শাকসবজি–ফলমূল থেকে সর্বোচ্চ পুষ্টিগুণ পেতে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী বিগত ২০০ বছরে পৃথিবীর জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ। একই সঙ্গে ক্রমশ বেড়েছে খাদ্যের চাহিদা। ইউএসএফডিএর জার্নাল থেকে জানা যায়, আমরা যেসব খাবার খাচ্ছি, সেগুলোর অধিকাংশই জেনেটিক্যালি মোডিফায়েড ও অধিক প্রক্রিয়াজাত। পাশাপাশি অজ্ঞতা বা অনবধানতাবশত আমরা যথাযথ পুষ্টি উপাদান থেকে বঞ্চিত হই। মূলত পুষ্টিমানের চেয়ে খাবারের স্বাদ, গন্ধ ও সৌন্দর্যকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। এর ফলে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস পায়, শরীরে বাসা বাঁধে নানা রোগ। তাই কীভাবে আমরা শাকসবজি ও ফলমূল থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ পুষ্টিগুণ পেতে পারি, সে বিষয়ে জেনে নেওয়া যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

তাজা ফলমূল ও শাকসবজি সংগ্রহ

ফলমূল ও শাকসবজি যখন কাণ্ড বা মূল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, তখন সেগুলো তাদের পুষ্টির উৎস হারায়। যত দিন যায়, তত পুষ্টিগুণ হ্রাস পেতে থাকে। পরিবহন, কাটাকাটি, ধোয়া, রান্না, পরিবেশন—ইত্যাদি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আসতে আসতে শাকসবজিতে বিদ্যমান ভিটামিন, মিনারেলস ও অন্যান্য জৈব যৌগ ১৫-৫৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়, তাই সর্বাধিক পুষ্টি উপাদান পেতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, খেয়ে নেওয়া উচিত। কেনার সময় দেখেশুনে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে কিনতে হবে। থেঁতলানো কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমন ফল বা সবজি কেনা উচিত নয়।

বিজ্ঞাপন

কেনার সময় আলাদা রাখা

আমরা সাধারণত বাজারে গেলে মাছ-মাংস, শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি একসঙ্গে কিনে আনার চেষ্টা করি। এতে দোষের কিছু নেই, তবে আনার সময় এমনভাবে প্যাকেট করতে হবে, যাতে শাকসবজি বা ফল কোনভাবেই মাছ-মাংসের সংস্পর্শে না আসে; কারণ, মাছ-মাংস থেকে দ্রুত জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ছোট অপেক্ষা বড় টুকরা ভালো

ফলমূল ও শাকসবজি কুচিকুচি করে কেটে বা পিষে ফেলে মুখরোচক ভাজি-ভর্তা বানানো হয়। এতে কোষপ্রাচীর ভেঙে যায় বলে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই যত বড় টুকরা রাখা যায় কিংবা আস্ত খাওয়া যায়, ততই মঙ্গল। একই কারণে জুস না করে গোটা ফল কামড়ে খাওয়া ভালো। কারণ, আস্ত ফল থেকে আমরা পূর্ণ আঁশ বা ফাইবার পাই, যা আমাদের পাকস্থলীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অপরিহার্য। তা ছাড়া চিবানোর ফলে মানবদেহে যান্ত্রিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, যা হজমে সহায়ক।

অল্প আঁচে স্বল্প সময়ে রান্না

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি রিসার্চের গবেষণা থেকে জানা যায়, তাপ, পানি, আলো ও অক্সিজেনের প্রভাবে শাকসবজির গুণগত পরিবর্তন হয়। অধিক তাপ সব ধরনের ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ফোলেট এবং প্রাথমিকভাবে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম—ইত্যাদি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান ভেঙে ফেলে। তাই যেসব খাবারে উল্লিখিত ভিটামিন ও মিনারেলস অধিক পরিমাণে রয়েছে, সেগুলো অল্প আঁচে রান্না করাই উত্তম। যেমন সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের উৎস। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট দেহে উৎপন্ন ফ্রি রেডিক্যালসগুলোকে দূর করে শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। টমেটো, গাজর, বিট—ইত্যাদি অল্প আঁচে রান্না করলে বরং বেশি পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। কারণ, রঙিন শাকসবজিতে রয়েছে লাইকোপিন ও বিটা ক্যারোটিন, যা কিছুটা তাপসহনশীল। গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে, পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিনসহ সব ধরনের পুষ্টি সংরক্ষণের জন্য তেল-মসলা কম ব্যবহার করে ভাপে (স্টিমিং) শাকসবজি রান্না করাই সর্বোত্তম পন্থা।

খাবারে সালাদের পরিমাণ বেশি রাখা

তাজা ফলমূল, শাকসবজি, মরিচ, নানা রকম বাদাম ও তেলের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় সালাদ। যেহেতু কাঁচা ও তরতাজা খাওয়া হচ্ছে, তাই সালাদ থেকে আমরা সব ধরনের পুষ্টি উপাদান প্রয়োজনমতো পেতে পারি। তা ছাড়া ফল ও সবজি আলাদা করে খেতে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। একসঙ্গে খেতে পারলেই বরং ভালো।

যথাযথভাবে সংরক্ষণ

ফলমূল ও শাকসবজির পুষ্টিগুণ অটুট রাখতে, কিনে এনে দ্রুত ফ্রিজে রেখে দিন। ফ্রিজে রাখতে হবে বায়ুনিরোধক ফুডগ্রেড কনটেইনার অথবা উন্নতমানের পলিব্যাগে, যাতে এক খাবার অন্য খাবারের সংস্পর্শে না আসে। ফ্রিজে রাখা না গেলে তুলনামূলক ঠান্ডা স্থানে ও আলো থেকে দূরে রাখুন। তা ছাড়া দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে রান্না করা শাকসবজি বারবার গরম করে খাওয়ার ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

সর্বোপরি সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু লাভ করতে হলে পুষ্টিমান অক্ষুণ্ন রেখে অধিক পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল খাওয়া অপরিহার্য।

ছবি: পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন