শান্ত প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট
শেয়ার করুন
ফলো করুন

রাতারগুলকে অনেকেই সিলেটের সুন্দরবন বলেন। আর জলময় সবুজ জায়গাটির বৈশিষ্ট্যও তেমন। সপ্তাহভর ক্লান্তিকর ব্যস্ততা থেকে একটু বিরাম পেতে সিলেটের রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট এক দারুণ জায়গা। সিলেট জেলা শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলায় এর অবস্থান। রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের জলডোবা বনটি ৩০ হাজার ৩২৫ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত।

ছবিঃ পূর্ণ দাস

এখানে জলাভিযানে গেলেই দেখা যায়, হিজলগাছের সারি ডুবে আছে পানিতে। তার ফাঁক দিয়ে নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন এখানে গেলে।

বিজ্ঞাপন

ইঞ্জিন ছাড়া বইঠা বাওয়া নৌকা দিয়ে এই বনে প্রবেশ করতে হয়। হরেক রকম পাখিরও দেখা পাবেন সেখানে। বনের মধ্যে একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে। সেখানে উঠে ওপর থেকে বনটা দেখতে পারবেন। এই মিঠা পানিতে ডোবা বনটিতে উদ্ভিদের দুটি স্তর আছে। ওপরের স্তরটি মূলত বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ নিয়ে গঠিত আর নিচের স্তরটিতে ঘন পাটিপাতার আধিক্য দেখা যায়।

বর্ষায় সময় পুরো বন একই রকম লাগে। বছরে চার থেকে পাঁচ মাস এই বনের অনেক গাছ পানির নিচেই তলিয়ে থাকে। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর রাতারগুল ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। শীতের সময় হাজারো অতিথি পাখি আসে এখানে। এটি মূলত প্রাকৃতিক বনভূমি হলেও স্থানীয় বন বিভাগ এখানে হিজল, বরুণ, করছসহ বিভিন্ন গাছ রোপণ করে।

আরও আছে কদম, জালিবেত, অর্জুনের মতো জলসহিষ্ণু বৃক্ষ। এ ছাড়া এই বন বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম। সিলেট শহর থেকে গোয়াইনঘাট যেতে গোয়াইন নদী দিয়ে রাতারগুল যেতে অসাধারণ সুন্দর পথ পাবেন আপনি বর্ষার শেষের এই সময়ে। এ ছাড়া নদীর চারপাশের দৃশ্যের সঙ্গে দেখবেন দূরে ভারতের মিজোরামের উঁচু সবুজ পাহাড়।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা বা দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাসে, ট্রেনে কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে চলে আসতে হবে সিলেট শহরে। আপনি চাইলে আকাশপথে সিলেট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও যেতে পারেন। শহর থেকে সারা দিনের জন্য সিএনজি বা লেগুনা ভাড়া করতে পারেন। এর কাছেই রয়েছে ভোলাগঞ্জ ও বিছনাকান্দি। চাইলে সেখানেও ঘুরে আসতে পারেন।

ছবিঃ পূর্ণ দাস

রাতারগুলে ঢোকার পর আপনাকে সরকারি ফি পরিশোধ করতে হবে। জঙ্গলে ঢোকার জন্য জেলেদের ছোট ছোট নৌকা আছে। নির্দিষ্ট ভাড়া দিয়ে ঘণ্টাভেদে ঘুরে বেড়াতে পারেন সেখানে। এ ছাড়া রাতারগুলে সাম্প্রতিক ইকো রিসোর্ট চালু হয়েছে, যেখানে রাতে তাঁবুতে বসবাসের ব্যবস্থা রয়েছে। সঙ্গে সকালের নাশতা আর বারবিকিউ মিলবে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার প্যাকেজে।

বর্ষায় সব পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় গাছের ডালে সাপ আশ্রয় নেয়। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকুন। এ ছাড়া রয়েছে জোঁকের উপদ্রব। পানির গভীরতা বেশি থাকলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে রাখুন। এসব টুকটাক বিষয় মাথায় রাখলে এখানে ভ্রমণ হবে নির্বিঘ্ন। তাই এই সপ্তাহান্তের ছুটিতে খানিকটা জলময় সবুজের আস্বাদন হয়ে যাক, নাহয় রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টে।

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৩, ১৩: ৫৮
বিজ্ঞাপন