যোগাসন করার জন্য সঠিক পোশাক নির্বাচন জরুরি। যেটা হবে আরামদায়ক, নরম আর স্থিতিস্থাপক। তাহলে স্বচ্ছন্দে আসন করার যাবে।
ইয়োগা প্যান্টগুলো সাধারণত অনেক বেশি নরম, আরামদায়ক ও স্থিতিস্থাপক হতে হবে। তাহলে আসনগুলো সহজে করা যাবে। ইয়োগা প্যান্টের দাম নির্ভর করে এর মান আর ব্র্যান্ডের ওপর। ঢাকায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ইয়োগা প্যান্ট পাওয়া যায়। আবার অনলাইনে অর্ডার করেও কেনা যায় বিদেশি ব্র্যান্ডের প্যান্ট। ভালো মানের প্যান্ট এক থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। এ ছাড়া ঢাকা কলেজের উল্টো দিকের মার্কেটগুলোয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যেও কেনা যায়।
মেয়েদের আসন অনুশীলনের সময় সাধারণ ব্রার পরিবর্তে স্পোর্টস ব্রা পরাই ভালো। তাতে আরাম আর স্বচ্ছন্দ উভয়ই মিলবে। এগুলোর মানভেদে দাম ৪০০ থেকে ২ হাজার টাকা।
শর্টসও অনেকে খোঁজেন যোগাসন করার জন্য। আমাদের দেশে ছেলেরা সাধারণত শর্টস বেছে নেন। শর্টসও বিভিন্ন মান ও দামের রয়েছে। পাওয়া যাবে ফুটপাত থেকে ব্র্যান্ডের দোকানে। দাম ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।
টি–শার্ট ও টপস আসন করার সময় পরা হয়। ১০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে বিভিন্ন সাইজ, রং আর মানের পাওয়া যায়। ইচ্ছা করলে টপস বানিয়েও নেওয়া যাবে।
মোজা পরেও অনেকে আসন করতে আরাম পান। সেটাও কেনা যাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে।
ইয়োগা স্টুডিওতে ইয়োগা ম্যাট ব্যবহার করা সাধারণ ব্যাপার। একে স্টিকি ম্যাটও বলা হয়। এই ম্যাট স্টুডিওতে ব্যক্তিগত স্থান নির্ধারণে সহায়তা করে। এ ছাড়া হাত–পায়ের জন্য ট্র্যাকশন তৈরি করে, যাতে পিছলে না যায়। বিশেষ করে ঘেমে গেলে পিছলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া এই ম্যাট শক্ত মেঝেতে কিছুটা আরামও দেয়। বেশির ভাগ ইয়োগা স্টুডিওতে ম্যাট দেওয়া হলেও নিজের একটা ম্যাট থাকলে ভালো। কারণ, স্টুডিওর ম্যাট অনেকে ব্যবহার করে। আর নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় কি না, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায় না।
এসব ম্যাট বিভিন্ন দামের ও মানের হয়। তবে ম্যাট কেনার আগে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত।
ম্যাটের পুরুত্ব: বেশি পুরু ম্যাট আরামদায়ক হলেও শরীরের জন্য ভালো নয়। সাধারণত এটা কোয়ার্টার ইঞ্চি পুরু হওয়া ভালো।
ম্যাটের উপাদান: ম্যাটের টেক্সচার ও স্পঞ্জের ওপর নির্ভর করে ম্যাটের উপাদান। যোগাসনের সময় শরীর থেকে যে ঘাম আর তাপ বের হয়, ম্যাট সেটা শোষণ করে নেয় বলেই ম্যাটের উপাদান গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া উপাদান ভালো না হলে ম্যাট চটচটে হয়ে যায়। বাজারে বেশ কিছু ধরনের ম্যাট আছে, যেমন বেসিক যোগ ম্যাট, ন্যাচারাল রাবার ম্যাট, প্লাস্টিক ইলাস্ট্রমের ম্যাট, পাটের যোগ ম্যাট, ভ্রমণের উপযোগী যোগ ম্যাট। এগুলোর দাম ৬০০ থেকে ৬ হাজার টাকা। শুরুতে কোন ধরনের ম্যাট দরকার, সেটা যোগ প্রশিক্ষকই বলে দেবেন। সে জন্য তাঁর পরামর্শ নিয়ে কেনা উচিত। ম্যাট ঢাকার বিভিন্ন স্পোর্টস শপ ছাড়া অনলাইনে অর্ডার করেও কেনা যাবে।
