সুস্থ জীবনের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে সাতসকালে ঘুম থেকে উঠেই চা-কফি পান করার মতো অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো ত্যাগ না করে উপায় নেই। অথচ চা-কফির নেশা থাকলে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ ক্যাফেইনের ডোজ না পেলে যেন সকালই হতে চায় না। অনেকে তো নিয়ে বসেন পেল্লাই সাইজের মগ। এমনিতে চা-কফির অবশ্য রয়েছে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগুণ। তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরে ক্ষতি ডেকে আনে। সঙ্গে যদি দুধ-চিনি, ক্রিম আর ক্যাফে কালচার মেনে বিভিন্ন ফ্লেভার দেওয়া থাকে, তবে তা হতে পারে আরও ক্ষতিকর। আবার লিভার, কিডনি ও পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যায় ক্যাফেইন গ্রহণ সীমিত বা বন্ধ করার প্রয়োজন পড়ে। কেউ কেউ শরীরকে সম্পূর্ণ ডিটক্স ইফেক্ট দিতে ও আরও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের আশায়ও চা-কফি ছাড়তে চান। কিন্তু বাদ সাধে বহুদিনের অভ্যাস।
চা-কফি পান করলে শরীরে যে এক চনমনে ভাব জাগে, সেটার বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে তখন। তবে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনলে চা-কফি ছাড়লেও দেহ-মন থাকবে প্রাণশক্তিতে ভরপুর।
ক্যাফেইন আসলে প্রাকৃতিক স্টিমুল্যান্ট হিসেবে কাজ করে। মস্তিষ্কে ক্লান্তির অনুভূতি জাগানোর জন্য দায়ী অ্যাডেনোসিন নামের নিউরোট্রান্সমিটারের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে ক্যাফেইন—এমন প্রমাণ মিলেছে অনেক গবেষণায়। ক্যাফেইন ছাড়লে তাই শরীরে ক্লান্তি ভর করতে পারে সহজেই। আর মন তো শরীরেরই আয়না। তাই এ অবস্থা এড়াতে নিতে হবে কিছু বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ।
উচ্চ আমিষযুক্ত খাবারগুলো সকালের নাশতায় রাখলে তা শরীরে স্থিতিশীল শক্তির ভান্ডার হিসেবে কাজ করে। হজমে সময় নেয় বলে প্রোটিন শক্তি দেয় অপেক্ষাকৃত বেশি সময় ধরে। নাশতায় ডাল, বিনস, তোফু বা ডিম, দুধ, ছানা রাখা যায়। লাল আটার রুটির সঙ্গে মুরগির মাংস রাখলেও তা দারুণ কাজ করবে।
খাবার ছাড়াও শরীরে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি। নিয়মিত ও অতিরিক্ত চা-কফি পান করলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক, যেমন ডাবের পানি, হারবাল চা, স্মুদি, মিল্কশেক ইত্যাদি পান করতে হবে পানির সঙ্গে সঙ্গে। পানিসমৃদ্ধ খাবার, বিশেষ করে রসাল ফল ও সবজি রাখতে হবে দিনের খাদ্যতালিকায়।
খাবার থেকে রক্তে শোষিত সরল চিনি–গ্লুকোজ শরীরের প্রতিটি কোষে শক্তির সঞ্চার করে। রক্তে সুগার মাত্রাতিরিক্ত কম থাকলে শক্তিহীন বোধ হয়। আবার রক্তে চিনির আধিক্য থাকলেও শরীর খুব ক্লান্ত লাগে যখন-তখন। তৎক্ষণাৎ শক্তি মিললেও চিনিযুক্ত খাবার ও পানি আখেরে সেই ক্লান্তির দিকেই নিয়ে যায় দেহ-মনকে। তাই জটিল শর্করা ও লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। হোলগ্রেন আটা, লাল চাল, খেজুর ইত্যাদি রাখতে হবে ডায়েটে।
ব্যায়ামে হৃৎস্পন্দন বাড়ে, রক্তের প্রবাহ থাকে সচল। সেই সঙ্গে এন্ডোরফিন আর ডোপামিন নিঃসরণ বৃদ্ধি হয়। এতে শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মনেও আসবে গতিশীলতা আর ফুরফুরে ভাব। আর এ জন্য দিনের শুরুতেই জড়তা কাটিয়ে ফেলা যায় ব্যায়াম করে।
রোদের সংস্পর্শ, সবুজের সমারোহ, খালি পায়ে ঘাসে হাঁটা শরীর ও মন সতেজ রাখার পথ প্রকৃতির মধ্যেই রয়েছে। ভোরের সূর্যালোকে কিছু সময় কাটালে তা অনেকটা সহায়ক হয় চা-কফির নেশা কাটাতে। ভিটামিন ডির প্রাত্যহিক চাহিদাও এতে যাবে মিটে। মুখে পানির ঝাপটাও দারুণ কাজ করে তরতাজা অনুভূতি দিতে।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন
ছবি: পেকজেলসডটকম