঞ্চে ভরা কার্যক্রমগুলো করার সময় অনেক ক্ষেত্রে অনেক বেশি হ্যাপি হরোমন নিঃসৃত হয়; এর মাত্রা বেশি হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই অভিযাত্রীরা অসতর্ক হয়ে পড়েন, যার ফলে ঘটে চরম দুর্ঘটনা।
গত দুই দিনের দুটি সংবাদ ‘বান্দরবানে সাইংপ্রা ঝরনায় গিয়ে পাহাড় থেকে পড়ে পর্যটকের মৃত্যু’ ও ‘কিশোরগঞ্জের মিঠামইন হাওড়ে ঘুরতে গিয়ে নৌকা থেকে পড়ে নিখোঁজ হওয়ার ৪২ ঘণ্টার পর এক পর্যটকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে’। উভয় ঘটনা আসলেই হৃদয়বিদারক। গত সপ্তাহেই গিয়েছিলাম মিরেরসরাইয়ের বারৈয়াডালা জাতীয় উদ্যানের কমলদহ ট্রেইলে। পাহাড়ি ফ্ল্যাশ ফ্লাড বা হড়কা বানে এই মুহূর্তে পাহাড়ি নদীগুলো রীতিমতো বিধ্বংসী হয়ে আছে। মাঝেমধ্যে পার্বত্য অঞ্চলে কিউমুলোনিম্বাস মেঘ থেকে হঠাৎ প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হলে তা থেকে যে আচমকা বন্যার সৃষ্টি হয়, একে হড়কা বান বলে। সেই সঙ্গে পাথর শেওলায় জমে পিচ্ছিল হয়ে থাকে; ফলে পা হড়কে ঘটে চরম দুর্ঘটনা।

এসব দুর্গম অঞ্চলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা পাওয়া সম্ভব নয়। একইভাবে সাঁতার জানেন বা না জানেন লাইফ জ্যাকেট ছাড়া যেকোনো হাওড় বা জলপ্রবণ এলাকায় এ সময় ভ্রমণ জীবনসংশয়ের কারণ হতে পারে। এমনিতেই ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা ঢলে আবারও নদ–নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে, সে কারণে এই মুহূর্তে নৌভ্রমণ অনুচিত। অনেক সময় দেখা যায়, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায়, বিশেষত ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনের সময় একদল অত্যুৎসাহী অভিযাত্রী চলে যান উপকূলীয় অঞ্চল কিংবা কক্সবাজারে। এই প্রবণতা আসলেই বিপজ্জনক। এই সময় স্থানীয় ব্যক্তিরাই থাকেন নানা সংকটে। ফলে সব সময় সাহায্যও পাওয়া যায় না।

বিজ্ঞাপন

আলীকদম

এখানকার ঝরনাগুলোয় এখন প্রচুর ফ্ল্যাশ ফ্লাডের কারণে বিপজ্জনক হয়ে আছে। এমনিতেই দুর্গম, তার ওপরে শেওলা জমা পিচ্ছিল পাথরে পা হড়কে পড়ে গতকালই একজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃষ্টি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখানে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

হামহাম জলপ্রপাত

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দির হামহাম বা চিতা জলপ্রপাত। অনেক ঝিরিপথ থাকার জন্য একে বলা যায় জোকের স্বর্গরাজ্য। সেই সঙ্গে জিরির পানিতে হচ্ছে ফ্ল্যাশ ফ্লাড। তাই এ সময় এখানে ভ্রমণ না করাই শ্রেয়।

বিজ্ঞাপন

মিরেরসরাই রেঞ্জ ও সীতাকুণ্ড

এখানে ছোট–বড় বেশ কিছু ঝরনা আছে। ফ্ল্যাশ ফ্লাডের কারণে পাথর আর পাহাড়ি টিলা বেশ পিচ্ছিল হয়ে আছে, তাই এখানে এখন ভ্রমণ না করাই ভালো।

রোয়াংছড়ি ও রেমাক্রি

এমনিতেই রয়েছে পাহাড়ি নদী, সেই সঙ্গে এখানে নেটওয়ার্ক না থাকায় এই দুর্গম এলাকায় অত্যুৎসাহী হয়ে এই সময় না যাওয়াই শ্রেয়।

সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর

এসব জায়গায় এই মুহূর্তে পাহাড়ি ঢলে অনেক পানি। গভীরতা বেশি। এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় তাই ভ্রমণ করা উচিত নয়; বরং আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই শ্রেয়। জলপ্রবণ স্থান ও পাহাড়ে ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন। নচেৎ যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করুন। বেঁচে থাকলে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য প্রাণভরে উপভোগ করতে পারবেন। কিছু পর্যটন স্থানে তাই আপাতত না গিয়ে অন্য কোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত করাই হবে উত্তম।

মিঠামইন, টাঙ্গুয়া ও অন্যান্য হাওড়

যেহেতু পানি অনেক বেশি, তাই এই মুহূর্তে না যাওয়াই ভালো এবং গেলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেটসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিশ্চিত করে তারপরই যেতে হবে।

ছবি: লেখক

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৩, ০৬: ০০
বিজ্ঞাপন