প্রতিদিন সকালে উঠেই কি আপনার মাথাব্যথা করে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

সকাল মানেই নতুন দিন, কাজের জন্য নব উদ্দীপনা। কিন্তু সকালটাই যদি শুরু হয় মাথাব্যথা নিয়ে, তবে পুরো দিনটাই যেন মাটি হয়ে যায়। এতে দিন বাড়তে বাড়তে শরীর হয়ে যায় ক্লান্ত আর মেজাজও হয়ে যায় খিটখিটে। সব মিলিয়ে পুরো দিনেরই কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। আসলে বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা হয়ে থাকে আমাদের।

‘মাইগ্রেন’ আর ‘টেনশন টাইপ’ খুব পরিচিত দুটি নাম এ ক্ষেত্রে। তা ছাড়াও ক্লাস্টার হেডেক, হিপনিক হেডেক, প্যারোক্সিমাল হেমিক্র্যানিয়াসহ বিভিন্ন নামের মাথাব্যথা হয়। কিন্তু রোজ সকালে উঠেই যদি মাথাব্যথা করে, তবে তা অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এ রকম নিয়মিত মাথাব্যথা হওয়ার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ জেনে নিই চলুন।

বিজ্ঞাপন

অনিদ্রা

রাতের ঘুম সবার জন্য আবশ্যক। কারণ, এতে মাথাসহ পুরো শরীরের ক্লান্তি দূর হয়, নতুন দিনের কাজ করার শক্তি পায় শরীর। কিন্তু রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে মাথাব্যথা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠার বেশ সম্ভাবনা থাকে। যাঁরা দীর্ঘদিন যাবৎ নিদ্রাহীনতায় ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এ রকম মাথাব্যথা খুব নিয়মিত ঘটনা। সকালের মাথাব্যথা দূর করতে তাই রাতের ঘুম ঠিক করতে হবে। ব্যথানাশক ওষুধের চেয়েও ছয় থেকে আট ঘণ্টার একটি ভালো ঘুম এ ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

অতিরিক্ত ঘুম

মাথাব্যথা থেকে বাঁচতে বেশি বেশি ঘুমাবেন ভাবলেও ভুল করছেন। কারণ, অনিদ্রা যেমন শরীরের জন্য ভালো নয়, তেমনই অতিরিক্ত ঘুমও ভালো নয়। মানুষ, উদ্ভিদসহ প্রাণ আছে এমন সবার দেহ আলো ও অন্ধকার ভেদে ভিন্নভাবে সাড়া দেয়। আলো তো রয়েছে নাকি অন্ধকারে, সে অনুযায়ী আমাদের শারীরিক ও মানসিক সবকিছুর পরিবর্তন চক্রাকারে হতে থাকে। ২৪ ঘণ্টার এই চক্রকে বলা হয় সার্কেডিয়ান ছন্দ। অতিরিক্ত ঘুম প্রাকৃতিক এই সার্কেডিয়ান ছন্দে ব্যাঘাত ঘটায় এবং নিয়মিত ঘুমের সাইকেলকে ব্যাহত করে।

দুশ্চিন্তা

হতাশা ও উদ্বেগ মাইগ্রেনের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। তা ছাড়া কোনো কিছু নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করলে কিংবা হতাশায় ভুগলেও রাতে সহজে ঘুম আসতে চায় না। কম ঘুম ও খারাপ মুডের সঙ্গে মাইগ্রেনের সরাসরি যোগসূত্র আছে। মাইগ্রেন রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষণা বলছে, মাইগ্রেনের ব্যথায় নারীরাই বেশি ভোগেন। মাইগ্রেনের আক্রমণ কমাতে পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক সুস্থতার কোনো বিকল্প নেই।

বিজ্ঞাপন

স্লিপ অ্যাপনিয়া

ঘুমের সময় শ্বাসনালি বাধাগ্রস্ত হয়ে নাক ডাকা ও ঘুম কম হওয়ার সমস্যাকে চিকিৎসাশাস্ত্রে স্লিপ অ্যাপনিয়া বলা হয়। ঘুমন্ত অবস্থায় নাক ডাকা, শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়ায় ঘুম অপূর্ণ থেকে যায়। ফলে সকালে ওঠা হয় মাথাব্যথা নিয়ে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই সমস্যা সমাধানের উপায় হলো জীবনধারায় পরিবর্তন আনা, যেমন ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ধূমপান পরিহার করা।

পানিশূন্যতা

রাতে দীর্ঘ সময় পানি পান না করায় শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। আর শরীরে যখন পানিশূন্যতা তৈরি হয়, তখন আপনার মস্তিষ্ক শরীরের অন্যান্য পেশির মতো সংকুচিত হয়ে যায়। এই সংকোচনের সঙ্গে সঙ্গে তা মাথার খুলি ও স্নায়ুতেও চাপ সৃষ্টি করে। এতে মাথাব্যথা শুরু হয়। তাই রাতে ঘুমানোর আগে পর্যাপ্ত পানি পান করে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে হবে।

সকালে মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেতে এসব ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। তবে যদি মাথাব্যথা নিয়মিত আপনাকে ভোগাতে থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ। শরীরের অস্বাভাবিক লক্ষণগুলো কখনোই এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। এতে দীর্ঘমেয়াদি রোগ বাসা বাঁধতে পারে আপনার শরীরে।

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন