পেটের মেদ কমানোর উপায়ের ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে সেই আশির দশকের এক ট্যাগলাইনের কথা অনেকেই জানি আমরা- 'মেদ ভুঁড়ি কী করি'। আসলেই পেটের অতিরিক্ত মেদ এক নাছোড়বান্দা সমস্যার নাম। ডায়েট আর ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের ওজন বাগে আনা গেলেও পেটের মেদ কমতে চায় না। আর এ কথা তো আমরা সবাই জানি যে শরীরের মধ্যভাগে অতিরিক্ত চর্বি জমলে তা হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় অনেকটা। কোমরে ব্যথা, ফ্যাটি লিভারসহ বহু শারীরিক সমস্যা তো আছেই সঙ্গে। বসে বসে ডেস্কে কাজ করা হয় যাঁদের, তাঁদের ক্ষেত্রে অল্প বয়সেই ভুঁড়ি হওয়ার প্রবণতা থাকে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তো আছেই সঙ্গে।
আবার মেয়েদের মা হওয়ার পরে, বিশেষ করে সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান করলে পরবর্তী সময়ে তলপেটে আলগা চর্বি জমে সহজেই। ব্যায়ামের অভাব, প্রক্রিয়াজাত লবণ-চিনি-ফ্যাট জর্জরিত খাবার আর পানীয় এতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। ফলে পেটের মেদ স্থায়ী আসন গেড়ে বসে দেহে। সুন্দর পোশাক পরলে যদি পেটের মেদবহুল অংশ দৃশ্যমান হয়, তবে পুরো লুকটাই মাটি হয়ে যায়। তাই একেবারে ওয়াশবোর্ড অ্যাবস বা সিক্স প্যাকস না হলেও উদরদেশ মেদমুক্ত রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা ছাড়া গতি নেই। আর সে প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হয়ে যদি আপনি হতাশায় ডুবে যেতে থাকেন, আপনার জন্য আজকের পরামর্শগুলো কাজে লাগবে অবশ্যই।
বিশেষজ্ঞ মতামত অনুযায়ী পেটের মেদ কমানোর কার্যকর ও বাস্তবসম্মত কিছু উপায় এবারে দেখে নেওয়া যাক।
১. রাত জেগে এটা–ওটা খাওয়া বন্ধ করুন
মিডনাইট ক্রেভিং বলি বা বিঞ্জ ইটিং, রাত জেগে হাবিজাবি খাওয়া একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে৷ চানাচুর বা চিপসের প্যাকেট, ফ্রিজ খুলে বের করা কেক, মিষ্টি বা আইসক্রিম—এসবই চলে তখন আসলে। কিন্তু সূর্যাস্তের পর যত দ্রুত দিনের শেষ খাবারটুকু খেয়ে নেওয়া যায়, ততই ভালো। এতে এই খাবারগুলোর শর্করা, চিনি বা চর্বি শরীরে সেভাবে জমতে পারে না। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেলে দেহঘড়ি এক ছন্দে চলে আসে। আর এ অবস্থায় চর্বি জমা হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। তাই রাতের খাবার খাওয়ার পর স্ন্যাকস খাওয়া যাবে না যখন–তখন।
২. শর্করা নির্বাচনের ব্যাপারে সাবধান হোন
পেটে যে চর্বি জমে, তার জন্য মূলত শর্করাজাত চর্বি ট্রাইগ্লিসারাইডই দায়ী। তাই আমরা ফ্যাট কম খেলেও যদি ঠেসে ভাত-রুটি খাই, তবে ভুঁড়ি হবেই। যদি ক্ষয় না হয়, তবে এই অতিরিক্ত শর্করা জমে যায় শরীরে। সাদা চাল, সাদা আটা আর প্রক্রিয়াজাত খাবারের শর্করা এ জন্য অনেকাংশে দায়ী। তবে বর্তমানে ক্রেজে পরিণত হওয়া লো কার্ব বা নো কার্ব ডায়েট অনুসরণ করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। যেটা করতে হবে, তা হলো পরিমিত পরিমাণে আর জটিল শর্করা গ্রহণ। সরল শর্করা যেমন চিনিযুক্ত পানীয় ও খাবার এসব কমাতে হবে। এর বদলে জটিল শর্করা যেমন লাল আটা, লাল চাল, গোটা শস্য দিয়ে বানানো খাবার বা আঁশযুক্ত শর্করাজাতীয় খাবার খেতে হবে।
৩. কার্ডিও ব্যায়াম আর স্ট্রেংথ ট্রেনিং করুন
ওজন কমানোর মতো পেটের মেদ প্রতিরোধ বা হ্রাস করতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। পেটের মেদের জন্য স্কোয়াটও খুব কার্যকর। বিভিন্ন রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং আর অ্যারোবিক্স রুটিন রয়েছে, যা শুধু পেটের মেদ কমানোর লক্ষ্য নিয়ে সাজানো। কিছু যোগব্যায়ামও ভালো কাজ করে ভুঁড়ি কমাতে। এ জন্য সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম যেমন দ্রুত হাঁটা বা সাইক্লিং অথবা ৭৫ মিনিট ভারী ব্যায়াম, যেমন দৌড়ানো বা খেলা এ রকমই পরামর্শ দেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা।
৪. খাবারের প্লেটে পর্যাপ্ত আমিষ রাখা
সুস্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে চর্বিমুক্ত আমিষ খাওয়া খুবই প্রয়োজন। দিনে প্রতি বেলার খাবারে ২০ থেকে ৩০ গ্রাম আমিষ খেতে হবে৷ আর স্ন্যাকসেও ১০ গ্রাম আমিষ থাকলে ভালো। খাবারে যথেষ্ট প্রোটিন থাকলে খেয়ে সন্তুষ্টি মেলে। ফলে একটু পরেই আবার চিপস–বিস্কুট খোঁজাখুঁজি করতে হয় না। এগুলোতে প্রায়ই মাত্রাতিরিক্ত চিনি আর ট্র্যান্সফ্যাট থাকে। আবার প্রাণিজ আমিষ দিনে বেশি না খেলেই ভালো। ননিমুক্ত দুধ ও ডিম রাখতে হবে ডায়েটে।
৫. যথেষ্ট ঘুম যেন হয়, তা খেয়াল রাখুন
রাতে ঘুম ভালো না হলে দিনটাই মাটি হয়। আর রাতজাগা পাখিদের জন্য দুঃসংবাদ হলো, এতে পেটে মেদ জমে। গবেষণা বলে, দিনে অন্তত পাঁচ ঘণ্টা ঠিকঠাক ঘুম না হলে ভিসেরাল ও সাবকিউটেনিয়াস—দুই ধরনের চর্বিই বাড়ে৷ ফলে পেটে যেমন মেদ জমে, তেমনি রক্তের কোলেস্টেরল বা লিভারের ফ্যাটও বৃদ্ধি পায়।
আর তা ঘটতে পারে ৪০ হওয়ার আগেই। চর্বি জমার সঙ্গে সঙ্গে অপর্যাপ্ত ঘুম ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায়৷ তাই পেটের মেদ কমাতে রাতে পর্যাপ্ত ঘুমান।
তথ্যসূত্র: ফোর্বস হেলথ
ছবি: পেকজেলস ডট কম