প্রচণ্ড গরমে হাঁটাহাঁটি দুষ্কর হয়ে পড়ে। এদিকে স্বাস্থ্য ভালো ও ফিট রাখতে আর হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করতে হাঁটার বিকল্প নেই। তাই গরম হলেও সুস্থ থাকতে আর নিজেকে সচল রাখতে নিয়মিত শরীরচর্চা বা হাঁটাহাঁটির কোনো বিকল্প নেই। এই ভ্যাপসা গরমে কিছু সঠিক প্রস্তুতি এবং কিছু সতর্কতা মেনে আপনি অনায়াসে আপনার দৈনন্দিন ফিটনেস রুটিন, যেমন প্রতিদিনের নির্ধারিত হাঁটার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন।
আমরা জানি যে নিয়মিত বাইরে হাঁটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এতে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, হদ্যন্ত্র ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়। কিন্তু অতিরিক্ত তাপ প্রবাহে হাঁটার সময় আপনার দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে যায়, অনবরত ঘামে পানিশূন্যতার সৃষ্টি হয়। এ কারণে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে যায় এবং ক্লান্তি চলে আসে। তখন আর বেশিক্ষণ হাঁটা সম্ভব হয় না। উপরন্তু হিট স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কানে হেডফোন গুঁজে পছন্দের গান শুনতে শুনতে নিজের স্বস্তিদায়ক ওয়াকিং শুরু করে নিয়মিত ভিটামিন ডি গ্রহণের জন্য সূর্যালোকে হাঁটার কিছু নিয়ম রইল আজ হাল ফ্যাশনের পাঠকদের জন্য।
১. চেষ্টা করুন ভোরে হাঁটার
সকালে হাঁটা এমনিতেই মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে গেলে সারা দিনের কাজে একটা অন্য রকম উদ্যম কাজ করে। সেই সঙ্গে কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পায়। ভোরে রোদের তেজ কম থাকে। তাই হাঁটা যায় স্বাচ্ছন্দ্যে। তবে কোনো কারণে যদি অত সকালে হাঁটতে না পারেন, তবে সন্ধ্যায় বা রাতে সময় বের করুন। সে সময় রোদ থাকে না। পার্কে গেলে দেখা যায়, সকাল ছাড়াও অনেকেই সন্ধ্যায় বা রাতে হাঁটতে যান।
২. উপযুক্ত স্থান নির্বাচন
কোন পথে হাঁটবেন, সেটা নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খোলা রাস্তা বা গাছপালা কম—এমন জায়গায় হাঁটলে রোদের তাপ সহজেই আপনাকে কাবু করে দেবে। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হচ্ছে পার্কে হাঁটা। সেখানে প্রচুর গাছ থাকায় ছায়া পাওয়া যাবে। অথবা উঁচু দালানের পাশের রাস্তায় হাঁটতে পারেন, যেখানে ছায়া থাকে। এতে রোদের সরাসরি আঁচ গায়ে লাগবে না।
৩. মাথা শীতল রাখা
গবেষণায় দেখা গেছে, মাথা শীতল রাখা গেলে তা আপনার শারীরিক কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয় এবং হাইইন্টেন্সিটি বা তীব্র মাত্রার শরীরচর্চা–পরবর্তী ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। তাই হাঁটতে বের হলে সঙ্গে বরফশীতল পানি রাখুন। প্রয়োজনে মাথায় ঢালুন বা মুখে পানির ঝাপটা দিন। এতে করে ক্লান্তি কেটে যাবে ও আপনি নতুন করে উজ্জীবিত হবেন।
৪. প্রস্তুতি নিয়ে বের হওয়া
বাইরে বের হওয়ার সময় চেষ্টা করুন সান ব্লক ব্যবহার করতে। রোদচশমা আর প্রয়োজনে টুপি ব্যবহার করুন কড়া রোদের আঁচ থেকে রক্ষা পেতে। চেষ্টা করুন হাঁটার সময় সুতির হালকা কাপড় বা ঘাম শুষে নেয় এমন পোশাক পরিধান করতে। পরার জন্য হালকা রং নির্বাচন করুন। আরামদায়ক পোশাক পরুন এবং আঁটসাঁট পোশাক পরিহার করুন হাঁটার সময়।
৫. পানি পান করা
‘সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল’-এর মতে, আপনি ঘামলে এমনিতেই পানি পান করতে হবে পানিশূন্যতা দূর করতে। তাই হাঁটতে গেলে নিজের সঙ্গে পানির বোতল রাখতে হবে আর যদি দীর্ঘ সময় রোদে থাকতে হয় বা আপনি যদি জানেন আপনার অতিরিক্ত ঘাম হয়, সে ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক রাখুন সঙ্গে। ডাবের পানিও পান করতে পারেন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট অন্তর দুই ঢোঁক বা আট আউন্স পানি পান করুন। একবারে অনেকখানি পানি কখনোই পান করবে না।
৬. আগে ও পরে শরীর ঠান্ডা করুন
অতিরিক্ত তাপপ্রবাহে হাঁটার আগে দেহের শীতলীকরণ খুবই কার্যকরী। হাঁটতে যাওয়ার আগে বা ভারী শরীরচর্চার আগে এয়ারকন্ডিশনের কাছে বা সিলিংফ্যানের নিচে বসে শরীর ঠান্ডা করে নিতে হবে। এতে আপনার অভ্যন্তরীণ ‘কোর টেম্পারেচার কমে’ যাবে। তাই পরবর্তী সময়ে হাঁটার সময় বাহ্যিকভাবে তাপমাত্রা বাড়লেও ‘কোর টেম্পারেচার’ তা ব্যালেন্স করে ফেলবে। এ ছাড়া ঠান্ডা শরবত পান আপনাকে সহায়তা করতে পারে। হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম শেষেও কুলডাউন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য ঠান্ডা পানিতে গোসল খুবই কার্যকর।
৭. একবারেই বেশি পরিশ্রম করে না হাঁটা
টরন্টোর ওয়াকিং কোচ এবং ওয়াও পাওয়ার ওয়াকিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা লি স্কট বলেন, আপনি যদি নতুন হাঁটা শুরু করেন, সে ক্ষেত্রে গরম আবহাওয়ায় সহনশীলতা অর্জন করতে নিজেকে কিছুটা সময় দিন। হুট করেই সেটা হবে না। ধীরে ধীরে সপ্তাহ দুয়েক যাওয়ার পর দেখবেন, আপনি এতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন। অল্প দূরত্ব দিয়ে শুরু করুন। ধীয়ে ধীরে গতি ও সময় বাড়ান। সর্বোপরি নিজের দেহঘড়ির সংকেত আপনাকেই বুঝতে হবে। সে–ই আপনাকে বলে দেবে কখন গতি বাড়াতে বা কমাতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ হেলথলাইন
ছবিঃ পেকজেলস ডট কম