এখন পর্যন্ত হাতের মুঠোয় থাকা ফোনকে ধরা হয় সবচাইতে কাছের, সবচাইতে জরুরি ও জনপ্রিয় মাধ্যম। তবে এর সুফল যেমন আছে, কুফলও কিছু কম নেই। তরুণ প্রজন্ম আউটডোর অ্যাক্টিভিটি, ব্যায়াম, চলাফেরা ও খেলাধুলার চেয়ে অনেক বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে শুয়ে–বসে মুঠোফোন, ট্যাবলেট বা ডেস্কটপ কম্পিউটারের স্ক্রিননির্ভর কর্মকাণ্ডে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে শরীরের হাড়, মাংসপেশি এবং অন্যান্য অংশে। অল্প বয়সেই তাঁদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে অস্থিজনিত অসুস্থতা।
২০-২৫ বছর বয়সী তরুণদের জন্য এই সময়ে প্রয়োজন রোজকার খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনযুক্ত পুষ্টিকর খাবার থাকা। যদিও তাঁরা অনেক বেশি পরিমাণে আগ্রহী হয়ে উঠছেন জাংক ফুড, ফাস্ট ফুডের ওপর। পরিবারের অন্য সদস্যদের তাই উচিত এই বিষয়গুলোর প্রতি সচেতন হতে সাহায্য করা।
রোজকার খাবারের তালিকায় প্রচুর ক্যালসিয়াম ও মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার যেন থাকে, সে বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে। দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, শাকসবজি, ফলমূল খেতে হবে। আগ্রহী করে তুলতে হবে ঘরে তৈরি পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ ফ্রেশ খাবারে।
ইদানীং অনেক তরুণ হঠাৎই আক্রান্ত হচ্ছে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায়। তার মধ্যে রয়েছে হাড়ের জটিলতা, অস্টিওপোরোসিসের মতো ভয়াবহ হাড়ক্ষয় রোগ।
টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আসজাদুর রহমান জানালেন ইদানীং তরুণ প্রজন্মের অনেকেই কোমরব্যথা, হাড় ক্ষয়সহ হাড়ের নানান রকম জটিলতা নিয়ে আসছেন। দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে ফোনে বা ল্যাপটপে কাজ অথবা বিনোদন দুটোই সারা হয়। ফলে হাড়, মাংসপেশির কর্মক্ষমতা কমে যায়। হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। হাতে ও পায়ে ব্যথা, পিঠে ও কোমরে ব্যথা অনুভূত হয় প্রায়ই।
এসব সমস্যা দূর করতে মো. আসজাদুর রহমান পরামর্শ দিয়েছেন তরুণ প্রজন্মকে নিয়মিতভাবে রোজ অবশ্যই ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা ব্যায়াম করার জন্য। এতে হাড় মজবুত হবে, হাড়ের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মিনিট রোদে থেকে ভিটামিন ডি শরীরে সঞ্চয় করতে হবে। কারণ, রোজ সূর্যালোক থেকে প্রায় ৯০ ভাগ ভিটামিন ডি আমাদের শরীরে সঞ্চয় হয়।
এ ছাড়া মো. আসজাদুর রহমান বলেছেন, রোজকার জীবনে কাছাকাছি কোথাও যাতায়াতের জন্য সব সময় গাড়ি বা রিকশা ব্যবহার না করে হাঁটার অভ্যাস করা। রোজ ৪০ মিনিট দ্রুত হাঁটা একটি চমৎকার ব্যায়াম। এটি শরীরের মাংসপেশিকে সচল রাখে এবং হাড় মজবুত করে।
এ ছাড়া সাইকেল চালানোর অভ্যাস করা যেতে পারে। এতে শরীরের মাংসপেশি সুগঠিত হয়। ক্যালরি বার্ন হয়। হাড়ের ব্যায়ামে হাড় মজবুত হয়। তবে রাস্তায় তরুণ-তরুণীদের সাইকেল চালানোর অভ্যাসও করতে হবে খুব সতর্ক হয়ে, যাতে কোনোরকম দুর্ঘটনা না ঘটে। পিঠে অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগ ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। এটিও শরীরের হাড়ের জন্য ক্ষতিকর।
হাড়ের আরেকটি প্রধান উপাদান ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় দুধ, দুধজাতীয় খাবার এবং মাছ, মাংস ও ডিম থেকে। চেষ্টা করতে হবে রোজকার খাদ্যতালিকায় এ খাবারগুলো বেশি রাখতে।
তরুণ প্রজন্মকে ধূমপান ও মদ্যপানের মতো খারাপ অভ্যাস থেকে দূরে থাকতে হবে। এ দুটোতেই হাড়ের ক্ষয় বৃদ্ধি পায়।
বাথরুম পিচ্ছিল রাখা যাবে না এবং রাতে অন্ধকারে মৃদু আলো জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে। এতে রাতে ঘুম ভেঙে বাথরুমে যেতে কোনো দুর্ঘটনায় পড়ে গিয়ে হাড় ভাঙার মতো ঘটনা ঘটবে না।
ইদানীং তরুণদের মধ্যে বাইক বা মোটরসাইকেল চালানোর প্রতি আগ্রহ লক্ষণীয়। কিন্তু মোটরসাইকেল চালক হিসেবে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন এই তরুণেরাই। মৃত্যু ছাড়াও শরীরের হাড় ভেঙে সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করার ঘটনাও কম নয়। এক জরিপে দেখা গেছে, হাসপাতালে অর্থোপেডিক বিভাগে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক তরুণ আসছেন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হলো, মোটরসাইকেল চালানোর আগে সঠিক প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা অর্জন করা। সেই সঙ্গে অবশ্যই হেলমেট পরার অভ্যাস করা, যাতে রাস্তায় দুর্ঘটনা বন্ধ হয়।
তরুণদের হাত ধরেই জোর কদমে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মেধায়, যোগ্যতায়, সাফল্যে আমাদের সুস্থ–সবল দেহের অধিকারী উজ্জ্বল তরুণ প্রজন্মের বাংলাদেশ এগিয়ে চলুক বীরদর্পে। সব সময় ভালো থাকুক আমাদের তরুণ প্রজন্ম। তবে হাড়সহ সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুস্বাস্থ্যের জন্য জীবনযাত্রা সুশৃঙ্খল ও নিয়ন্ত্রিত হওয়ার মতো উপকারী দিক আর নেই।