রিফাত পারভীন
ফিটনেস ও খাবারের মধ্যে আছে বিশেষ একটি সম্পর্ক। শরীরের জ্বালানি হলো খাবার। আর এটি যেকোনো কাজের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। আর ব্যায়ামের পর আমাদের কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করে প্রতিদিনের খাবার। তরুণদের ক্ষেত্রে খাবারের পরিমাণ ও ধরন—দুটিই আলাদা। বিশেষ করে ব্যায়ামের আগে ও পরে খাওয়া খাবারের ওপরই নির্ভর করে ব্যায়ামের সুফল।
ব্যায়ামের ক্ষেত্রে বর্তমানে সবার মধ্যে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। তা হলো খালি পেটে ব্যায়াম করলে নাকি তা সবচেয়ে বেশি ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোনো রকম খাবার না খেয়ে সম্পূর্ণ খালি পেটে ব্যায়াম করলে বরং ক্যালরি ক্ষয় হওয়ার বদলে পেশিতে সঞ্চিত প্রোটিন থেকে ফ্যাট ক্ষয় হতে থাকে। আর এতে করে শরীর খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে বলে জানান পারসোনা হেলথের প্রধান পুষ্টিবিদ শওকত আরা সাঈদা।
তাই সুস্থ দেহের জন্য ব্যায়ামের আগে কোনোভাবেই খালি পেটে থাকা যাবে না।
ব্যায়াম করার ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টা আগে প্রয়োজনীয় খাবার খেয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন শওকত আরা সাঈদা। কারণ, এই সময়ের আগে খাবার খেলে ব্যায়ামের সময়ে দরকারি শক্তি পাওয়া যাবে না। এতে ব্যায়ামের সময়ে শরীরে আসবে অলসতা। এ ছাড়া মাথা ঘোরা, বমি ভাব, ক্লান্তি, হালকা মাথাব্যথা হতে পারে। শওকত আরা সাঈদা বলেন, ৪৫ মিনিট মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করলে হালকা নাশতায় শক্তিপূরণ সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে ব্যায়ামের আগের খাবারই আপনাকে প্রয়োজনীয় শক্তি দেবে।
ব্যালেন্সড মিল খাওয়ার পরে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে ভারী বা হালকা ব্যায়ামের জন্য। ব্যায়াম শুরু করার ৩০ মিনিট থেকে ৪ ঘণ্টা আগে প্রি-ওয়ার্কআউট খাবার খেয়ে বা নাশতা করে নিতে হবে। কারণ, খাবার হজমের পরই প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যাবে। ভারী খাবার খেতে হলে তা ব্যায়ামের ৩-৪ ঘণ্টা আগে খেতে হবে আর নাশতার জন্য এ সময় হবে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা। এ নিয়ম মেনে চললে ব্যায়ামের সময়ে যথাযথ শক্তিই পাওয়া যাবে, জানান এই পুষ্টিবিদ।
শর্করা
তরুণদের ব্যায়ামের সময়ে শরীরে থাকতে হবে প্রয়োজনীয় সবটুকু শক্তি। তাই ব্যায়ামের আগে কিছু শর্করাজাতীয় খাবার খেতে হবে। কারণ, এর থেকেই পেশি সবচেয়ে বেশি শক্তি পেয়ে থাকে। এই শক্তি শরীরে জমা থাকে এবং ব্যায়ামের পরে চাহিদামতো শক্তি পূরণ করে। কিন্তু শর্করাজাতীয় খাবার খেতে হলে তা হতে হবে অপ্রক্রিয়াজাত, প্রাকৃতিক ও ফাইবারযুক্ত শর্করা। এই শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট প্রধানত ফল, দুগ্ধজাত খাবার, পাউরুটি, শস্য এবং চিনিযুক্ত খাবারে পাওয়া যায়। কম ফ্যাটযুক্ত ফল ও দুগ্ধজাত খাবার খেলে তা সহজেই হজম হয় এবং দ্রুত শক্তি পাওয়া যায়। এ ধরনের খাবার হলো গ্রানোলা বার (যার মধ্যে থাকতে পারে ওটস, বাদাম, চকো চিপস), কয়েক টুকরা ফল, ওটমিল, শুকনা ফল, ক্র্যাকার, টোস্ট ও জুস।
