বহুদিন ধরে ক্লান্তি যেন বেড়েই চলেছে। আবার হাতে-পায়ে ব্যথা করে প্রায়ই। মুড সুইং হয় অকারণে। কারও কারও বুক ধড়ফড় করে শুয়ে-বসে থাকলেও। এমন সব লক্ষণের কোনো কোনোটি মিলে যেতে পারে আপনার সঙ্গে। আর এমন সব শারীরিক অস্বস্তি ও কষ্টদায়ক লক্ষণ যদি দিনের পর দিন থাকে বা বাড়তে থাকে, তবে অবশ্যই খেয়াল করতে হবে আপনার শরীরে কোনো বিশেষ খাদ্যোপাদানের অভাব ঘটছে কি না।
অবাক হওয়ার মতো বিষয় হলো, ভিটামিন-ডির অভাবে হতাশা ও দুশ্চিন্তা ভর করতে পারে, আবার ক্যালসিয়ামের অভাবে হৃৎস্পন্দনের গতিপ্রকৃতি ব্যাহত হতে পারে। অথচ ব্যাপারটি পাশ কাটিয়ে হয়তো আমরা সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং আর হৃদ্রোগের চিকিৎসা নেওয়ার কথা ভাবছি। যেকোনো লক্ষণই চিকিৎসকের কাছে জানিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে কোন খাদ্য উপাদানের অভাবে কী কী ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়, একনজরে জেনে নিলে তা আমাদের জন্য একটি গাইডলাইন হিসেবে কাজে লাগতে পারে।
ভিটামিন আর মিনারেল–জাতীয় খাদ্য উপাদানগুলোর কাজ আসলে বহুমুখী। প্রতিটিই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই দিনের পর দিন এটির কোনো একটির অভাব ঘটলে শরীর তা জানান দেয় নানাভাবে। আর এ রকম কিছু লক্ষণ জানা থাকলে এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায়। ফলে অনেক রোগ ও স্থায়ী শারীরিক সমস্যা থেকে বাঁচা যায়। এবার কোন খাদ্য উপাদানের অভাবে কী লক্ষণ দেখা দেয়, তা জেনে নেওয়া যাক।
১. ক্যালসিয়াম
হাত-পা অসাড় হয়ে আসা, বারবার ঝিঁঝি ধরা, অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন ও সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগা—এগুলো শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির লক্ষণ। দীর্ঘস্থায়ী ক্যালসিয়ামের অভাবে অস্টিওপোরোসিস এবং অস্টিওপেনিয়া হতে পারে। পাশাপাশি বুকে ব্যথা, পেশির টান ধরা, ভঙ্গুর নখ, শুষ্ক ত্বক আর দাঁতের ক্ষয়ও হতে পারে। হাড় মজবুত রাখতে এবং পেশি ও স্নায়ুর কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে ক্যালসিয়ামের গুরুত্ব তো সবাই জানেন। গবেষকদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত, আর ৫০–এর বেশি বয়সের মানুষের জন্য ১ হাজার ২০০ মিলিগ্রাম। দুধ ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে ভালো উৎস।
২. ভিটামিন-ডি
ভিটামিন-ডির অভাব থেকে দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি ভর করতে পারে শরীরে। পাশাপাশি হাড়ে ব্যথা, ঘন ঘন মুড পরিবর্তন ও পেশি দুর্বলতাও ইঙ্গিত দেয় শরীরে ভিটামিন-ডির ঘাটতির। ভিটামিন-ডির দীর্ঘস্থায়ী অভাবে হাড় ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে। ভিটামিন-ডির জন্য দৈনিক ১৫ থেকে ২০ মিনিট রোদে কাটানো উচিত। এতে ত্বক প্রাকৃতিকভাবেই ভিটামিন-ডি তৈরি করতে পারে।
৩. পটাশিয়াম
পেশির দুর্বলতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন জানান দেয় শরীরে পটাশিয়াম অভাব হচ্ছে। অতিরিক্ত ঘাম, ডায়রিয়া বা বমি হলে শরীরে পটাশিয়াম ঘাটতি দেখা দেয়।
পটাশিয়াম আমাদের হৃদ্যন্ত্র, স্নায়ু ও পেশিগুলোকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে এবং কোষগুলোতে পুষ্টি সরবরাহ করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও এর ভূমিকা অপরিসীম। কলা, ডাব ও দুধ পটাশিয়ামের ভালো প্রাকৃতিক উৎস।
৪. আয়রন
ক্লান্তি, ভঙ্গুর নখ, শ্বাসকষ্ট ও সব সময় ঠান্ডা হয়ে থাকা হাত আভাস দেয় শরীরে আয়রন ঘাটতির। লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে আয়রন প্রয়োজন। লোহিত কণিকার অভাবে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। আর রক্তস্বল্পতা থেকে ক্লান্তি, অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন, ফ্যাকাশে ত্বক ও ভঙ্গুর নখের মতো লক্ষণ দেখা দেয়। প্রথম দিকে এসব লক্ষণ। মৃদু হলেও সঠিক পদক্ষেপ না নিলে সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে গুরুতর হয়ে ওঠে।
৫. ম্যাগনেশিয়াম
দেহে শক্তি উৎপাদনে ম্যাগনেশিয়াম কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাই ম্যাগনেশিয়ামের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া ম্যাগনেশিয়ামের অভাব হলে ক্ষুধা কমে যায় ও বমি বমি ভাব হতে পারে। কাঠবাদাম, চিনাবাদাম এ ক্ষেত্রে আপনার ভালো বন্ধু হতে পারে।
প্রাথমিকভাবে এসব লক্ষণ খুব কষ্টকর না হলেও ধীরে ধীরে এগুলো আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে পারে। তাই দীর্ঘদিন এসব লক্ষণ থাকলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন