হিমোগ্লোবিন একটি বিশেষ প্রোটিন যা লোহিত রক্তকণিকায় অক্সিজেন পরিবহন করে। হিমোগ্লোবিনের প্রধান ভূমিকা হলো, ফুসফুস থেকে শরীরের কার্যকরী পেশিগুলোয় অক্সিজেন পরিবহন করা এবং তারপর সেখান থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড ফুসফুসে ফিরিয়ে আনা।
হিমোগ্লোবিন কমে গেলে অভ্যন্তরীণ অঙ্গ এবং টিস্যুগুলোর হাইপোক্সিয়া হতে পারে, যার ফলে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, দুর্বলতা, ফ্যাকাশে গাত্রবর্ণ, কাজে মনোনিবেশ করতে অসুবিধা আর স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কম হিমোগ্লোবিনের প্রধান কারণ আয়রনের ঘাটতি।
নিয়মিত আয়রন, ভিটামিন সি ও ফলিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির সর্বোত্তম উপায়। আয়রনের সবচেয়ে ভালো উৎস হলো পশুর যকৃত, লাল মাংস (গরু, ভেড়া, ছাগল) ও কলিজা। এসব প্রাণীজ খাবারের আয়রন শোষণের হার ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত হয়। উদ্ভিদ থেকে পাওয়া শীর্ষস্থানীয় আয়রনসমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে পালং শাক, কচু, কাঁচকলা, তেঁতুল, বিটরুট, টোফু, অ্যাসপারাগাস, অ্যাপ্রিকট, তরমুজ, প্রুনস, কুমড়ার বীজ, খেজুর, বাদাম, কিশমিশ, আমলা, গুড়, লেটুস, ব্রকলি, গোলমরিচ, টমেটো, গাজর, লেবু, কমলা, আপেল, কিউই এবং আরও অনেক কিছু।
ভিটামিন সি আয়রনের শোষণকে ত্বরান্বিত ও সঠিকভাবে নিশ্চিত করতে পারে। তাই ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ শাকসবজি ও ফল খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে। ফলিক অ্যাসিডও হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদার্থ। ফলিক অ্যাসিডের দীর্ঘমেয়াদি অভাবে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম হতে পারে। ফলিক অ্যাসিডের ভালো উৎস হল ব্রকলি, বাঁধাকপি, পালং শাক ইত্যাদি।
এমন খাবার এড়িয়ে চলুন যা আপনার শরীরের আয়রন শোষণ করার ক্ষমতাকে বাধা দিতে পারে। বিশেষ করে যদি আপনার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকে, তাহলে কফি, চা, কোলাজাতীয় পানীয় ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উত্তম সিদ্ধান্ত। নিয়মিত ব্যায়াম করা হিমোগ্লোবিন পূরণের অন্যতম উপায়। মাঝারি থেকে উচ্চপর্যায়ের ওয়ার্কআউট এ ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর মনে করা হয়। কারণ, আপনি যখন ব্যায়াম করেন, আপনার শরীরের সব জায়গায় অক্সিজেনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আরও হিমোগ্লোবিন তৈরি হয়।
এ ছাড়া হাইড্রেটেড থাকা ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি হিমোগ্লোবিন তৈরি করার জন্য শরীরের ক্ষমতাকে সচল করতে সাহায্য করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হতে পারে। তবে রক্তশুন্যতার লক্ষণ না কমলে সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্যসুত্রঃ হেলথলাইন
ছবিঃ পেকজেলস ডট কম