বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির আঁচ লেগেছে আমাদের দেশেও। গরমের তীব্রতাও তাই বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক। ভ্যাপসা গরম আর মাঝেমধ্যে হঠাৎ বৃষ্টির একটা সময় পার করছি আমরা। এ রকমই একটা পরিবেশের জন্যই কিন্তু ফাঙ্গাস বা ছত্রাক অপেক্ষায় থাকে। বছরের অন্যান্য সময়ের চাইতে এ আবহাওয়াতেই ত্বকে ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বেশি হয়। প্রচণ্ড গরমে ঘেমে একাকার হয়ে যাওয়া শরীর কিংবা সারা দিন অফিসের আঁটসাঁট পোশাকের মধ্যে থেকেই ত্বকে বাসা বাঁধতে পারে ফাঙ্গাস বা ছত্রাক।
কয়েক বছর ধরে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও নীরবে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে ত্বকের ফাঙ্গাল ইনফেকশন। দাদ নামে যেটিকে আমরা ভালোভাবে চিনি। আরও দুশ্চিন্তার বিষয় হলো ফাঙ্গাল ইনফেকশনে প্রচলিত ওষুধগুলোর বিরুদ্ধে ফাঙ্গাসের দ্রুত প্রতিরোধ বা রেজিস্ট্যান্স গড়ে তোলা আর জনমানুষের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতার অভাব এ রোগের চিকিৎসাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
তবে আশার কথা হলো ত্বকে ফাঙ্গাসের সংক্রমণ নিয়ে পূর্বসতর্কতা এবং আক্রান্ত হলে শুধু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ এ রোগের চিকিৎসাকে করে তুলতে পারে সহজে নিরাময়যোগ্য।
• শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকার কিছু কারণ যেমন কেমোথেরাপি, স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করা বা এইডসে আক্রান্ত হলে।
• নিয়মিতভাবে দীর্ঘক্ষণ শরীরের কোনো অঙ্গ ঘামে বা পানিতে ভেজা থাকলে।
• ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি অসুখ থাকলে।
ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা দাদ শরীরের যেকোনো জায়গায় হতে পারে। বিশেষ করে বিভিন্ন অঙ্গের ভাঁজ ও শরীরের যেসব জায়গা দিনের বেশির ভাগ সময় ঢাকা থাকে, এমন জায়গায় বেশি দেখা যায়। শরীরের কুঁচকি, বগল, হাত ও পায়ের দুই আঙুলের ফাঁকে ও নখে দাদের সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া মুখের ভেতরের তালুতে বা জিহ্বায় এবং যৌনাঙ্গের আশপাশেও ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে।
শুরুতে শরীরে হঠাৎ ছোট ছোট দানার আকৃতি দেখা যায়। যেটি পরবর্তীকালে লাল হয়ে গোলাকার অনেকটা পয়সার মতো আকার ধারণ করে। এই ছোট ছোট দানাগুলো ছড়িয়ে গিয়ে পরবর্তীকালে আরও বড় দানা তৈরি করে। এটির চারপাশে একটা বর্ডার বা সীমানা তৈরি হয় এবং চুলকাতে থাকে।
• আর্দ্র আবহাওয়া মানে প্রচণ্ড গরমে সৃষ্ট ঘাম বা বর্ষাকালে ফাঙ্গাস মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তাই যতটা সম্ভব এ সময়ে শরীরের ভেজা স্থানগুলো শুষ্ক রাখতে হবে। ঘাম বা পানিতে ভেজা অংশ যত দ্রুত সম্ভব মুছে ফেলতে হবে।
• দাদ বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন একটি ছোঁয়াচে রোগ। ঘরের কোনো সদস্যের হলে তার চিরুনি, বিছানা-বালিশ, তোয়ালে—এ রকম নিত্যব্যবহার্য জিনিস থেকে অন্য সদস্যেরও হতে পারে। তাই দাদ থেকে মুক্ত থাকতে ঘরের প্রত্যেকের ব্যবহার্য সামগ্রী আলাদা থাকা উচিত।
• অন্যের ব্যবহৃত গামছা, চিরুনি, মোজা বা জুতা ব্যবহার করা যাবে না।
• ব্যবহৃত অন্তর্বাস, নিয়মিত পরিবর্তন ও পরিষ্কার করতে হবে।
• ঢিলেঢালা ও সুতি কাপড় পরতে হবে, যাতে ঘাম জমে শরীরের ভেতরে ফাঙ্গাস বা ছত্রাক আক্রমণ করতে না পারে।
• ব্যবহৃত কাপড় রোদে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে।
• আক্রান্ত স্থানে নখ বা ধারালো কিছু দিয়ে চুলকানো যাবে না।
• ত্বকের যেকোনো সংক্রমণে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ কখনো গ্রহণ করা যাবে না।
চিকিৎসক যে ওষুধ যত দিন গ্রহণ করতে উপদেশ দেবেন, তা পরিপূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে। নিজে থেকে ওষুধ গ্রহণ বা চিকিৎসার মাঝখানে হঠাৎ ওষুধ গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া এর চিকিৎসাকে আরও কঠিন ও দীর্ঘমেয়াদি করে তুলতে পারে।
শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো ত্বকের সুরক্ষার ব্যাপারেও আমাদের যত্নবান হতে হবে। এই স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ফাঙ্গাসের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: ফার্মাসিস্ট
ছবি: লেখক