প্রাচীনকাল থেকেই সর্দি-কাশি সারাতে নানা ঘরোয়া টোটকা ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে আমাদের ঘরে ঘরে। সর্দি-কাশি হলে তুলসি পাতার রস, মধু ও লেবুর রস খাওয়ানো থেকে শুরু করে হাত, পা ও বুকে শর্ষের তেল গরম করে মালিশ করতেন মা আর দাদি-নানিরা। এখন অবশ্য যুগ বদলেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতিও হয়েছে বেশ। ঠান্ডা লাগলে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ টুক করে খেয়ে নিই আমরা। কিন্তু এখন ঋতুর পালাবদলে ঘরে ঘরে ঠান্ডা কিংবা জ্বরে ভুগছেন সবাই। ভাইরাল জ্বরের ক্ষেত্রে ওষুধেও আরাম মেলে না তেমন। বরং রোগ উপশম করতে না পারলেও ওষুধের পাশাপাশি ঘরোয়া কিছু উষ্ণ স্বাস্থ্যকর পানীয় আপনাকে আরাম দিতে পারে অনেকটা।
বহুকাল ধরে কাশি ও গলার ব্যথা প্রশমনে মধু খাওয়ার চল রয়েছে। মধু ঘনত্বে ভারী হওয়ায় গলার রিসেপ্টরগুলোতে একটি ভারী আবরণ তৈরি করে ফেলে, যা গলায় খুশখুশানি ভাব কমিয়ে আনে। এতে কাশি কম হয়। এ ছাড়া মধুতে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্টস গলার প্রদাহ কমিয়ে আনে। গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খেলে সর্দি–কাশির সময় গলায় আরাম পাওয়া যায়, বুকে জমাট ভাব কমে আসে এবং কফ বা মিউকাস উৎপাদনও হ্রাস পায়।
ওজন কমাতে গ্রিন টি বেশ জনপ্রিয় একটি পানীয়। গণমাধ্যমে বাহারি বিজ্ঞাপনে গ্রিন টির এই গুণ বেশ ফলাও করে জানানো হয়। তবে গ্রিন টির আরও নানা গুণ রয়েছে। এই পানীয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ফুসফুসের শক্তি বাড়াতে গ্রিন টি বেশ উপকারী। দিনে দুই কাপ এই পানীয় পান করতে পারলে তা ফুসফুস ও ত্বক দুটোকেই সুস্থ রাখবে।
চায়ের কদর বোঝেন না এমন বাঙালির দেখা মেলা ভার। একটু চা-পাতা, একটু চিনি, একটু দুধ—ব্যস তিনে মিলে বাঙালির মন জয়ের অস্ত্র তৈরি হয়। শুধু কি দুধ চা? মসলা চা, রং চা—কত না ধরন। এর মধ্যে মসলা চায়ের ঔষধি গুণের কথা যুগে যুগে মানুষ স্বীকার করে আসছেন। আদা, লবঙ্গ, দারুচিনি, এলাচি, তুলসি ও পুদিনা পাতা—এ সবকিছুরই রয়েছে ঔষধি গুণ। তাই জেদি সর্দি-কাশি সারাতে মসলা চায়ের জুড়ি মেলা ভার। এমনকি এমনিতেও বৃষ্টিময় বিকেলের শীত শীত আবহাওয়ায় এক কাপ মসলা চা আপনাকে রাখবে ভেতর থেকে চনমনে।
ঔষধি গুণ বিচারে আদা ও হলুদের স্থান বেশ ওপরের স্তরে। কাটাছেঁড়া ও আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে হলুদ বাটা প্রয়োগ করা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। সর্দি-কাশিতে হলুদ মেশানো দুধ খেয়ে থাকেন অনেকে। আদাতেও রয়েছে একই গুণাবলি। তাই পানিতে অল্প আদা ও হলুদ ফুটিয়ে নিয়ে তাতে সামান্য মধু যোগ করে পান করলে তা ফুসফুসকে তো পরিষ্কার করবেই, পাশাপাশি গলার অস্বস্তি থেকেও মুক্তি দেবে।
ছবি: পেকজেলসডটকম