রমজান মাসে প্রতিবছর সারা দুনিয়ায় ঠিক কত খেজুর খাওয়া হয়, তার হিসাব করতে গেলে চোখ কপালে উঠবে। সেই সঙ্গে এই এক মাসে খেজুরের যত বিচি ফেলে দেওয়া হয়, তা একসঙ্গে জড়ো করলে একেবারে পাহাড়সমান হয়ে যাবে। অথচ আফসোসের বিষয় হচ্ছে, ফেলে না দিয়ে এই খেজুরের বিচি থেকে তৈরি করা যায় অত্যন্ত উপাদেয় ক্যাফেইনমুক্ত কফি। আবার এই ডেট সিড কফির আছে অনন্য কিছু স্বাস্থ্যগুণ।
কফিতে মাত্রাতিরিক্ত আসক্তির কারণে অনেক সময় বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত জটিলতা দেখা দেয়। আবার নিয়মিত দিনে বেশ কয়েক কাপ কফি পান করেন, এমন ব্যক্তিদের অন্য কোনো অসুস্থতার জন্য কখনোবা ক্যাফেইন সেবনের মাত্রা কমিয়ে আনার পরামর্শ দেওয়া হয়। এমন সময়ে কফির বিকল্প ক্যাফেইনবিহীন বেভারেজের অত্যন্ত প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। মূলত এই ক্যাফেইন বর্জনের আবশ্যকতা থেকেই ডেট সিড কফির উৎপত্তি। যুগে যুগে মধ্যপ্রাচ্যে এই কফি অনেকেই পান করে আসছেন। তবে বছর দশেক ধরে অন্তর্জাল আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডেট সিড কফি নিয়ে চলছে প্রচুর আলোচনা।
খেজুরের বিচি পরিষ্কার করে এর কাগজের মতো পাতলা আবরণ সরিয়ে নিতে হয় প্রথমেই। এবারে এই বিচি রোস্ট করা হয় রোস্টিং ওভেনে। সাধারণ ওভেনেও তা করা যেতে পারে। তারপর বিচিগুলা ঠান্ডা করে কফি গ্রাইন্ডারে মিহি চূর্ণ করে নিলেই ডেট সিড কফি রেডি। এবারে বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণের পালা। প্রয়োজনমতো গরম পানিতে এই পাউডার মিশিয়ে নিলেই ডেট সিড কফি তৈরি হয়ে যাবে। সাধারণত এক কাপ পানিতে পাঁচটি বিচির গুঁড়া দিলে সবচেয়ে ভালো ফ্লেভার আসে।
খেজুরের বিচির কফি বেশ কয়টি ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের খুব ভালো উৎস। এতে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, পলিফেনল ও পটাশিয়াম।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে বলে এটি ফ্রি র্যাডিক্যালস–ঘটিত অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে পারে। ইমিউন সিস্টেমকে করে শক্তিশালী।
এটি একাধারে একটি ক্যাফেইনমুক্ত শক্তিদায়ী পানীয় এবং হজমে সহায়ক। ডেট সিড কফির আছে খারাপ এলডিএল কোলেস্টেরলের বিরুদ্ধে কাজ করার কার্যকর ক্ষমতা।
দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস রোগে ভোগার ফলে বিভিন্ন রকমের লিভার বা কিডনির সমস্যা মোকাবিলায় এই উচ্চ প্রো-অ্যানথোসায়ানিন নামক ফাইটোনিউট্রিয়েন্টযুক্ত পানীয় অনন্য। অনেক গবেষণায় এর কিছু অ্যান্টিভাইরাল গুণাগুণ পর্যবেক্ষণ করা যায়। কেউ কেউ একে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণেও আদর্শ বলে অভিহিত করেন।
পুষ্টিগুণ আর স্বাদে অনন্য এই ডেট সিড কফি জোরেশোরে প্রচলন করার এখনই সময়। প্রতিবছর রমজান মাসে সারা পৃথিবীতে এত খেজুরের বিচি ফেলে দেওয়া হয় যে এর এ রকম একটি কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে, তা সবার জন্যই ভালো। এদিকে খেজুরবীজ সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে এই ডেট সিড কফির কল্যাণে।