যে ৫ কারণে রাতের খাবার কখনোই দেরিতে খাবেন না
শেয়ার করুন
ফলো করুন

টিকটক আর ইউটিউবের হাজারো ফিটনেস ভিডিওর বদৌলতে বর্তমানে জনসংখ্যার একটা বিশাল অংশ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের দিকে ঝুঁকছেন। হাজার হাজার ভিডিওর হাজারো ভিন্নমতের মধ্যে একটি উপদেশ কিন্তু মিলে যায়। তা হচ্ছে, রাতের খাবার অবশ্যই ঘুমানোর দু-তিন ঘণ্টা আগে সেরে ফেলা। ২০২০ সালে প্রকাশিত ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম জার্নাল অনুযায়ী, রাতে দেরিতে খাওয়ার সঙ্গে ওজন বৃদ্ধি আর হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা বৃদ্ধির সম্পর্ক পাওয়া গেছে।

যদিও অনেকে রাতে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে খাবার সেরে নেওয়ার ওপর জোর দিয়ে থাকেন, তবে ভারতীয় পুষ্টিবিদ দীপিকা ভাসুদেবান বলেন, খাওয়ার সময়ের ব্যাপারটি পুরোপুরি একজনের লাইফস্টাইলের ওপর নির্ভর করে। যদি কেউ অনেক রাত জাগেন কিংবা সাধারণত সাতটা-আটটার দিকে ক্ষুধা অনুভব না করেন, তবে তিনি কিছুটা দেরিতে খাবার গ্রহণ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে খাওয়া ও ঘুমের মধ্যে অন্তত দুই ঘণ্টার ব্যবধান থাকা ভালো। এবার প্রশ্ন জাগে যে এই ঘণ্টা কয়েকের ব্যবধান থাকা আর না থাকায় এমন কী প্রভাব পড়ে। তবে চলুন জেনে আসা যাক।

বিজ্ঞাপন

১. রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ

তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেয়ে নিলে দেহে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা ইনসুলিন রেজিসটেন্সের আশঙ্কা কমিয়ে আনে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া প্রতিবার খাবার খাওয়ার পর আমাদের রক্তে হঠাৎ যে ইনসুলিনের বৃদ্ধি ঘটে, এর মাত্রাও কমিয়ে আনে তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খাওয়ার অভ্যাস।

২. রাতে ভালো ঘুম নিশ্চিত করে

রাতে দেরিতে খেলে কিংবা খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়লে খাদ্য পরিপাকে ব্যাঘাত ঘটে। এতে করে রাতের ঘুম ব্যহত হয়। তাই স্বাস্থ্যবিদেরা ঘুমানোর অন্তত দুই-তিন ঘণ্টা আগে রাতের খাবার সেরে নিতে বলেন। ঘুমানোর দুই-তিন ঘণ্টা আগে খাবার খেয়ে নিলে খাবার পরিপাকের জন্য দেহ যথেষ্ট পরিমাণ সময় পায় এবং ঘুমানোর আগের শরীর একটি স্থির অবস্থায় আসে। এতে করে রাতে ঘুম ভালো হয়।

বিজ্ঞাপন

৩. ওজন কমাতে সাহায্য করে

ওজন কমাতে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। বেশ কয়েকটি গবেষণায় উঠে এসেছে, রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলে শরীর ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং অবস্থায় দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে। রাতের খাবার ও সকালের নাস্তার মাঝের সময়ের ব্যবধান লম্বা হলে, আমাদের দেহ প্রয়োজনীয় শক্তির জন্য দেহে জমানো ফ্যাট ভাঙতে শুরু করে। ফলে দেহে ফ্যাট কমে, ওজন হ্রাস পায়।

৪. গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমিয়ে আনে

ঘুমানোর কিছুক্ষণ আগে কিংবা রাতে দেরিতে খাবার খাওয়া অ্যাসিড রিফ্লাক্সের অন্যতম প্রধান কারণ। এতে বুকে জ্বালাপোড়া ও পেটব্যথার মতো নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে ঘুমানোর অন্তত তিন ঘণ্টা আগে যদি রাতে খাবার খাওয়া যায়, তবে অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।

৫. হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমে

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে যাঁরা রাতে দেরিতে খাবার গ্রহণ করেন, তাঁদের মধ্যে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার খেয়ে ফেলার প্রবণতা থাকে। মোটামুটি খাওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে যাওয়ায় দেহ এই ক্যালরিগুলোকে ব্যবহার করার সময় পায় না। ফলে এই ক্যালরিগুলো ট্রাইগ্লিসারাইডে রূপান্তরিত হয়, যা স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। অপর দিকে, খাওয়া ও ঘুমের মধ্যে দুই-তিন ঘণ্টার ব্যবধান থাকলে দেহ ক্যালরি ব্যবহার করার সুযোগ পায়। ফলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমে আসে।

ছোটবেলায় ‘আর্লি টু বেড অ্যান্ড আর্লি টু রাইজ’ ছড়াটি আমরা সবাই পড়েছি। তবে আর্লি ইটিংয়ের ওপর কোনো ছড়া বা কবিতা না থাকলেও, তা শরীরের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাড়াতাড়ি খাওয়া, তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং তাড়াতাড়ি দিন শুরু করা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য। এতে করে যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত রোগবালাই থেকে দূরে থাকা সম্ভব হবে, একই সঙ্গে কর্মদক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে।

ছবি: ইনস্টাগ্রাম ও পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ০৩: ০০
বিজ্ঞাপন