হুটহাট সব ভুলে যাচ্ছেন? জেনে নিন স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কিছু কার্যকরী কৌশল
শেয়ার করুন
ফলো করুন

১. পর্যাপ্ত ঘুম

প্রতিদিনের ঘুম মস্তিষ্ক সুরক্ষা রাখার জন্য অনেক কার্যকরী। কারণ ঘুমের মধ্যে মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায়। পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক আট ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ভালো ঘুম আপনার মস্তিষ্ককে অধিক কার্যকরী করে তোলে। ঘুমের সময় সাম্প্রতিক সময়ের তথ্যগুলোকে মস্তিষ্ক সংরক্ষণ করতে থাকে। তাই ঘুমকে বলা হয় মেমোরি চার্জার। ঘুমের সময় আপনার মেমোরি পরবর্তী স্মৃতি ধারণের জন্য প্রস্তুত হয়।

২. মস্তিষ্কের ব্যায়াম

প্রথমে শুনলে হয়তো পাগলামি ভাবতে পারেন কিন্তু আপনি আপনার মস্তিষ্ককে যত বেশি কাজে লাগাবেন, আপনার মস্তিষ্ক তত বেশি কাজ করবে। যেমন সবজি কাটার ছুরিটি দিয়ে যত বেশি কাটা কাটি করবেন ছুরিটি তত বেশি ধারালো হবে। মানুষের মস্তিষ্কের একটি বিস্ময়কর ক্ষমতা রয়েছে, এই ক্ষমতা স্নায়ু নমনীয়তা হিসাবে পরিচিত হয়। অধিকতর উদ্দীপনার সঙ্গে মস্তিষ্ক নতুন স্নায়বিক পথ গঠন করে ও পুরোনো সংযোগ পরিবর্তন করে। তাই মস্তিষ্ককে যত বেশি সম্ভব ব্যস্ত রাখা উচিত।

৩. পাজল বা ধাধা

গবেষণায় দেখা যায় যারা নিয়মিত পাজল সমাধান, স্ক্রাবল, সুডোকু মেলানোর অভ্যাস রয়েছে তাদের মস্তিষ্ক অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি কাজ করে। যখন আপনি ধাঁধার সমাধানে ব্যস্ত, তখন মস্তিষ্কের স্মৃতি এলাকাগুলোতে পুরো মস্তিষ্কের সব স্নায়ুগুলো সক্রিয় হয়। যা কিনা স্মৃতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ ছাড়া তাদের স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা জনিত সমস্যাও হয় না। তাই সময় পেলেই এই ধরনের খেলায় ব্যস্ত থাকা উচিত।

৪. মেলোথেরাপি মিউজিক

থেরাপিকে সাধারণত মেলোথেরাপি বলা হয়। এটি দুর্বল স্মৃতিশক্তি কে কমিয়ে দেয় একেবারেই। এই মেলোথেরাপির মাধ্যমে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হওয়ার ক্ষমতা বাড়ায়। গবেষণায় দেখে গিয়েছে ক্ল্যাসিক ধরনের গান মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বাড়ায় প্রাপ্ত বয়স্ক থেকে শিশু কিশোরদের মধ্যেও।

বিজ্ঞাপন

৫. বই পড়া

বই পড়া হচ্ছে মস্তিষ্কের সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। যে ধরনের বইই হোক না কেন বই পড়ার বিষয়টি মস্তিষ্কের স্নায়ু সচল রাখতে সহায়তা করে। এমনকি খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন যাই হোক না কেন অবসর সময়ে তা পড়ে নিলে মস্তিষ্কের বেশ ভালো ব্যায়াম হয়। এতে করে স্মৃতিশক্তিও উন্নত হয়।

৬. লেখালেখি

নতুন একটি ভাষা শেখা এবং লেখার মাধ্যমে নিজের আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়ে তেমনই কমে যায় স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা। নতুন একটি ভাষা শেখা, বোঝা এবং প্রয়োগ করার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বাড়ে যা স্মৃতিশক্তিকে দুর্বল হতে বাঁধা দেয়।

৭. প্রশিক্ষণ

মুখস্থ করা বিষয় গুলো আবার পড়া। মনোবিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে একমত যে, কোনো একটি বিষয় বেশিবার পড়া হলে তা আমাদের মস্তিষ্কে দৃঢ়ভাবে জমা হয়। যে কোনো কিছু মুখস্থ করার মাধ্যমে মস্তিষ্কের  প্রশিক্ষণ হয়। মস্তিষ্কের প্রশিক্ষণের ফলে আমাদের চিন্তা, সৃজনশীলতা, বুদ্ধিমত্তা, অন্তর্দৃষ্টি বাড়তে থাকে।

৮. যোগাযোগ

যে কোনো ধরনের যোগাযোগ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ। এতে আমাদের শব্দভান্ডার বৃদ্ধি পায়। বিষণ্নতা ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তাই সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত রাখলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে সামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধিতে স্মৃতিশক্তি দৃঢ় হয়। এবং সামাজিক কর্মকাণ্ড বিষণ্নতা এবং মানসিক চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করে। যদি আপনি একা একা থাকেন তবে দিনের কিছুটা সময় কাটান আপনার প্রিয় কোনো বন্ধু বা প্রিয় কোনো ব্যক্তির সঙ্গে। এতে আপনার বিষণ্নতা কমবে।

৯. শারীরিক ব্যায়াম

ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম শারীরিক, মানসিক এবং বুদ্ধি হীনতা সমস্যার একটি বড় সমাধান। ব্যায়াম করলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্ক গ্রহণ করে গ্লুকোজ, যাতে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া ব্যায়াম মস্তিষ্কের নতুন কোষ (নিউরন) বৃদ্ধি করে।

১০. খাবার

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য অবশ্যই ভিটামিন যুক্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। তাজা ফলমূল, গাঢ় সবুজ শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, গমের রুটি প্রভৃতি প্রোটিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। পরিমাণ মতো বিশুদ্ধ পানি পান করুন। অধিক চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন। বিশেষ করে বাসি-দূষিত খাবার খাবেন না। ধূমপান ও মাদক সেবন থেকে বিরত থাকুন। এগুলো মস্তিষ্কের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর।
স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়ার পেছনে অন্য কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যাও থাকতে পারে। কেউ যদি স্মৃতি শক্তি জনিত গুরুতর সমস্যায় ভোগেন তাহলে অবশ্যই তাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

ছবি: পেকজেলসডটকম

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন