চা শুধু আপনার মনকেই চনমনে রাখে না, পাশাপাশি এর রয়েছে নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা। সম্প্রতি একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতিদিন চা পান করার অভ্যাস আপনার বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। এর ফলে আপনি পেতে পারেন দীর্ঘজীবন। দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ-ওয়েস্টার্ন প্যাসিফিক জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণামতে, প্রতিদিন প্রায় তিন কাপ চা বা ছয় থেকে আট গ্রাম চা–পাতা গ্রহণ করলে আপনার বয়স খুব ধীরগতিতে বৃদ্ধি পায়।
চীনের চেংদুতে অবস্থিত সিচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা দুটি দলের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষকেরা এই অ্যান্টি-এজিং প্রক্রিয়ার জন্য চায়ে বিদ্যমান বায়ো–অ্যাকটিভ পদার্থ হিসেবে পলিফেনলসের ভূমিকা নিশ্চিত করেছেন, যা অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে।
কোন চা এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে, তা এখনো নির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। তবে ব্ল্যাক টি, গ্রিন টি, হোয়াইট টি এবং ওলং চা—সবগুলোই একই গোত্রের উদ্ভিদ থেকে আগত। এ ধরনের সব চা-ই অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর, যা ত্বকের কোষগুলো ভালো রাখতে সহায়তা করে থাকে। এ ছাড়া ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগের মতো গুরুতর সমস্যা থেকেও দূরে রাখে চা।
চলুন এই চার ধরনের চা এবং এগুলো কীভাবে বয়স ধরে রাখতে সহায়তা করে, সে সম্পর্কে জেনে নিই—
১.গ্রিন টি
বিশ্বজুড়েই গ্রিন টি নানা ধরনের স্বাস্থ্যগুণের জন্য সমাদৃত। গ্রিন টি সাধারণত ব্ল্যাক কিংবা ওলং টি-এর মতো গাঁজনপ্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায় না, তাই এটিতে বেশির ভাগ প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও পলিফেনল সঠিকভাবে বজায় থাকে। গ্রিন টি-তে থাকে ক্যাটচিন, যা একধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটিই মূলত বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে ধীর করে এবং বয়স ধরে রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া গ্রিন টি-এর রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য উপকারিতা। যেমন এই চা ওজন কমাতে সহায়তা করে, ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতেও গ্রিন টি-র কোনো জুড়ি নেই। তাই সুস্থতা বজায় রাখতে এবং বয়স ধরে রাখতে খুব সহজেই বেছে নিতে পারেন গ্রিন টি।
২. ব্ল্যাক টি
বিশ্বে পানির পরই ব্ল্যাক টি সবচেয়ে বেশি পান করা হয়। ব্ল্যাক টি কড়া স্বাদের জন্য সুপরিচিত। এই চা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি, স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটিতে ফ্ল্যাভোনয়েডস নামক যৌগের পরিমাণ বেশি থাকে, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়।
৩. হোয়াইট টি
চীন, বিশেষত ফুজিয়ান প্রদেশ থেকে উদ্ভূত, হোয়াইট টি এর স্বাস্থ্য উপকারিতা ও মৃদু স্বাদের জন্য আন্তর্জাতিক প্রশংসা অর্জন করেছে।
হোয়াইট টি-তে বিদ্যমান অ্যান্টি–অক্সিডেন্টগুলো ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজ করে। সেই সঙ্গে হৃদ্রোগের ঝুঁকি হ্রাস ও ওজন হ্রাস করতেও সহায়তা করে। ব্ল্যাক ও গ্রিন টি-এর তুলনায় এটিতে ক্যাফেইনের মাত্রাও কম থাকে। তাই যাঁরা অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করতে চান না, তাঁদের পছন্দের তালিকায় খুব সহজেই জায়গা করে নিতে পারে হোয়াইট টি।
৪. ওলং চা
ওলং চা মূলত এর স্বাদ ও সুঘ্রাণের জন্য বেশি জনপ্রিয়। এ ছাড়া এই চায়ের রয়েছে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতাও। ওলং চা বিপাকপ্রক্রিয়া ভালো রাখতে এবং ওজন হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও এই চায়ের জুড়ি নেই।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন
হিরো ইমেজ: আইশা খানের ইন্সটাগ্রাম
ছবি: পেকজেলস ডট কম