স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে না চললে, নিয়মিত পরিশ্রম ও শরীরচর্চা না করলে বেড়ে যায় তলপেটের চর্বি। তা ছাড়া তলপেটে চর্বি জমার অন্যতম কারণ দুশ্চিন্তা। ধ্যান, যোগাসন ও পর্যাপ্ত ঘুম এই চর্বি জমা থেকে নারীদের দূরে রাখতে পারে।
পেটের চর্বি দুই ধরনের। সাবিকিউটেসিয়াস চর্বি ও ভিসেরাল চর্বি। চামড়ার ঠিক নিচে যে চর্বি থাকে, সেটাকে বলে সাবিকিউটেসিয়াস ফ্যাট। এটাই মূলত পেটে জমে থাকা দৃশ্যমান চর্বি। ভিসেরাল চর্বি থাকে একেবারে গভীরে, দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গের নিচে। দুই ধরনের চর্বির স্তরের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। এর মধ্যে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস ও প্রদাহ অন্যতম।
ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন, কর্টিসোল ইত্যাদি হরমোন কীভাবে নিঃসৃত হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে পেটের চর্বি কীভাবে বিন্যস্ত হবে।
চল্লিশোর্ধ নারীরা মেনোপজের যত কাছাকাছি যেতে থাকেন, তাঁদের ইস্ট্রোজেন তত কমতে থাকে। এই হরমোনের মূল কাজ চর্বিকে সুবিন্যস্ত করা। তাই এই হরমোনের নিঃসরণ কমতে থাকলে, পেটে চর্বি জমতে শুরু করে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের মধ্যে বিভিন্ন রকম চিন্তা বাড়তে থাকে, যা দেহের কর্টিসোলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে পেটের কাছেই জমতে শুরু করে চর্বি। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ইনসুলিন আমাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, কায়িক পরিশ্রম বা শরীরচর্চা না করা এই ইনসুলিনকে শর্করা নিয়ন্ত্রণে বাধা দেয়। ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই আশঙ্কায় থাকেন সেডেন্টারি লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত নারীরা।
যেসব খাবার রক্তে খুব দ্রুত চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, তারা মূলত ইনসুলিন সঞ্চয় করে এবং পেটে চর্বি জমার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। নিয়মিত রুটিন মাফিক ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম ওজন নিয়ন্ত্রকে প্রভাবিত করে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা মেনে চলতে হবে। খাদ্যতালিকায় প্রচুর ফল, সবজি, লিন প্রোটিন ও আঁশযুক্ত খাবার থাকা প্রয়োজন। চিনি, রিফাইন্ড শর্করা, প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া একেবারে কমিয়ে বা বন্ধ করে দিয়ে এক মাস অপেক্ষা করুন, অভূতপূর্ব ফলাফল পাবেন। পোর্শন কন্ট্রোল বা অল্প পরিমাণ খাবার একটু পরপর খাওয়া ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং পেটের চর্বি নিয়ন্ত্রণ করে।
পেটে চর্বি জমার ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার ওপর নির্ভর করে। সুস্থভাবে জীবনধারণের জন্য এসব বিষয় মাথায় রাখলে পেটের চর্বি যেমন কমবে, তেমনি ওজনও থাকবে নিয়ন্ত্রণে। নিজে ভালো থাকলে আশপাশের পৃথিবীটাও থাকে সুন্দর।
ছবি: পেকজেলসডটকম