সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন পেতে সাতটি পরিবর্তন আনুন রোজকার খাবারে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

সময়ানুবর্তিতা আর শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনের জন্য পূর্ব এশিয়া, অর্থাৎ জাপানি, চাইনিজ, কোরিয়ান আর কম্বোডিয়ানদের বেশ নামডাক রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন ও দীর্ঘ আয়ুর অধিকারী দেশগুলোর মধ্যে এই দেশগুলো রয়েছে। বড় বড় যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েন পার করে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে এ অঞ্চলের অনেক দেশ। এখানকার মানুষের খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত। আর ধারণা করা হয়, এ জন্যই পূর্ব এশিয়ার বয়োজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠী খুবই সচল, কর্মক্ষম ও সাধারণভাবে সুস্থ জীবন যাপন করেন। এখানে বয়সজনিত আর অসংক্রামক ক্রনিক রোগের প্রকোপ অনেক কম। এবার পূর্ব এশিয়ার মানুষের খাদ্যাভ্যাসের এমন কিছু দিক জেনে নেওয়া যাক, যা আপনাকে সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন পেতে সাহায্য করবে।

১. প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খাওয়া

পশ্চিমা সংস্কৃতি যেখানে প্রক্রিয়াজাতকৃত ও সহজলভ্য খাবারের দিকে ঝুঁকছে, সেখানে এ অঞ্চলের অধিবাসীদের খাদ্যাভ্যাসের বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে শাকসবজি। তাদের দৈনিক খাবারের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে সি-উইড, তাজা শাকসবজি ইত্যাদি। এসব খাদ্য থেকে পাওয়া ফাইটোকেমিক্যাল, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞাপন

২. খাবারে তেলের যৎসামান্য ব্যবহার

দক্ষিণ এশীয় খাবারে যেখানে প্রচুর তেল–মসলা ব্যবহার করা হয়, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে কম মসলা ও স্বাস্থ্যকর উপায়ে রান্নার চল বেশি। অল্প তেল ও মসলা ব্যবহার করে মূলত সেদ্ধ করে, ভাপ দিয়ে, অল্প তেলে দ্রুত ভেজে কিংবা গ্রিল করার মাধ্যমে বেশির ভাগ খাবার তৈরি করা হয় এখানে। এতে খাবারের পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকে এবং খাবারে অপ্রয়োজনীয় ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ কমে আসে। এমন তেল কম খাওয়ার অভ্যাস বিভিন্ন ধরনের হৃদ্‌রোগ প্রতিহত করতে সাহায্য করে।

৩. স্যুপ–জাতীয় খাবার খাওয়া

পুষ্টিকর খাবারও যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়, তবে ওজনাধিক্যের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। প্রথাগতভাবেই পূর্ব এশিয়ায় সবাই খাবারের আগে বা মূল পদ হিসেবে প্রায়ই স্যুপ খেয়ে থাকেন। এতে অল্প ক্যালরিযুক্ত খাবার দিয়েই পেট অনেকটা ভরে যায় এবং খাবার খেতে বসে অতিভোজন করা হয় না।

৪. চা খাওয়া

চা বলতেই যদিও দুধ-চিনি দিয়ে জ্বাল দেওয়া দুধ–চায়ের কথা মাথায় আসে আমাদের, পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশেই কিন্তু বিভিন্ন স্বাস্থ্যগুণসম্পন্ন নানা ধরনের চায়ের হালকা লিকার বেশি জনপ্রিয়। এ–জাতীয় চায়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এ ছাড়া এসব চায়ের অনেকগুলোই ক্যানসার বা বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

বিজ্ঞাপন

৫. প্রতিদিনের খাবারে সামুদ্রিক মাছ খাওয়া

জাপানিজ, চাইনিজ বা ভিয়েতনামিজদের মধ্যে সামুদ্রিক মাছের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। প্রতিদিনের খাবারে পরিমিত ভাত ও সবজির পাশাপাশি খাওয়া হয় গ্রিলড কিংবা স্টিমড মাছ। এতে প্রতিদিনের প্রোটিনের চাহিদা তো পূরণ হয়ই, পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছে পাওয়া ওমেগা-থ্রি ত্বককে করে উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত ও বয়সের ছাপবিহীন। মাংসের চর্বি এড়ানোর ফলে কমে আসে উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বা হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি।

৬. মিষ্টির পরিবর্তে ফল

শেষ পাতে মিষ্টির চল কমবেশি সব সংস্কৃতিতেই রয়েছে। খাওয়া শেষে মিষ্টি কিছু না খেলে যেন মন ভরে না। তাই খাওয়া শেষে চিনিযুক্ত মিষ্টি, কেক ইত্যাদি খাবারের দিকে হাত বাড়ান অনেকেই। আমরাও দুধ, মালাই, গুড়, চিনি, ঘি—এসবে ভরপুর ডেজার্টই খাই। তবে পূর্ব এশীয়রা প্রায়ই যেকোনো প্রক্রিয়াজাত মিষ্টির বদলে প্রাকৃতিক ডেজার্ট—ফল খেয়ে থাকেন। ফলমূল একদিকে যেমন সব ধরনের ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টের চাহিদা পূরণ করে, অপর দিকে ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় পেটও বেশ অনেকটা সময় ভরা থাকে।

৭. ছোট ছোট প্লেটে খাবার খাওয়া

যদিও ব্যাপারটি পুরোপুরি মানসিক, তবে ছোট প্লেটে খাবার খেলে অতিভোজনের আশঙ্কা কমে। ঐতিহ্যগতভাবেই পূর্ব এশিয়ার মানুষেরা ছোট ছোট কয়েকটি প্লেট ও বাটিতে ভাত, সবজি, মাছ, স্যুপ ইত্যাদি খাবার অল্প পরিমাণে সাজিয়ে খেয়ে থাকেন, তা–ও আবার চপস্টিকস দিয়ে। এতে কোনো একটি নির্দিষ্ট খাবার বেশি খাওয়ার বদলে প্রয়োজনীয় পরিমাণে সব ধরনের খাবার ভারসাম্য রেখে বুঝেশুনে খাওয়া যায়।

বর্তমান যুগে শৃঙ্খলাবিহীন ছন্নছাড়া জীবনকে বেশ মহিমান্বিত করা হলেও বাস্তবে তা শারীরিক ও মানসিক—উভয়ভাবেই আমাদের জন্য ক্ষতিকর। নিয়ম মেনে পরিশ্রমী ও শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন যাপন করা বাইরে থেকে যতই বিরক্তিকর কিংবা একঘেয়ে মনে হোক না কেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা এর সুফল লাভ করতে পারি।

তথ্যসূত্র: সিএনএন হেলথ

ছবি: হাল ফ্যাশন ও পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন