গত দুই বছরে কতজন ইন্টারনেটে চটকদার ভিডিও আর তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে দিগ্বিদিকশূন্য হয়ে ঘি-মাখন আর অতিরিক্ত আমিষে পরিপূর্ণ, আর শর্করাশূন্য কিটো ডায়েটের চক্করে কতজন পড়েছিলেন কে জানে! কত মানুষের কিডনি আর যকৃতের ক্ষতি হয়েছে তারও হিসাব নেই। এমন সব ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে আমরা ওজন কমানোর যাত্রায় প্রায়ই অনেক পিছিয়ে পড়ি। সেই সঙ্গে ক্ষতি হয় অমূল্য স্বাস্থ্যের।
আমরা সবাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই। সুস্থ জীবনের জন্য এর বিকল্পও নেই। কিন্তু আজকাল সব বিষয়েই টিভি আর ইন্টারনেটের তথ্য-সমুদ্রে হাবুডুবু খেতে খেতে কোনটি যে ভুল তথ্য আর কোনটি সঠিক, সেটা বুঝতে পারা বেশ মুশকিল হয়ে গেছে।
প্রায়ই হুজুগে পড়ে আমরা উল্টাপাল্টা ডায়েট করি। আবার ভুল তথ্য অনুযায়ী অনেক চেষ্টা করে চলি ওজন কমাতে। ফলে আশানুরূপ ফল তো পাওয়া যায় না। এবার এমন সব ভুল ধারণাগুলোর কথা জেনে নেওয়া যাক।
১. কোনো খাবারের গ্রুপ পুরোপুরি বাদ দেওয়া
শর্করা হোক বা ফ্যাট—খাদ্যতালিকা থেকে কোনোটি একেবারে বাদ দেওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এতে আর যা–ই হোক, ওজন স্বাভাবিকভাবে কমবে না। আর প্রাথমিক পর্যায়ে ওজন কমলেও তার দীর্ঘমেয়াদি ফল ভালো হবে না। এর চেয়ে ওমেগা থ্রি যুক্ত উপকারী ফ্যাট আর হোলগ্রেইন জটিল শর্করা রাখতে হবে খাবারের তালিকায়। ধর্মীয় বিধিনিষেধ না থাকলে আলাদা করে মাংস বাদ দিলেই যে ওজন কমবে, তা–ও ঠিক নয়। তবে বেশি বেশি উদ্ভিজ্জ খাবার খেতে হবে দিনে। কিন্তু অনেক উদ্ভিজ্জ খাবারে অনেক ক্যালরি আছে। তাই সব মিলে বুঝশুনে খেতে হবে।
২. গ্লুটেনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা
যদি অসুস্থতার জন্য গ্লুটেন বাদ দেওয়া হয় বা অ্যালার্জি থাকে, তাহলে ভিন্ন কথা৷ নয়তো শুধু শুধু গ্লুটেন বাদ দিয়ে নিজের জীবনযাত্রা কঠিন করার কোনো মানে নেই। গ্লুটেন-ফ্রি ডায়েট অনুসরণ করতে গিয়ে হয়তো আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, মিনারেল আর আঁশ বাদ দিচ্ছি খাদ্যতালিকা থেকে। আর হোলগ্রেইন বা একটা শস্য পুরোটা খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। বাজারে গিয়ে লেবেল দেখে প্রক্রিয়াজাত করা গ্লুটেন–ফ্রি খাবারে লাভের চেয়ে ক্ষতি আরও বেশি। বরং লাল আটার রুটি বা চাপটি খেলে তাতে গ্লুটেন থাকলেও পেট ভরাতে, ওজন কমাতে ভালো এ খাবার।
৩. শুধু তরল ডায়েট অনুসরণ করা
তরল যেমন জুস, স্মুদি ইত্যাদিতে চিনি বেশি থাকে। পুষ্টিবিদেরা গোটা ফল খাওয়াকেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে অধিক কার্যকর মনে করে। কারণ, এতে আঁশ থাকে। জটিল শর্করা রাখা যায় না তরল ডায়েটে। এটিও ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
৪. না খেয়ে থাকা
দিনের একবেলার খাবারও বাদ দেওয়া উচিত নয় সাধারণ অবস্থায়। না খেয়ে থাকলেই ওজন কমে—এটি ভুল ধারণা। এতে উল্টা শরীরের বিপাকীয় কাজ ধীরগতির হয়ে যায়। এতে ওজন কমানো কঠিন হয়ে যায়। বরং দিনে ৬ বার অল্প অল্প করে স্বাস্থ্যসম্মত পরিমিত ক্যালরির খাবার খেলে ভালো। আবার অনেক লম্বা সময় ধরে না খেয়ে থাকলে বেশি খাওয়া হয়ে যায় খেতে বসলে। আর এ সময় শরীর বারবার এ রকম হলে ফ্যাট জমিয়ে রাখে বিভিন্ন জায়গায়। এমনকি ফ্যাটি লিভারও হতে পারে এর ফলে।
তথ্যসূত্রঃ হেলথলাইন
ছবিঃ পেকজেলস ডট কম