অতিরিক্ত আবেগ নিয়ন্ত্রণের ৪ কৌশল
শেয়ার করুন
ফলো করুন

আনন্দ, দুঃখ, রাগ, হতাশা, ভয়—এই অনুভূতিগুলোই আমাদের একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। আবেগ ছাড়া মানুষ হয় না। কিন্তু সবার আবেগের পরিমাণ এক রকম নয়। প্রায়ই আবেগী মানুষের অনুভূতিকে তাচ্ছিল্য বা বিদ্রূপ করতে ছাড়ি না আমরা। অথচ আমাদের সম্পর্কগুলো তৈরিতে এ আবেগ বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া আমাদের প্রতিদিনের জীবনকে সহজ করতে, বিপদের আশঙ্কা টের পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে, প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে চলতে আমাদের আবেগ-অনুভূতির শরণাপন্ন হতে হয়। বুদ্ধি আর বাস্তববাদিতা সবকিছুর সমাধান করতে পারে না।

বিজ্ঞাপন

তবে বাস্তবতা হচ্ছে, আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলে হিতে বিপরীত হতে পারে। মানুষ উন্নত প্রাণী হওয়ায় আমাদের মস্তিষ্কের কর্টেক্স অন্য প্রাণীদের তুলনায় পরিপক্ব হয়। ফলে আমরা শুধু আনন্দ, ভয়, রাগ ইত্যাদি অনুভূতির ওপর নির্ভর না করে পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রতিক্রিয়া জানাই। আমাদের এ গুণকে বলা হয় ‘ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স’। কিন্তু ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স থাকা সত্ত্বেও নিজের প্রাথমিক আবেগের আতিশয্য অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘটনাও কিন্তু ঘটে। বিশেষ করে আমরা যাঁদের মোটাদাগে আবেগী মানুষের তকমা দিই, তাঁদের ক্ষেত্রে।

লক্ষ করলে দেখা যাবে, আমাদের আশপাশে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁরা পরিস্থিতি বিবেচনা না করেই শুধু আবেগের বশবর্তী হয়ে অনেক কাজ করেন, যা পরবর্তী সময়ে তাঁদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। রাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাতই কম নয়৷ তবে নিজের আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন করা সম্ভব হলে আপনি অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো থেকে বেঁচে যেতে পারেন। আর সবচেয়ে বড় কথা, আপনি নিজে কষ্ট পাওয়া থেকে নিস্তার পেতে পারেন। মনস্তত্ত্ববিদেরা বলেন, এ জন্য কয়েকটি বিষয় বেশ সচেতনভাবে অভ্যাস করতে হবে—

বিজ্ঞাপন

১. মানসিক দূরত্ব তৈরি করার অভ্যাস করুন

যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা প্রাথমিকভাবে যা করার কথা ভাবি, তা হচ্ছে নিজের তাৎক্ষণিকভাবে জেগে ওঠা ইচ্ছাকে অনুসরণ করা। কিন্তু এভাবে কারও জন্য অতিরিক্ত ভালোবাসা বা মায়া আর অপর দিকে হতাশা কিংবা রাগের মাথায় হুট করে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোই পরবর্তীকালে আমাদের ভোগান্তিতে ফেলে। তাই যেকোনো জটিল বা কঠিন পরিস্থিতিতে হঠাৎ কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে দূরে থাকুন। সংশ্লিষ্ট মানুষটির সঙ্গে মানসিক দূরত্ব তৈরি করে নিজের মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে আবেগের প্রাথমিক ধাক্কাটি কেটে যাবে এবং আপনি ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পাবেন।

২. নিজের চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণে আনুন

আমাদের দিনের বেশ অনেকটা সময় আমরা মনে মনে নিজের সঙ্গে কথা বলে কাটাই। আবার কোনো একটি পরিস্থিতিতে আমরা কীভাবে পাল্টা জবাব দিতে পারতাম, কীভাবে কথা বললে ভালো হতো ইত্যাদি চিন্তাভাবনা প্রায়ই আমাদের মনে চলতে থাকে। শুনতে হাস্যকর মনে হলেও এটিই সত্যি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, আমাদের নিভৃতে নিজের অজান্তে চলতে থাকা এই ভাবনাগুলোই আমাদের ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলে। আত্মবিশ্বাসী মানুষদের জীবনে সফল হওয়ার পেছনে এটি একটি বড় কারণ। একইভাবে কোনো রাগ, অভিমান কিংবা উতোর-চাপানের মুহূর্তে আমরা আমাদের সেই জমানো কষ্টগুলোকেই ব্যক্ত করি। তাই আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য সচেতনভাবে আমাদের চিন্তাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে হবে। প্রাথমিকভাবে কঠিন মনে হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপারটি রপ্ত করে ফেলতে পারবেন।

৩. বিশ্বস্ত কারও সঙ্গে কথা বলুন

আমাদের রাগ, দুঃখ, হাসি, আনন্দ, হতাশা ইত্যাদি সব অনুভূতির প্রভাব আমাদের কাছের মানুষদের ওপর পড়ে। আমরা কোন পরিস্থিতিতে কেমন ব্যবহার করি, কোন বিষয়গুলো আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ভেঙে দেয় কিংবা কোন কাজে আমরা সবচেয়ে খুশি হই—এসবই নির্ভর করে আমাদের আবেগের ওঠানামার ওপরে। তাই নিজেকে বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো কাছের কারও সঙ্গে এ নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা। এতে নিজের দুর্বলতাগুলো সম্বন্ধে আপনার একটি ধারণা তৈরি হবে। এ ছাড়া আমাদের চিন্তাভাবনাগুলোকে নির্বিচারে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করলে তা একসময় বিস্ফোরিত হয়। এ জন্য মাঝেমধ্যে অনুভূতিগুলো কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারলে মানসিক অশান্তি কমে আসে। আর তা পরবর্তীকালে আপনাকে একটি মানসিকভাবে সুস্থ জীবনযাপনে সাহায্য করতে পারে। যদি পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ না থাকে, তবে বিনা দ্বিধায় পেশাদার কারও সাহায্য নিতে পারেন। আর আসলে সেটাই উচিত। কারণ, আপনার আপন মানুষটির মানসিকতা বদলে যেতে পারে যেকোনো সময়ে।

৪. সহজে উপসংহারে পৌঁছে যাবেন না

আমাদের মস্তিষ্ক যেকোনো বিষয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উপসংহার টেনে দিতে পছন্দ করে। ফলে অন্যের ব্যাপারে শোনা যেকোনো কথা আমরা খুব তাড়াতাড়ি, কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিশ্বাস করে ফেলি। আবার কারও নিজের মুখে বলে ফেলা কোনো কথাকেও শেষ কথা ধরে আমরা সবকিছু শেষ করে দিই। পরবর্তীকালে এ ধারণাগুলোই আমাদের আচরণকে পরিচালিত করে। তাই নিজের ভেতরে কৌতূহল জাগানোর চেষ্টা করুন। কারও ব্যাপারে কোনো কিছু শুনেই বিশ্বাস করে ফেলবেন না। তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে পরিস্থিতি কিংবা মানুষটিকে বোঝার চেষ্টা করুন, তাঁর নিজের কী কথা আছে, তা শুনুন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন। এতে ভুল–বোঝাবুঝি থেকে মুক্ত থাকবেন।

হিরো ইমেজ: মডেল: নাঈমা তাসনিম; ছবি: সজল মল্লিক

ছবি: পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন