একসময় দেশের আনাচকানাচে, বনবাদাড়ে প্রচুর চালতা গাছের দেখা মিলত। এখন বাজারে চালতার ভরা মৌসুম। বাজারে বা ফেরিওয়ালার ঝুড়িতে খুব সহজেই মিলছে পুষ্ট তাজা চালতা। আচার ছাড়াও দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চালতা দিয়ে রান্না করা হয় নানা পদ। ছোট-বড় মাছ বা মাছের মাথা দিয়ে, পাতলা টক রেঁধে বা ডালে দিয়ে, এমনকি মরিচ বাটা ও লবণ দিয়ে মেখেও খাওয়া হয় এই মুখরোচক ফলটি। আর চালতার আচার তো ঘরে ঘরে তুমুল জনপ্রিয়। এই ফলের স্বাস্থ্যগুণ কিন্তু অবাক করা। আরও মজার বিষয় হচ্ছে, বনবাদাড় চষে বেড়ানো বন্য হাতিদের প্রিয় ফল বলে একে বলা হয় এলিফ্যান্ট আপেল।
চালতায় আছে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন ই, পটাশিয়াম, উপকারী ফ্যাট, প্রোটিনের উপাদান অ্যামাইনো অ্যাসিড ইত্যাদি। আবার এদিকে সম্পৃক্ত চর্বিজনিত কোলেস্টেরল নেই এতে একেবারেই। আজকাল ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা। চালতায় মিলবে এই গোত্রের পুষ্টি উপাদান ট্যানিন, স্যাপোনিন, ফ্ল্যাভেনয়েড, ট্রাইটারপেনয়েড আর ফেনোলিক জাতীয় যৌগ। এই উপাদানগুলো ক্যানসার, ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ ও প্রদাহ প্রতিরোধ করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
চালতা প্রাকৃতিকভাবে কোলেস্টেরলমুক্ত। আবার এদিকে পটাশিয়ামের খনি বলা চলে একে। তাই হৃদ্যন্ত্রের কার্যকারিতা ভালো রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ভূমিকা রাখতে পারে চালতা।
ভিটামিন সি, ভিটামিন ই আর ফ্ল্যাভোনয়েড—তিনে মিলে ত্বকের বার্ধক্য রোধ করতে চালতার জুড়ি মেলা ভার। কোলাজেন গঠনে এর ভূমিকার প্রমাণ মিলেছে। চালতা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ধরে রাখতেও উপকারী।
বি কমপ্লেক্স গোত্রের ভিটামিন মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের জড়তা দূর করে গতিময়তা দেয়, এ কথা গবেষণার ফলাফল বলছে বহু বছর ধরে। আর চালতায় এই ভিটামিনগুলো মিলবে প্রচুর পরিমাণে। শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখতে আর কর্মশক্তি জোগাতেও চালতার পুষ্টি উপাদানগুলো কাজে লাগে।
গবেষণায় দেখা গেছে কিডনি ভালো রাখতে চালতায় থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্টগুলো বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। কিডনিতে অবমুক্ত শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে এগুলো।
স্টেরল, স্যাপোনিন আর ট্যানিন—চালতার এসব ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট আমাদের নিউট্রো-ট্রান্সমিটার বশে রাখে, যা মস্তিষ্কে ইতিবাচক সিগন্যাল দিতে সক্ষম আর সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রেও স্বস্তি আনে। এতে স্মৃতিশক্তি, মুড আর মনমেজাজে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
সূত্র: হেলথলাইন, ফার্মা ইনোভেশন জার্নাল, হেলদি লিফ