ভাইরাল চিৎকার থেরাপি: বালিশে মুখ গুঁজে কেন চিৎকার করে জেনজিরা
শেয়ার করুন
ফলো করুন

জেন জিদেরা মধ্যে এই ‘পিলো স্ক্রিমিং’ এখন অনেকটা মিনি রিচুয়াল হয়ে উঠেছে বলা যায়। এবং তাদের মাঝে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিষয়টি। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন এটি ভাইরাল। কিছু মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এই থেরাপিটির পক্ষে কথা বলছেন। তাদের মতে পদ্ধতিটি সাময়িকভাবে কার্যকর।

কেন বালিশে মুখ গুঁজে চিৎকার করছে সবাই

পিলো-চিৎকার আসলে একধরনের আবেগের মুক্তি। যখন চারপাশ চুপ থাকতে বলে, যখন অনুভূতিগুলো আটকে যেতে চায় কণ্ঠনালির কাছে। তখন পিলো স্ক্রিমিং বা বালিশ চিৎকার সেই চেপে রাখা আবেগের দরজা খুলে দেয়। কাজের চাপ, সম্পর্কের টানাপোড়েন বা নিছকই জীবনের  অজস্র হতাশা। সবকিছুর বিরুদ্ধে এক মুহূর্তের যুদ্ধ এই থেরাপি।

এটা কি আসলেই কাজ করে?

মনোবিজ্ঞানী ডা. প্রীতি সিংহ বলছেন, এটা স্বল্পমেয়াদে কার্যকর। তাঁর ভাষায়, ‘চিৎকার, আবেগের তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে। যখন আমরা প্রবল স্ট্রেস, রাগ বা হতাশায় থাকি, তখন চিৎকারের মাধ্যমে জমে থাকা নেতিবাচক শক্তি শরীর থেকে বের হয়ে যায়। যা সমায়িকভাবে স্বস্তিদায়ক হতে পারে।’ চিৎকার করার সময় শরীরের স্ট্রেস রেসপন্স অ্যাকটিভ হয়, এরপর নিজে থেকেই তা রিসেট হতে শুরু করে। ফলে চিৎকারের পর শরীর-মন দুটোই কিছুটা হালকা অনুভব করে।

বিজ্ঞাপন

তাহলে এটা কি শুধুই প্রাথমিক চিকিৎসা

ঠিক তাই। পিলোতে চিৎকার করা মানে স্থায়ী সমাধান নয়। এটি মূলত একটি ‘ফার্স্ট এইড’ কৌশল। ডা. প্রীতি সিংহ বলেন, এটি কর্টিসল ( স্ট্রেস হরমোন) হ্রাস করতে পারে এবং কিছুক্ষণের জন্য মানসিক ও শারীরিক চাপ কমাতে পারে। তবে দীর্ঘস্থায়ী আবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও টেকসই অভ্যাস দরকার। যেমন মাইন্ডফুলনেস, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস বা গ্রাউন্ডিং টেকনিক।

যদি প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়?

প্রতিদিন স্ক্রিম বা চিৎকার থেরাপি খারাপ কিছু নয়। তবে মনে রাখতে হবে এটি একটি প্রাথমিক কৌশল। অর্থাৎ আপনার পুরো ইমোশনাল কেয়ার প্ল্যানের একটা অংশ এই থেরাপি। পুরোটা নয়। এ বিষয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ডা. আরুশি দেওয়ানের পরামর্শ হচ্ছে:

• মুভ ইওর বডি: হাঁটুন, দৌড়ান বা নাচুন। শারীরিক অনুশীলন টেনশন কমাতে সাহায্য করে।

• লেখায় প্রকাশ করুন: জার্নালিং আবেগ পরিষ্কার করতে সহায়ক।

• সৃষ্টিশীল হন: ছবি আঁকুন, গান গান, কবিতা পড়ুন। এগুলো আপনার অনুভূতি প্রকাশের আরেকটি পথ হতে পারে।

• কথা বলুন: এমন কারও সঙ্গে কথা বলুন। যিনি শুনবেন এবং সাহায্য করবেন।

শপিং কার্টে স্ক্রিম পিলো

ভাইরাল স্ক্রিম বা চিৎকার থেরাপির অন্যতম অনুষঙ্গ পিলো বা বালিশ। অনলাইন মার্কেটপ্লেস এই ট্রেন্ড ধরতে দেরি করেনি। এখন বাজারে বিশেষভাবে তৈরি "স্ক্রিম পিলো" পাওয়া যাচ্ছে। অনলাইনে  The Shoutlet, Yell Pillow, Jolly & Goode, Scream Catcher Pillow ইত্যাদি লিখে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন স্ক্রিম পিলো। এই পিলোগুলো এমন ভাবে তৈরি। অর্থাৎ এগুলোর ভেতরে এমন সাউন্ড-ড্যাম্পেনিং ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে আপনার চিৎকার শুনে প্রতিবেশী বা রুমমেটরা বিরক্ত না হন।

মনোবিজ্ঞানীদের ভাষায় স্ক্রিম থেরাপি কোনো মানসিক দুর্বলতার লক্ষণ নয়, বরং নিজেকে প্রকাশ করার এক শক্তিশালী মাধ্যম। তবে মনে রাখতে হবে, এটি যেন সাময়িক মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে থেকে যায়, জীবনের স্থায়ী সমাধান না হয়। আসল পরিবর্তন আসে তখনই, যখন আমরা আমাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, নিউ ইয়র্ক পোস্ট ও ইন্ডিয়া টুডে

ছবি: পেকজেলসডটকম ও ইনস্টাগ্রাম

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩: ০১
বিজ্ঞাপন