মানুষ বাঁচতে চায়। সবাই চায় দীর্ঘজীবী হতে। আর চিকিৎসাবিজ্ঞানের উৎকর্ষ যত বাড়ছে, বিশ্বজুড়ে গড় আয়ুও বাড়ছে মানুষের। কিন্তু বছরের পর বছর বেঁচে থাকাই শেষ কথা নয়। আয়ু বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চাই সুস্থ আর সচল জীবন। সম্প্রতি বিশ্বের কিছু কিছু অঞ্চলকে ব্লু জোন বলে অভিহিত করা হয়েছে। এখানকার মানুষেরা দীর্ঘজীবী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ ও সচল জীবনযাপন করেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। এ অঞ্চলগুলোর শতবর্ষী মানুষগুলোকে নিয়ে সবার আগ্রহের শেষ নেই। চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে তাঁদের জীবনযাপনের পদ্ধতি, খাদ্যাভ্যাস আর সবকিছু নিয়ে।
তবে নতুন এক গবেষণা বলছে, এসব মানুষের বাড়িতে তাঁরা আপাতদৃষ্টিতে খুব সাধারণ কিছু দৈনন্দিন নিয়ম মেনে চলেন এবং পরিবারের সবাইকেও এগুলো মানতে বাধ্য করেন। চরমপন্থী ফ্যাড ডায়েট বা জীবনকে কঠিন করে দেওয়া কঠোর ফিটনেস রুটিনের ধারেকাছেও যান না তাঁরা৷ নিয়মিত এসকল সু–অভ্যাসের বদৌলতে যে তাঁদের জীবনঘড়িতে আরও কিছু বছর যোগ হচ্ছে, তা এ নিয়মগুলো আর জীবনে সেগুলোর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পর্যালোচনা করলেই বোঝা যাবে।
১. খাওয়ার টেবিলেই খাবার খেতে হবে
টিভিতে বা কম্পিউটারে খেলা বা মুভি দেখতে গেলে মাঝেমধ্যে পপকর্ন বা ভাজাভুজি খাওয়া যেতেই পারে। কিন্তু প্রতি বেলার খাবার নিয়ে স্ক্রিনের সামনে বসে খাওয়া খুবই অস্বাস্থ্যকর। এতে আমাদের শরীর টেরই পায় না, কখন চাহিদা মিটে গেছে বা খাওয়া বন্ধ করতে হবে৷ আর খাবারের স্বাদও কিছুই উপভোগ করা হয় না। আবার টিভির সামনে বসলেই যদি চিপস, চানাচুর, আইসক্রিম ইত্যাদি খাবার খাওয়া হয়, তা–ও এক বদভ্যাস। তাই বাড়িতে এমন নিয়ম থাকা উচিত যে শুধু খাওয়ার টেবিলেই বসে খেতে হবে। আর সে সময় মুঠোফোন দূরে রাখতে হবে।
২. জুতা খুলে বাড়ির ভেতরে ঢোকা
জাপানিরাসহ পূর্ব-এশিয়ার অনেক অঞ্চলে জুতা বাইরে র্যাকে রেখে ঘরে ঢুকতে হয়। গবেষণা বলে, বাইরে থেকে এলে জুতায় মানববর্জ্য ধরনের ময়লা আর অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া থাকে। এ জুতা ঘরে আনলে তা অনেকটা খাল কেটে কুমির আনার মতোই। জুতা বাইরে রেখে এলে এসব রোগজীবাণু থেকে আমরা বেঁচে যাব।
৩. সবাই মিলে খাবার খাওয়া
একা একা খেলে বিষণ্নতা ভর করে প্রায়ই৷ যখন কেউ পরিবারের সদস্য, বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে খাবার খান, তখন খাওয়ার রুচি বাড়া, প্রতি বেলার খাবারের প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়ার মতো ব্যাপার ঘটে। আর এভাবে খেলে আস্তে আস্তে সময় নিয়ে খাওয়া হয়। এতে পাচক রসের নিঃসরণ বাড়ে। আবার খাবার খেতে থাকলে একটা সময় পর মস্তিষ্ক পেট ভরে গেছে, এমন সংকেত পায়। এতে অতিরিক্ত ভোজনের সম্ভাবনা কমে আসে। আর খাওয়ার সময়টুকু আনন্দময় হলে তা শরীর ও মন উভয়ের জন্যই ভালো।
৪. পারলে বাড়িতে সবজি বা হার্বসের বাগান করা
বাইরে বা ছাদে জায়গা থাকলে তো খুবই ভালো। নয়তো ব্যালকনি বা বারান্দায় কিছু না কিছু গাছ রাখা যায়। রান্নাঘরের জানালার কার্নিশ বা জানালার পাশেও করা যায় বাগান, যদি রোদ আসে৷ ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, থানকুনি, অরিগ্যানো, বেসিল ইত্যাদি হার্বস খুবই উপকারী। আবার নিজের হাতে লাগানো শাক, করলা, মরিচ, যা–ই হোক, তাতে অন্যরকম তৃপ্তি মিলবে৷ ব্লু জোনের অধিবাসীদের বেশির ভাগ বাগান করেন। যাকে আমরা আজকাল প্ল্যান্ট প্যারেন্টিংও বলি। এতে যে মানসিক প্রশান্তি মেলে, তা স্ট্রেস কমিয়ে আয়ু বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আর তাজা, বিষমুক্ত ফল ও সবজির উপকারী গুণের কথা তো বলাই বাহুল্য।
৫. ঘরে আসবাবের আধিক্য না রাখা
মিনিমালিজমের ধারণার সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকার গভীর যোগসূত্র রয়েছে। এদিকে মেঝেতে বসার অভ্যাস শরীরকে ফিট রাখে। নিচে বিছানা রাখাও উপকারী। দিনে ২০-৩০ বার মেঝে থেকে ওঠানামা করলে তা স্কোয়াটের কাছাকাছি ব্যায়ামের মতো হতে পারে। এ অভ্যাস থাকলে বয়স হলে শরীরে ভারসাম্য ভালো থাকে। আর দেহের নিচের দিকের হাড় ও পেশিও শক্তিশালী হয়। একেবারে মেঝেতে সব না রাখতে চাইলে নিচু আসবাব ব্যবহার করা যায়। আর অতিরিক্ত জিনিসে ঘর ঠাসা যাবেই না৷
৬. শোবার ঘর যেন শুধু ঘুমানোর জন্যই হয়
শোবার ঘরে প্রশান্তিময় আবহ তৈরি করা উচিত। এখানে এলেই যেন মনে হয়, এখন ঘুমানো বা বিশ্রাম নেওয়ার পালা। বিছানায় মুঠোফোন বা ল্যাপটপ নিয়ে যাওয়া এক অত্যন্ত ক্ষতিকর বদভ্যাস। এখানে উজ্জ্বল আলো, জোরে গান বা এলোপাতাড়ি খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা একেবারেই ভালো নয়। এতে ঘুমের জন্য শরীর প্রস্তুত হতে অনেক সময় নেয়। আর এত অস্থিরতায় ঘুম ভালোও হয় না। তাই শোবার ঘরে আরামদায়ক পরিপাটি বিছানা, হালকা আলো আর ন্যূনতম আসবাব রেখে একে প্রশান্তিতে ভরে তুলতে হবে৷ ফুল, গাছ বা সুগন্ধি মোমবাতি রাখার ব্যবস্থা থাকতে পারে৷