ঈদের সময়টুকু ঢাকা একেবারেই অন্য রূপে ধরা দেয়। সেই চিরচেনা দুর্বিষহ ট্রাফিক জ্যাম, অসহনীয় কোলাহল আর অগুনতি মানুষের ভিড় থেকে স্বল্পমেয়াদি পরিত্রাণ পাওয়া ঢাকাবাসীর জন্য উদ্যাপনের উপলক্ষ হয়ে যায় এই ফাঁকা ঢাকা। আবার এই গঙ্গাবুড়ির শহরের প্রিয় নদী বুড়িগঙ্গা বৃষ্টির পানিতে ভরে উঠেছে। অস্বস্তিকর দুর্গন্ধ আর ময়লা-আবর্জনার দেখা মিলছে না তেমন টানা বৃষ্টির পর। এই সুযোগে বুড়িগঙ্গা থেকে নৌকায় করে ঘুরে এলে বেশ হয়।
প্রথম গন্তব্য হতে পারে সদরঘাট। তাকিয়ে থাকলেই চোখে পড়বে বুড়িগঙ্গার নতুন টলটলে পানি, ঢেউয়ে ভেসে চলা খেয়ানৌকা, ধীর লয়ে চলা স্টিমার, মালবোঝাই কার্গো, ভাসমান ফলের দোকান, দুই পাড়ের মানুষের জীবন, মাঝেমধ্যে বড় বড় ঢেউয়ের দোলায় লঞ্চের দুলে ওঠা!
বড় বা ছোট যেকোনো রকম নৌকাই বেছে নিতে পারেন। নামতে পারেন দূরের কোনো খেয়াঘাটে। শীতল জলে পা ভেজাতে পারেন। চড়তে পারেন খেয়ানৌকায়। এপাড়-ওপাড় করে নদীকে আরও কাছ থেকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে উপভোগ করতে।
এমনকি চাইলে ঘণ্টাব্যাপী ভাড়াও করতে পারেন কোনো নৌকা। সঙ্গে প্রিয়জন থাকলে তো কথাই নেই। এ ছাড়া বুড়িগঙ্গার নদীর আশপাশেই রয়েছে নান্দনিক আহসান মঞ্জিল, একটু ভেতরেই লালবাগ কেল্লাসহ আরও নানা ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা।
ডিঙিনৌকায় চড়তে হলে সাঁতার জানা চাই। কারণ, নদীতে এখন বেশ ঢেউ। খোলা চুলে নদীর বাতাস খেললে মন জুড়িয়ে যাবে। দু–এক ফোঁটা বৃষ্টি পড়লেই বা ক্ষতি কি। তবে বেশি ঝড়-বাদল হলে নৌকা পাড়ে ভিড়িয়ে নিতে হবে। ঘুরতে গিয়ে প্রিয় উকেলেলে বা হারমোনিকাটি সঙ্গে নেওয়া যায়। গুনগুনিয়ে ওঠা যায় আপন মনে।
ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে বাস বা রিকশা দিয়ে চলে যেতে পারেন সদরঘাট বা বুড়িগঙ্গার তীরের বিভিন্ন ঘাটে। আছে চাঁদনি ঘাট, মিটফোর্ড ঘাট, বাদামতলী ঘাটসহ আরও অনেক ঘাট। এপাড়-ওপাড় নৌকা ভাড়া পড়বে ৫০ টাকা করে। সদরঘাট, কালীগঞ্জ, শ্যামবাজার ছাড়াও বেশ কয়েকটা খেয়া পারাপারের ঘাট আছে। যেকোনোটি আপনি বেছে নিতে পারেন সুবিধামতো। এ ছাড়া ঘণ্টাব্যাপী নৌকাভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। দরদাম করে নেওয়ার ওপর নির্ভর করবে।
বড় ‘গুদারা’ নৌকা নিয়ে ঘণ্টাপ্রতি ভাড়ায় ঘুরতে পারেন নদীতে। জিঞ্জিরা ফেরিঘাটে গিয়ে মালাই চা খেতে পারেন। সোয়ারীঘাট থেকে ছোট লঞ্চে করে খোলামোড়ার ৪০ মিনিটের নৌ ভ্রমণও খুব ভালো লাগবে। খোলামোড়া লঞ্চঘাটে গিয়ে রাজলক্ষ্মীর দই-মিষ্টি খেতে পারেন। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জের আমিরাবাগের সালাম বাবুর্চির খুদের ভাকা বা এন্তাজ আলীর খুদের খিচুড়ি খাওয়া যায়। আর এই পাড়ে পুরান ঢাকার বিখ্যাত সব খাবার তো আছেই।
মডেল: কাজী তারানা