আমিষ
ব্যায়ামের আগে তরুণদের অবশ্যই খেতে হবে আমিষ। শওকত আরা সাঈদা বলেন, ব্যায়ামের আগে ১০ থেকে ৩০ গ্রাম আমিষ খাওয়া দরকার। শরীরে শক্তির জন্য দিনে তিন-চারবার আমিষজাতীয় খাবার খেতে হবে। পনির, মাংস, মটরশুঁটি, সেদ্ধ ডিম, একমুঠো বাদাম, গ্রিক ইয়োগার্ট, চকলেট দুধ এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার ভালো আমিষ।
তরল খাবার
ব্যায়ামের আগে ও পরে শরীরকে রাখতে হবে আর্দ্র। ব্যায়ামের এক ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই দু–তিন গ্লাস পানি পান করতে হবে। আর ভারী ব্যায়াম করলে প্রতি ১০ থেকে ২০ মিনিট পরপর ১ কাপ করে পানি পান করা বাধ্যতামূলক। বিশেষ করে প্রচুর ঘাম হলে তো বটেই। ব্যায়ামের পরও পানি খেয়ে শরীরের পানির কমতি দূর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া প্রয়োজনীয় লবণ ও ইলেকট্রোলাইটযুক্ত তরল পান করা যেতে পারে। তবে উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ব্যায়ামের পরে শরীর শক্তি হারায়, যা পূরণ করতে গিয়ে পেশিগুলো আবার দুর্বল হয়ে পড়ে। ব্যায়ামের পর এই ছোট সময়কে বলা হয় মেটাবলিজম উইন্ড। এ সময়ে প্রায় ৩০ মিনিট শরীরে প্রোটিন সংশ্লেষণের হার বেড়ে যায়। একে বলা হয় একেএ বিল্ডিং মাসল। প্রোটিনের মাত্রা বাড়াতে শেক আকারে খাওয়া যেতে পারে প্রোটিন পাউডার। তবে প্রোটিন শেক খাওয়ার আগে দরকার যথাযথ চিকিৎসকের পরামর্শ।
এর চেয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরে দ্রুত প্রোটিন বাড়াতে খেতে পারেন ফুল ফ্যাট গ্রিক ইয়োগার্ট। এতে শরীরে ২০ শতাংশ প্রোটিন যোগ হবে আর এতে চিনি আছে একেবারেই কম।
শর্করা
গ্লাইকোজেন শরীরের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। আর ব্যায়ামের পর কমে যাওয়া গ্লাইকোজেন বাড়াতে সাহায্য করে শর্করা। ব্যায়াম করার ৩০ মিনিটের মধ্যে আপনার ওজন অনুসারে শূন্য দশমিক ৫ থেকে শূন্য দশমিক ৭ গ্রাম শর্করা খাওয়া যাবে। মিষ্টি আলু, দুধ, ফলের মধ্যে আনারস বা কলা, মুড়ি, ভাত, ওটমিল, আলু, পাস্তা, হোল গ্রেন বা গমের আটার রুটি শরীরে শর্করার কমতি পূরণ করবে।
খাওয়া যাবে ফ্যাট
অনেকেই মনে করেন, ব্যায়ামের পর ফ্যাট হজম শক্তিকে দুর্বল করে দেয় এবং পুষ্টি শোষণে বাধা দেয়। ফ্যাট হজমকে কিছুটা দুর্বল করলেও ব্যায়ামের উপকারিতা কমাবে না। বিভিন্ন রকম বাদাম, বাদামের বাটার, সিডস, শুকনা ফলে থাকা উপকারী ফ্যাট শরীরের জন্য ঢালাওভাবে ক্ষতিকর নয়।
পরেও খেতে হবে পানি
ব্যায়ামের সময় শরীর থেকে পানি ও ইলেকট্রোলাইটস কমে যায়। ব্যায়ামের ১২ ঘণ্টা আগেই শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করতে হবে।
ভারী বা মাঝারি—সব ধরনের ব্যায়ামের পরই সঠিক পরিমাণ ও ধরনের খাবার দরকার। আর তরুণদের ক্ষেত্রেও এর বিকল্প নেই। সঠিক খাবার সঠিক সময়ে খেলেই পাওয়া যাবে ব্যায়ামের সঠিক সুফল।
ছবি: পেকজেলসডটকম