চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতেই কেন গেল
শেয়ার করুন
ফলো করুন

বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে ভারতের চন্দ্রযান-৩কে নিয়ে। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপোলো-১১-এর প্রথম চন্দ্রাভিযানের পর এই চন্দ্রযান-৩ নিয়েই মনে হয় এত বেশি আলোচনা হচ্ছে—এ কথা বললে খুব বেশি অত্যুক্তি হবে না। অথচ এই মহাকাশযানে কোনো মানুষ যাননি। এখনো যদি কেউ না জানেন এই মহাকাশযানের অভূতপূর্ব অর্জনের কথা, তবে জেনে রাখা ভালো, আগস্ট ২৩ এই প্রথম কোনো মহাকাশযান চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করল। এর আগে চন্দ্রাবতরণগুলো চাঁদের মাঝ বরাবর বা এর আশপাশেই হয়েছে বেশি। সেই ষাটের দশকে মার্কিন মানবশূন্য মহাকাশযান সার্ভেয়ার ৭৪০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশে অবতরণ করেছিল, যা দক্ষিণ মেরুর সবচেয়ে কাছাকাছি ছিল এর আগে।

বিজ্ঞাপন

ভারতের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএসআরওর বিজ্ঞানীরা এই চন্দ্রমেরু নিয়ে কেন এত আগ্রহী, তা-ও এক আগ্রহের বিষয়। এর উত্তর হচ্ছে, সেখানে বরফের অণু বা হাইড্রোক্সিল যৌগ হিসেবে পানির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। চন্দ্রযান-১ অভিযানে সেই ২০০৮ সালেই এমনই ইঙ্গিত মিলেছিল যে চাঁদের মেরু অঞ্চলের গভীর গর্ত বা ক্রেটারে পানির সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। আর দক্ষিণ মেরুই এ ক্ষেত্রে বেশি এগিয়ে আছে। তার কারণ, এর বিশাল অঞ্চল চিরকাল ছায়ায় থাকে আর তাই তা তুলনামূলকভাবে বেশি শীতল।

আর চাঁদের দক্ষিণ মেরুর পানির অস্তিত্ব খুঁজে পেলে তা একদিকে যেমন চাঁদে মানুষের বসত গাড়ার স্বপ্নকে আরও একটু বাস্তবমুখী করবে, আবার সৌরজগতের প্রথম দিকের ইতিহাস সম্পর্কেও ঋদ্ধ হব আমরা। দক্ষিণ মেরুর অ্যাইটকেন বেসিন এমনই এক বিশাল গর্ত। এতে উপস্থিত থাকতে পারে চাঁদের আবরণের নিচের দিককার স্তর আর ম্যান্টেল অংশের উপরিভাগের উপাদান। আর চন্দ্রপৃষ্ঠের গভীরের এই অংশগুলোকে কখনোই সেভাবে জানা হয়নি মানুষের এর আগে।

বিজ্ঞাপন

মজার বিষয় হচ্ছে, কেবল জ্ঞানার্জনের আকাঙ্ক্ষা নয়, এই দক্ষিণ মেরুর প্রতি পক্ষপাতিত্বের পেছনে রয়েছে ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনাও। বিশ্বের যত স্পেস এজেন্সি আর ব্যক্তিমালিকানার স্পেস কোম্পানি দক্ষিণ মেরুর সবকিছু জানতে চায়। কারণ, এখানকার সম্ভাব্য বরফ-পানির মজুত। একেবারে বসত না গাড়লেও চাঁদে অদূর ভবিষ্যতে স্পেস স্টেশন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। আর তার জন্য দক্ষিণ মেরু হতে পারে আদর্শ। ডিপ স্পেস এক্সপ্লোরেশন বা স্পেসের ওপরে ওপরে ছুঁয়ে দিয়ে ঘুরে বেড়ানো নয়, বরং মহাকাশের সবকিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু এই দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। তার কারণ, এখানে তাপমাত্রা অতিরিক্ত কম (-২৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে)। এখানকার ভূমিরূপও বেশি প্রতিকূল ও বিশাল সব খানাখন্দময়। আবার সূর্যের আলো তেমন পৌঁছাতে পারে না বলে চাঁদের দক্ষিণ মেরু অন্ধকারেই থাকে।

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১৬: ০০
বিজ্ঞাপন