ছুটি পেলেই দূরে কোথাও ছুটে যাওয়া আমার মনকে প্রফুল্ল করে। মনকে শান্ত করার জন্য এর যেন কোনো বিকল্প নেই। প্রকৃতির খুব কাছাকাছি চলে যেতে পারলে আপনার সব ক্লান্তি দূর হবেই। আর সে জায়গা যদি সমুদ্রসৈকত হয়, তাহলে তো কথাই নেই। সেখানের দখিনা বাতাস গায়ে মাখলে আপনার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। সাগরপাড়ের হিমেল হাওয়া, চিকচিকে বালু, এর সবই ভরিয়ে দেবে আপনার মনকে এবং গাঙচিলদের ডানায় ভর করে নিয়ে আসবে প্রশান্তি।
সমুদ্রের জলে পা ফেলতে যেকোনো দ্বীপই হতে পারে আপনার গন্তব্য। এবার আমার গন্তব্য এমন একটি দ্বীপ, যেখানে লাল কাঁকড়ার রাজত্ব। সেখানকার জল কেবলই নীল। আকাশ ও সাগর মিলেছে এই নয়নাভিরাম দ্বীপে। ঘুরে এলাম কুতুবদিয়া থেকে।
ঢাকা টু কক্সবাজার রুটের একটি বাসে উঠে নামলাম চকরিয়া, সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মগনামা ঘাট। তারপর সেই ঘাট থেকে স্পিডবোটে ১০–১৫ মিনিটে কুতুবদিয়া পৌঁছালাম। স্পিডবোটে জনপ্রতি ৪০ টাকা ভাড়া নিল। বছরের বেশির ভাগ সময়ই এই চ্যানেল বেশ উত্তাল থাকে।
ঢেউ ভেঙে ইতিমধ্যে দ্বীপে পৌঁছে গেছি। সূর্যাস্ত দেখার জন্য অসম্ভব সুন্দর এই সমুদ্রসৈকত। তবে অন্যান্য জায়গার তুলনায় এই সমুদ্রসৈকতে মানুষের কোলাহল একেবারেই নেই। সন্ধ্যার আকাশ রক্তিম রঙে সেজেছে। জেলেদের বিশাল আকারের দৈত্যের মতো মাছ ধরার নৌকাগুলো সাগরের বুকে দুলছে।
বিট্রিশ আমলে সমুদ্রপথে চলাচলকারী জাহাজের নাবিকদের পথ দেখাতে কুতুবদিয়ায় তৈরি করা হয়েছিল একটি বাতিঘর। সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজ, ট্রলার ও নৌকাগুলোকে পথ দেখাতে বহু বছর আগে কুতুবদিয়া দ্বীপে একটি বাতিঘর নির্মাণ করা হয়। সেটি জরাজীর্ণ হওয়ার ফলে সমুদ্রসৈকতের উত্তর–পূর্ব পাশে নতুন বাতিঘর নির্মাণ করা হয়েছে। যা দূর থেকে দেখতে খুবই আকর্ষণীয় লাগে।
সেই বাতিঘর দেখতে গিয়েছিলাম রাতে। দূর থেকে আলো জ্বেলে জলযানগুলোকে পথ দেখায় এই বাতিঘর। রাতের আকাশের ধ্রুবতারার মতো মনে হয়।
এই দ্বীপে প্রাকৃতিক উপায়ে লবণ চাষ হয়। দেশের বিখ্যাত লবণ চাষ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে কুতুবদিয়া অন্যতম। এখানে মূলত মাছ চাষের কারণে জেলেদের কর্মব্যস্ততাই বেশি।এই নির্জন দ্বীপে এক মন্ত্রমুগ্ধকর দ্বীপ।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা বায়ুকল এই কুতুবদিয়ায় অবস্থিত। বিশাল ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে সৈকতের দক্ষিণ প্রান্তে, আলী আকবরের ডেল এলাকায়। সকালে দ্বীপে বেড়াতে গিয়ে সেখানে পৌঁছালাম। সাগরের খুবই কাছে তৈরি করা হয়েছে এই বায়ুকলগুলো।
তবে এই এখানে উন্নতমানের কোনো থাকা–খাওয়ার হোটেল খুঁজে পেলাম না। বড়খোপ বাজারে কিছু ভালো ভালো হোটেল আছে এবং সেখানে ভালো স্থানীয় খাবার পাওয়া যায়। এই দ্বীপে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি রয়েছে নানান দর্শনীয় স্থান। এ সমস্ত স্থান পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। প্রতিবছর হাজারো দর্শনার্থী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে কুতুবদিয়া দ্বীপ আসেন।
পুরো সময় দ্বীপের নয়নকাড়া সৌন্দর্য আমাকে মোহিত করেছে বারবার। সমুদ্রের খোলা মাতাল হাওয়ায় ক্লান্তি–অবসাদ ভাসিয়ে দিয়ে নোনাজলে নিজেকে মুক্ত করে তবেই ফিরলাম কংক্রিটের এই নগরে।
ছবি: আশরাফুল আলম