এ ছাড়া আরও কিছু অনুষঙ্গ ব্যবহার করা হয়। এগুলো আসলে আসনকে সহজ করে দিতে পারে। এসব অনুষঙ্গ ইয়োগা স্টুডিওতে থাকে। তবে নিজের জন্য জেনে রাখাও ভালো।
যোগাসনকে আরও আরামদায়ক করতে ইয়োগা ব্লক বা ব্রিক ব্যবহার করা হয়। এগুলো আগে কাঠ দিয়েই তৈরি করা হতো। তবে এখন আরও আরামদায়ক আর সহজে ব্যবহার করার জন্য ফোম বা রাবার দিয়েই তৈরি হয়। দেখতে ইটের মতো হয়, এ জন্য এগুলোকে ইয়োগা ব্রিকও বলা হয়। ব্লকগুলো দুই রকমের হয়—কিছু ব্রিক আছে বেশি হালকা, আর কিছু আছে তুলনায় শক্ত ও ভারী। এসব ব্লক ঢাকার কিছু দোকানে পাওয়া যায়। তবে অনলাইনে অর্ডার করেও কেনা যায়। এক জোড়া ব্লকের দাম ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকা।
একে বেল্টও বলা হয়। এগুলো বিশেষ করে এমন আসনের জন্য দরকার হয়, যেখানে আমাদের পা বা হাত ধরে রাখতে হবে, কিন্তু আমরা চেষ্টা করে ধরে রাখতে পারছি না বা পৌঁছাতে পারছি না। এ ক্ষেত্রে স্ট্র্যাপ মূলত হাত প্রসারক হিসেবে কাজ করে। আমাদের বাড়িতেও অনেক সময় এমন কিছু থাকে, যা স্ট্র্যাপ হিসেবে ব্যবহার করা যায়, সেটা বেল্ট বা তোয়ালে। এ ছাড়া ইয়োগা স্টুডিওগুলোতেও ক্লাস করতে গেলে এগুলো দেওয়া হয়। নিজেও কিনে রাখা যেতে পারে। এগুলোর দাম ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা।
ব্লানকেট: যোগ স্টুডিওতে সাধারণত শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলাকালে সুবিধার জন্য ব্লানকেট দেওয়া হয়। ভাঁজ করা কম্বল নতুনদের আসন করার সুবিধার্থে দেওয়া হয়। এ ছাড়া পায়ে বা কোমরে ব্যথা থাকলে ব্লানকেট বাড়তি সুবিধা দেয়। ব্লানকেট বা তোয়ালে যেকোনো জায়গায় কিনতে পাওয়া যায়। দাম ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা।
ইয়োগা ম্যাট ব্যাগ: স্টুডিওতে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটা ব্যাগ থাকলে সুবিধা হয়। এই ব্যাগ ম্যাট বহন করার জন্যই বানানো হয়। ব্যাগ অনলাইনে পাওয়া যায়। চাইলে দরজি দিয়ে বানিয়েও নেওয়া যায়। খরচও বেশি নয়।
এই বল ৩৫ থেকে ৮৫ সেন্টিমিটার ব্যাসের নরম ইলাস্টিক রাবারে তৈরি। ফাঁপা এই বাতাস ভরে ফোলানো হয়। এটি ব্যবহার করা হয় শারীরিক নমনীয়তা বৃদ্ধি ও পেটের চর্বি কমাতে। বলগুলো ফিটনেস স্টোরে পাওয়া যায়। এ ছাড়া অনলাইনে অর্ডার করেও কেনা যায়। দাম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।
শিক্ষানবিশদের জন্য এই কুশন কার্যকর। এ ছাড়া স্ট্রেসে থাকলে বা শরীরের কোথাও ব্যথা থাকলে আসন করার সময় প্রশিক্ষকেরা ব্যবহারের পরামর্শ দেন। কুশন ফুটপাত থেকে শুরু করে বড় বড় বিপণিবিতানে খুব সহজেই পাওয়া যায়। দাম ১০০ থেকে ৬০০ টাকা।
যোগাসন শুরু করতে ওপরের অনুষঙ্গগুলো সাহায্য করে। তবে একটা বা সব ছাড়া যে আসন শুরু করা যাবে না, তা কিন্তু নয়। বরং আসন শুরু করার পর প্রয়োজন অনুযায়ী জিনিসগুলো কেনা যেতে পারে।
তাই শুরুটাই আসল। কারণ যোগাসন সবাইকে সুস্থ রাখে শারীরিক মানসিকভাবে।
ছবি: লেখক