একটু আরাম–আয়েশ করে বই পড়ে নিজের মতো করে সময় কাটানো যাবে—এমন জায়গা সব পাঠকই খুঁজে বেড়ান। আর বইপোকাদের জন্য সে রকম পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বুক ক্যাফে, যেখানে বই পড়তে পারার পাশাপাশি থাকে হালকা চা-নাশতা করার ব্যবস্থাও। রাজধানীতে গড়ে ওঠা এসব বুক ক্যাফে তরুণ প্রজন্মকে বই পড়তে ও কিনতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য খুবই সুন্দর উদ্যোগ। ইট-কাঠের ব্যস্ত নগরীতে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে আর আরাম করে বই পড়তে ছয়টি চমৎকার জায়গা সম্পর্কে জেনে নিন।
১. বাতিঘর
পড়ুয়াদের জন্য বাতিঘর যেন একটি বইয়ের রাজপ্রাসাদ। ঢাকার বাংলামোটর–সংলগ্ন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বিল্ডিংয়ের অষ্টম তলায় অবস্থিত বাতিঘর বুক ক্যাফেটি। প্রায় পাঁচ হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর ও মুঘল আমলের স্থাপত্য লালবাগের কেল্লার আদলে তৈরি বাতিঘর। এর দেয়ালে থরে থরে সাজানো আছে কয়েক লাখেরও বেশি বই। ইতিহাস, বিজ্ঞান, দর্শন, আইন, সাংবাদিকতা, সাহিত্য, কবিতা, বিদেশি লেখকের বই—সবকিছুই আলাদা আলাদা সেকশনে নামসহ দেয়ালে সুন্দর করে সাজানো। দেশি ও বিদেশি লেখকের বিপুল শিশুতোষ ও কমিক বইয়ের সমারোহ নিয়ে আছে একটি কিডস কর্নারও। পাঠকেরা এখানে বসে যেমন বই পড়তে পারবেন, তেমনি পছন্দের বইগুলো কিনেও নিয়ে যেতে পারবেন।
২. বুক ওয়ার্ম
৩০ বছর ধরে ‘বুক ওয়ার্ম’ বই পড়ুয়াদের কাছে খুবই পরিচিত একটি নাম। আগে বুক ওয়ার্মের ঠিকানা ছিল পুরোনো এয়ারপোর্ট রোডে। বর্তমানে এটির নতুন ঠিকানা হয়েছে গুলশান ২, জাস্টিস সাহাবুদ্দীন পার্কে। আগের খুব ছোট একটি বুক ক্যাফের চেয়ে এখনকার বুক ওয়ার্মের সাজসজ্জা পুরোই ভিন্ন। বিশাল জায়গায় গড়ে ওঠা বুক ওয়ার্মের সামনে দেখা মিলবে গোলাকৃতির বাগানের। ভেতরে ঢুকলেই কাচের দেয়ালে ঘেরা বিস্তৃত জায়গায় দেশি-বিদেশি বইয়ের সমাহার। বুক ওয়ার্মে বই পড়ার পাশাপাশি রয়েছে সবুজে ঘেরা নিরিবিলি পার্কে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগও। ছুটির দিনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বুক ওয়ার্মে এলে একসঙ্গে সুন্দর সময় কাটাতে পারবেন।
৩. বেঙ্গল বই
ধানমন্ডি ২৭ নম্বর রোডে অবস্থিত বেঙ্গল শিল্পালয় ভবন। সেখানে বেঙ্গল বুক ক্যাফের সঙ্গে আছে বেঙ্গল গ্যালারিও। এখানে প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের শিল্পপ্রদর্শনী হয়। ভবনটির নিচতলায় বুক ক্যাফেতে রয়েছে শিশুদের জন্য আলাদা পড়ার জায়গা। ভবনের বাইরেও রয়েছে বই নিয়ে বসার ও খাবারের ব্যবস্থা। দোতলায় রয়েছে আলাদা একটি ক্যাফে। ছুটির দিনে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতে দিতে বই পড়ার জন্য বেঙ্গল বই হতে পারে খুবই চমৎকার একটি জায়গা।
৪. পাঠক সমাবেশ
রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত পাঠক সমাবেশের বয়স প্রায় ৩৪ বছর। এটি বেশ পুরোনো একটি বুক ক্যাফে। পাঠক সমাবেশের আরেকটি শাখা কাঁটাবন, আজিজ সুপার মার্কেটের অপর পাশে অবস্থিত। বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের বইয়ের সমাহার ছাড়াও এখানে রয়েছে শিশু-কিশোরদের পড়ার উপযোগী নানা ধরনের বই।
৫. দ্য রিডিং ক্যাফে
রাজধানীজুড়ে দ্য রিডিং ক্যাফের তিনটি শাখা রয়েছে। ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু হওয়া দ্য রিডিং ক্যাফের শাখাগুলো বনানী, ধানমন্ডি ও গুলশানে অবস্থিত। ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, শিল্প-সংস্কৃতি, জীবনী, শিশুতোষ বইসহ দেশি-বিদেশি সব ধরনের বইয়ের দেখায় মিলবে এখানে। চা-কফি নিয়ে বসে বই পড়ার সুন্দর ব্যবস্থা আছে বুক ক্যাফেটির ভেতরে। এখানেও শিশুদের জন্য আছে আলাদা বই পড়ার ব্যবস্থা।
৬. প্রথমা বুক ক্যাফে
২০২১ সালের নভেম্বরে যাত্রা শুরু করা প্রথমা বুক ক্যাফে ঢাকা ইউনাইটেড সিটির শেফস টেবিল কোর্টসাইডে অবস্থিত। বই কেনা, নতুন বই খোঁজা ও বই পড়ার জন্য প্রথমা বুক ক্যাফে একটি আদর্শ জায়গা। দেশি-বিদেশি যেকোনো ধরনের মানসম্পন্ন বই পেতে যে কেউ এখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
ছবিঃ ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুক ও লেখক