দুশ্চিন্তা বা অ্যাংজাইটি অ্যাটাক বলতে আমরা বুঝি সেই অবস্থা, যখন প্রচণ্ড অস্বস্তি, নেতিবাচক ভাবনাচিন্তা বা অমূলক আশঙ্কা একেবারে গ্রাস করে নিতে থাকে আমাদের মনকে। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এই অত্যন্ত কষ্টদায়ক অনুভূতিগুলো যদি তীব্রতার সীমা অতিক্রম করে, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে অবশ্যই একে একটি মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা হিসেবে দেখা ও এর উপযুক্ত সমাধানের পথ খোঁজা উচিত।
অ্যাংজাইটি বা দুশ্চিন্তা আমাদের ওপর বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। যেমন:
১. আমাদের অনুভূতিতে
২. আমাদের চিন্তাভাবনায়
৩. আমাদের বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে
ফলাফল স্বরূপ আমাদের আচরণে দুশ্চিন্তার যে শারীরিক ও মানসিক লক্ষণগুলো দেখা দেয়, সেগুলো চিনে নিই এবার।
* হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয়ে যাওয়া
* অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন
* মাথা হালকা লাগার অনুভূতি এবং মাথা ঘোরানো
* মাথাব্যথা
* বুকে ব্যথা
* ক্ষুধামান্দ্য
* প্রচণ্ড ঘাম হওয়া
* শ্বাসকষ্ট
* খুব গরম লাগা
* কাঁপুনি
* মানসিক অবস্থার পরিবর্তন
* অত্যন্ত অস্থির ও নার্ভাস লাগা
* আরাম বা রিল্যাক্স করতে না পারা
* অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া
* হঠাৎ কান্না পাওয়া
* ঘুমাতে না পারা
* কোনো কিছুতে মনোযোগ না দিতে পারা
* সব সময় সব ব্যাপারে সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ পরিণতির আশঙ্কা করা
* হঠাৎ হঠাৎ প্রায়ই অতীতের কোনো দুর্ঘটনা বা খারাপ স্মৃতি মনে পড়া
* অবসেসিভ বা অনিচ্ছাকৃতভাবেই খারাপ কিছু ঘটা, কষ্টের কোনো অনুভূতির ব্যাপারে ভাবতে বাধ্য হওয়া।
দুশ্চিন্তার প্রভাবে আচরণগত পরিবর্তনগুলোও খুবই কষ্ট দায়ক।
এগুলো হলো:
* অবসর সময় বা শখের কাজগুলোকে উপভোগ করতে না পারা
* নিজের খেয়াল না রাখা, যত্ন না নেওয়া
* মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে ও সম্পর্কগুলো ধরে রাখতে সমস্যা হওয়া
* নতুন কিছু শুরু করতে শঙ্কিত বোধ করা। তা হতে পারে কোনো নতুন খাবার বা পোশাকের মতো সাধারণ ব্যাপার।
* কিছু বিশেষ স্থান, মানুষ বা পরিস্থিতিকে খুব সন্তর্পণে এড়িয়ে চলা।
* কম্পালসিভ আচরণের পুনরাবৃত্তি করা। যেমন বারবার দেখা যে দরজা লক কি না বা চুলা নেভানো হয়েছে কি না।
অ্যাংজাইটি অ্যাটাক হলে সবার আগে বর্তমান সময়ের দিকে ফোকাস করতে হবে। কারণ, সাধারণত আমাদের অমূলক বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগুলো অতীত বা ভবিষ্যৎকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। তাই এ সময় খেয়াল করে লম্বা ও গভীর শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হবে। আর কিছু ব্যাপারে ফোকাস করতে হবে। এই ব্যাপারগুলো খুব সহজ আর ‘৫-৪-৩-২-১’ এভাবে সরল ক্রমানুসারে সাজানো যায়। এগুলো হলো:
* পাঁচটি জিনিস যা দেখা যায়
* চারটি জিনিস যা স্পর্শ করা যায়
* তিনটি বিশেষ শব্দ বা সাউন্ড যা শোনা যায়
* দুটি বিশেষ ঘ্রাণ যা ভালো লাগে
* একটি বিশেষ স্বাদের কোনো খাবার বা বস্তু
এভাবে গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস এবং দৃষ্টি, স্পর্শ, শ্রবণ, ঘ্রাণ ও স্বাদের অনুভূতিগুলোর দিকে মনোনিবেশ করে অতিরিক্ত ও অমূলক দুশ্চিন্তা বা অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কিন্তু এই দুশ্চিন্তার ক্রনিক ও মাত্রাতিরিক্ত হলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা এলে বা নিজের ও অপরের ক্ষতি সাধনের সম্ভাবনা থাকলে অবশ্যই মনোরোগবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক: যুক্তরাজ্যের একজন গবেষক, প্রকৌশলী ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নিউরো লিঙ্গুইস্টিক প্রোগ্রাম প্র্যাকটিশনার ও কোয়ান্টাম ইমোশনাল মাস্টারি কোচ।
ছবি: হাল ফ্যাশন ও পেকজেলসডটকম