ডাব কি খেতেই হবে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

ডেঙ্গুর প্রকোপে দেশের মানুষ দিশাহারা। করোনার পর এসেছে এ রোগ আরেক মহামারি হয়ে। ডেঙ্গু হলে সবচেয়ে ভয়াবহ যে ব্যাপারটি হয়, সেটা হলো শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যাওয়া এবং শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স অর্থাৎ সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ব্যালেন্স ঠিক রাখা খুব জরুরি।

দেখা যায়, আমরা ডেঙ্গু, যেকোনো জ্বর কিংবা পাতলা পায়খানা হলেই ডাবের পানি পান করি। এ কথা ঠিক যে ডাবের পানিতে প্রাকৃতিকভাবে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি হওয়ায় তা পথ্য হিসেবে ভালো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, একসময়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া ডাব ১০০ এমনকি ৪ গুণ দামে ২০০ টাকায়ও বিক্রি করেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পথ্য হিসেবে ডাব কি খেতেই হবে এই দুর্মূল্যের বাজারে? নাকি অন্য কোনো সহজলভ্য সমাধান আছে?

বিজ্ঞাপন

উত্তর বললে হয়তো চমকে যাবেন অনেকেই। ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রাখার জন্য ডাবের পানি একটি ভালো পথ্য হলেও এর থেকে সস্তা ও সহজলভ্য সমাধান আমাদের হাতের কাছে আছে, সেটা হচ্ছে খাওয়ার স্যালাইন।

ডাবের পানির পুষ্টিগুণের দিকে যদি আমরা তাকাই, তাহলে দেখা যাবে একটা মাঝারি সাইজের ডাবে (২৫০ মিলি পানি) সোডিয়াম থাকে ২৫২ মিলিগ্রাম ও পটাশিয়াম থাকে ৬০০ মিলিগ্রাম। অপর দিকে একটি খাওয়ার স্যালাইনের প্রতি প্যাকেটে সোডিয়াম থাকে ১৩০ মিলিগ্রাম ও পটাশিয়াম থাকে ৭৫ মিলিগ্রাম। সঙ্গে আরও একটি উপাদান থাকে, সেটা হলো গ্লুকোজ। স্যালাইনে থাকা গ্লুকোজ ইলেক্ট্রোলাইটকে কোষের ভেতরে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞাপন

আপাতদৃষ্টে ডাবের পানিতে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি দেখা গেলেও খাওয়ার স্যালাইন কিন্তু একজন মানুষের ইলেক্ট্রোলাইটের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই বানানো হয়। পেট খারাপ, বমি, পাতলা পায়খানা বা ডেঙ্গুর প্রতিক্রিয়ায় পানিশূন্যতা রুখতে আর ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রাখতে উৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে ওরস্যালাইন।

এ ছাড়াও ডাবের পানিতে থাকা উচ্চ মাত্রার মুক্ত পটাশিয়াম কখনো কখনো রোগীর পালস রেট বা হৃৎস্পন্দন কমিয়ে দিতে পারে। তাতে উল্টো বিপদ ঘটার আশঙ্কা থাকে।
এ কথা বলা যাবে না যে ডাবের পানি খারাপ বা ডাব খাওয়া যাবে না। তবে হাতের কাছে ১০ টাকায় পাওয়া খাওয়ার স্যালাইন যদি আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো সমাধান হয়, তাহলে কেন আমরা ২০০ টাকা দিয়ে ডাব কিনতে যাব, বলুন তো?

লেখক: পুষ্টিবিদ, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬: ০০
বিজ্ঞাপন