শীত এলেই অনেকের শ্বাসকষ্ট বাড়ে, যাঁদের অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস ও সিওপিডি সমস্যা আছে, তাঁদের তো বাড়েই; আবার যাঁদের এই সমস্যা নেই, তাঁদেরও শীত এলেই শ্বাসকষ্ট বাড়ে। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের। এই নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। নানা ধরনের কফ কাশির সিরাপ, মন্টেলুকাস্ট সোডিয়াম–জাতীয় ওষুধ সেবন করতে হয়, নয়তো ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু কিছু প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চললে শীতে এই সমস্যা হবে না, হলেও দ্রুত সেড়ে উঠবেন।
এখন শুকনা মৌসুম। এই সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকে। এর ফলে ধুলার পরিমাণ বেড়ে যায়। আর আমরা যাঁরা ঢাকায় থাকি, তাঁরা পৃথিবীর দূষণের পরিমাপে শীর্ষস্থানের শহরে বাস করি। ধুলা ফুসফুসে ঢুকে শ্বাসের সমস্যা বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে জীবাণু সহজেই শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসের ভেতরে প্রবেশ করে। কিন্তু শরীর থেকে তা সহজে বের হয় না। তখন জীবাণু বংশবিস্তার করে ও শ্বাসতন্ত্রে আক্রমণ করে।
মনে রাখতে হবে যে শ্বাসকষ্ট নিজে কোনো রোগ নয়। এটি অন্যান্য রোগের লক্ষণ হিসেবে আমাদের কাছে আসে। শীত এলেই অনেকর নাকবন্ধভাব দেখা দেয়, সর্দি, চোখে চুলকানি ও চোখ থেকে পানি পড়া, বুকে চাপ অনুভব হওয়া, কাশি, শুকনা কাশি, হাঁচি (বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠেই তিন–চারটা হাঁচি দেয়া), দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস ইত্যাদি শ্বাসকষ্টের উপসর্গ হিসেবে ধরা হয়।
আমাদের জানা দরকার যে সাধারণভাবে ফুসফুসের অভ্যন্তরের একরকমের তরল নিঃসৃত হয়, যা ব্রঙ্কিয়াল নিঃসরণ বলা হয়। এই তরলের সাহায্যে শ্বাসতন্ত্রের অভ্যন্তরে থাকা সিলিয়ারি কোষ শ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে ঢুকে পড়া ধুলাবালু ও জীবাণুকে বের করে দেয়। কিন্তু বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ার কারণে শ্বাসতন্ত্রেও শুষ্কভাব তৈরি হয়। আবার এই সময় পানি পান কম করার কারণে ব্রঙ্কিয়াল নিঃসরণ কমে যায়। ফলে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়।
বিশেষ করে প্রাকৃতিক কিছু নিয়ম মেনে চললে এবং কিছু প্রাকৃতিক উপাদান পান করলে আপনার শীতজনিত সমস্যা হবে না। হলেও দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে। এর মধ্যে আজকে বলব হলুদ চা নিয়ে ।
আমাদের শ্বাসতন্ত্রের স্বাভাবিক রাখার অন্যতম টনিক হচ্ছে হলুদ। এ ক্ষেত্রে তাই বিশেষ কার্যকর হলুদের চা! হলুদের চা এটা কেমন এই নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানও দাবী করছে যে হলুদ চা আমাদের শ্বাসতন্ত্রের জন্য খুব উপকারী। এটা ঘরেই বানাতে পারবেন।
• ১০০ গ্রাম হলুদের গুঁড়া (নিজে ভাঙানো, প্যাকেটজাত হলুদের গুঁড়া নয়)
• ২০ গ্রাম গোলমরিচের গুঁড়া
• ২০ গ্রাম দারুচিনির গুঁড়া
এই তিন মিশ্রণ একসঙ্গে মিশিয়ে নিলেই হয়ে যাবে হলুদ চা।
সকালে নাস্তার পরে এক কাপ গরম পানিতে এক চা–চামচ এই মিশ্রণ মিশিয়ে সরাসরি পান করতে পারলে ভালো, নয়তো মধু বা গুড় মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। এরপর রাতের খাবারের পর ঠিক শোবার আগে একই নিয়মে এই হলুদ চা পান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, রাতে এই হলুদ চা খাওয়ার পরে আর কোন কিছু খাওয়া যাবে না। রাতে শোবার সময় যেন গলায় হলুদ থাকে, সেই হলুদ শরীরে থাকা শ্লেষা পরিশোধন করে পাকস্থলী দিয়ে বের করে দেয়।
আরও একটা দিক খেয়াল রাখতে হবে, কোন অবস্থায় হলুদ বেশি খাওয়া উচিত নয়; অতিরিক্ত হলুদ খেলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। হলুদের ভেতরে অক্সালেট থাকে, এই অক্সালেট দেহে ক্যালসিয়াম দ্রবীভূত করার পরিবর্তে জমাট বাঁধায় সহায়তা করে। ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভবনা থাকে। সারা দিনে দুবার এক চা–চামচ করে খেলে কোনো সমস্যা হবে না।
আরেকটা বিষয় সতর্ক থাকা দরকার, যদি শ্বাসকষ্টের সঙ্গে জ্বর থাকে, বুকে ব্যথা হয়, শ্বাস নিতে গেলে শোঁ শোঁ শব্দ হয়, তাহলে বুঝতে হবে এটা ফুসফুসের মারাত্মক জটিলতা। এমন হলে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত।
লেখক: খাদ্য পথ্য বিশেষজ্ঞ ও প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র।
ছবি: পেকজেলসডটকম