অনেকেরই এমন হয়, ঘুমাতে গেছেন, অনেক ক্লান্ত; কিন্তু মাথায় ঘুরছে আগামীকাল সকালের মিটিং প্রেজেন্টেশন। এই ঘটনাগুলো নিশ্চয়ই সবার সঙ্গেই ঘটে। আবার আপনার আগামীকাল সকালে একটি মিটিং আছে বা বড় কোনো প্রজেক্টের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন, এই ভাবনায় সারা রাত কাটিয়ে দিলেন পরিকল্পনা করে। পরিপূর্ণ ঘুম তো হলোই না, স্বপ্নেও সেই বিষয়গুলোই এল অবচেতনেই, এর প্রভাব কি পরদিন মিটিংয়ে পড়বে না? একটু ভালো করে ভেবে দেখুন তো, এতে লাভ হচ্ছে নাকি ক্ষতি? এভাবে দিনের পর দিন অফিসের পরও অফিস নিয়ে ভাবলে আপনার যে ক্ষতিগুলো হবে, সেগুলো ভেবে দেখতে হবে আমাদেরকে। প্রথমত, কর্মক্ষমতা তো হারাচ্ছেনই আপনি, পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাও ব্যহত হচ্ছে। কেউ যদি মনে করেন, ২৪ ঘণ্টা কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কর্মস্পৃহা বাড়ায় বা টিমের সদস্যদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করে, তাহলে তা নিঃসন্দেহে বোকামি ছাড়া কিছু নয়। সম্প্রতি জার্নাল অব অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণামতে, ক্রমাগত কাজ সম্পর্কে চিন্তা করা নেতা হিসেবে আপনার কর্মক্ষমতাকে বৃদ্ধি করার পরিবর্তে হ্রাস করতে পারে।
কীভাবে ঘরে–বাইরে ভারসাম্য বজায় রাখবেন, আসুন বের করি তার কিছু উপায়—
কীভাবে অফিসের পর কাজ থেকে আলাদা হওয়া যায়, সে পথ খুঁজে নিতে হবে আপনাকেই। আমাদের দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ট্রেন্ড হলো, সপ্তাহে ৭ দিন, ২৪ ঘণ্টা কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা আর টিমের সবাইকেও ব্যতিব্যস্ত রাখা। এতে করে নিজের কর্মক্ষমতা তো হারানই, পাশাপাশি সহকর্মীরাও তিক্ত হন। কাজ জীবনের অংশ, কাজই জীবন নয়। অফিসের কর্মঘণ্টাগুলোর যথাযথ ব্যবহার করুন আর যদি একেবারেই সম্ভব না হয়, কারও সাহায্য নিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করুন। কিন্তু অফিস ঘরে আনবেন না।
পরিবারকে সময় দিন, নিজের ও কাছের মানুষের শখ পূরণ করুন। এখন সময় নেই, পরে সময় থাকলেও শখ থাকবে না।
মস্তিষ্কেরও একটি ধারণক্ষমতা আছে। সারাক্ষণ তাকে চাপ দিলেই যে ভালো ফল আসবে, তা কিন্তু নয়, সেও ছুটি চায়। কাজের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ যে আপনাকে নিমেষেই উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেবে, তা–ও কিন্তু নয়। আপনি যদি দলনেতা হয়ে থাকেন, তাহলে নিজেকে প্রমাণ করুন অফিস সময়ের মধ্যেই। টিম মেম্বারদের অতিরিক্ত সময় অফিস করিয়ে সময়জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় না নেমে বিরতি নিন। নিজেকে রিচার্জ করে পুনরায় শুরু করুন। টানা কাজ না করে নির্দিষ্ট সময়ে থামতে শিখুন, তাহলেই কাজের গতি বাড়বে দ্বিগুণ।
শেষ সময়ের জন্য কোনো কাজ জমিয়ে রাখবেন না। আপনি যদি জানেন যে কাজ মাসের ৩০ তারিখে করতে হবে, সেটা শেষ করুন ২৭ তারিখের মধ্যেই। তাহলে অতিরিক্ত সময় কাজ করার কোনো চাপ তো থাকবেই না, বরং আপনি কাজটি আরও সুন্দর ও গুছিয়ে দিতে পারবেন, মানসিক শান্তি থাকবে।
কাজের ক্ষেত্রে সবার আগে প্রাধান্য দিন কৌশলী হওয়াকে। যে যত বেশি কৌশলী, তাঁর টিমের উন্নতি ততই বেশি। বেশি সময় কাজ না করে কৌশলে অল্প সময়ে কাজ করার ক্ষমতা থাকা জরুরি। কাজের চাপ কম থাকলে হুটহাট বেরিয়ে পড়ুন। কিংবা অফিস শেষে প্রিয়জনকে ডেকে নিন। কিছুক্ষণ হাঁটুন সোডিয়ামের আলোতে বা খালি পায়ে ঘাসের ওপরে। ছোট ছোট এই কাজগুলো আপনাকে কতটা উজ্জীবিত করতে পারে, বিশ্বাস না হলে একদিন করেই দেখুন।
অফিসের কর্মঘণ্টা শেষে কম্পিউটারের পাশাপাশি শাটডাউন করে দিন আপনার মস্তিষ্ককেও। কাজের বাইরে যে জীবন আছে, সেটাকেও উপভোগ করতে শিখুন; যেন অবহেলায়, অগোচরে হারিয়ে না যায় সোনালি সময়।
ছবি: পেকজেলসডটকম