রান্নাঘরের এই একটি সহজলভ্য উপকরণই জাপানিদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ফিট রাখে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

জাপানিরা সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘজীবন, ঝকঝকে চেহারার জন্য বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত। তাদের খাদ্যাভ্যাসে রয়েছে কিছু ব্যতিক্রমী নিয়ম, যার একটি হলো প্রতিদিন খাবারের আগে সামান্য পরিমাণ ভিনেগার পান করা। শুনতে অবাক লাগলেও, এই অভ্যাসের পেছনে রয়েছে একাধিক বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যগত কারণ।

জাপানের ঐতিহ্য অনুযায়ী, খাওয়ার আগে ভিনেগার পান করেন অনেকেই
জাপানের ঐতিহ্য অনুযায়ী, খাওয়ার আগে ভিনেগার পান করেন অনেকেই
জাপানিরা মাথা থেকে পা পর্যন্ত অত্যন্ত ফিট থাকেন সব বয়সেই
জাপানিরা মাথা থেকে পা পর্যন্ত অত্যন্ত ফিট থাকেন সব বয়সেই

জাপানিদের সুস্থ জীবনযাপনের একটি বিশেষ অভ্যাস বিশ্বজুড়ে বেশ কৌতূহল জাগিয়েছে—তা হলো খাবারের আগে ভিনেগার পান করা। হোক সেটা আপেল সিডার ভিনেগার বা রাইস ভিনেগার। জাপানিরা দিনের প্রতি বেলার খাবারের আগে কয়েক চামচ ভিনেগার পান করে। এর বেশ কিছু উপকারিতা আছে। যেমন হজম শক্তি বাড়ানো, ওজন নিয়ন্ত্রণ, রক্তে শর্করার ভারসাম্য রক্ষা এবং শরীর ডিটক্স করা। আর এই ছোট একটি অভ্যাসই হয়ে উঠেছে তাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ফিট থাকার এক গোপন রহস্য। এখন জেনে নেওয়া যাক কেন তাঁরা খাবারের আগে ভিনেগার পান করে।

বিজ্ঞাপন

জাপানিরা সাধারণত খাবারের আগে ১৫-৩০ মিলি (১-২ টেবিল চামচ) ভিনেগার পান করে, যা তারা আগে পানিতে মিশিয়ে নেয়। এর মাধ্যমে তাদের হজমশক্তি উন্নত হয়, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ওজন কমাতেও সহায়তা করে। ফলে মেটাবলিজমে বাড়তি গতি পাওয়া যায়, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তবে এটি অতিরিক্ত গ্রহণ করলে  হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই এই ভিনেগার পরিমিত পরিমাণে পান করা উচিত, যাতে করে কোন ক্ষতি ছাড়াই এর সর্বোচ্চ উপকারিতা পাওয়া যায়।

ভিনেগারের যত গুণাগুণ

ত্বকের যত্নে সহায়ক

ভিনেগার ত্বকের পিএইচ স্তর ঠিক রাখে, যা ব্রণ ও ব্রণের দাগ কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও জীবাণুনাশক উপাদান ত্বকে ফ্রেশ এবং উজ্জ্বলভাব আনতে সাহায্য করে।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

এতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যার দরুন এটি আমাদের শরীরকে যেকোনো ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে, সেই সাথে দীর্ঘমেয়াদী সুস্বাস্থ্যও নিশ্চিত করে।

ডিটক্সিফিকেশনে সহায়তা করে

লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে শরীর থেকে টক্সিন বের করতে এটি সাহায্য করে। এছাড়াও দেহের অভ্যন্তরীণ রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় ও বিপাকক্রিয়া সচল রাখে।

জাপানিদের ফিটনেসের পেছনে ভিনেগারের ভূমিকা আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা
জাপানিদের ফিটনেসের পেছনে ভিনেগারের ভূমিকা আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা

অন্ত্রের স্বাস্থ্য বা গাট হেলথ ভালো রাখে

গাট হেলথ হলো গ্যাস্ট্রো এনটেস্টাইনাল হেলথ বা সহজ ভাষায় বলতে বোঝায় অন্ত্রের স্বাস্থ্য। ভিনেগারে থাকা প্রোবায়োটিকস ও অ্যাসিটিক অ্যাসিড উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটিয়ে হজমক্ষমতা বাড়ায়, ফোলাভাব কমায় এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যা রোধে সহায়তা করে থাকে।

রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে

খাবারের সঙ্গে ভিনেগার গ্রহণ করলে কার্বোহাইড্রেট শোষণের গতি শরীরের ভিতরে আস্তে আস্তে হয়, ফলে রক্তে শর্করার হঠাৎ বেড়ে যাওয়া কমে যায়। এটি বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশি উপকারী।

বিজ্ঞাপন

ওজন কমাতে সাহায্য করে

ভিনেগার ক্ষুধা কমায় ও অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ রোধ করে। এটি শরীরের বিপাকক্রিয়া জোরদার করে এবং একই সাথে চর্বি বার্ন করতে সহায়তা করে।

হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে

ভিনেগার হজমের এনজাইমকে অ্যাক্টিভ করে, ফলে খাবার দ্রুত ভেঙে যায় ও শরীর সহজেই সেখান থেকে পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে।

আপনিও জাপানিদের মতো প্রতিবেলার খাবারের আগে ভিনেগার ড্রিংক পান করতে পারেন।
আপনিও জাপানিদের মতো প্রতিবেলার খাবারের আগে ভিনেগার ড্রিংক পান করতে পারেন।

স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য এই ছোট ছোট অভ্যাসই সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে অনেক বড় পার্থক্য গড়ে তুলতে পারে। জাপানিদের মতো খাবারের আগে এক চামচ ভিনেগার পান শুধু আমাদের হজমশক্তি বাড়াবে না, এটি শরীরকে ভেতর থেকে শক্তিশালী ও সতেজ করে তুলবে । ওজন নিয়ন্ত্রণ, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ, ত্বকের উজ্জ্বলতা থেকে শুরু করে নানান ধরণের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এর অবদান অস্বীকার করার নয়। তাই প্রতিদিনের রুটিনে এই সহজ অভ্যাসটি যুক্ত করে দেখতে পারেন আপনিও। কে জানে, এই এক চামচ ভিনেগারই হয়ে উঠতে পারে আপনার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ফিট থাকার গোপন চাবিকাঠি!

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

ছবি: ইন্সটাগ্রাম

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৫: ০০
বিজ্ঞাপন