এই ১টি নিউট্রিয়েন্ট বাঁচাবে ৬টি রোগ থেকে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

পৃথিবীর গতিশীলতা অন্যমাত্রা পেয়েছে মানুষের কর্মব্যস্ততায়। আর মানুষ চলছে তাঁর শরীরের বলে। এই শরীরকে বশে রাখতে নানা পুষ্টিকর খাবার ও ভিটামিন গ্রহণ করে থাকি আমরা। এসব পুষ্টি উপাদান কিংবা ভিটামিনের অভাবে বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ বাসা বাঁধে শরীরে। ভিটামিন ‘পি’ও এমনি একটি অত্যাবশ্যক উপাদান, যার ঘাটতিতে আর্থ্রাইটিস, রক্তনালি ফেটে যাওয়া, স্কার্ভি, দাঁত, মাড়ির সমস্যাসহ নানা রোগ দেখা দেয়। তাই প্রাত্যহিক খাবারের তালিকায় ভিটামিন পি–সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। একটু অবাক লাগছে, তাই না? ভাবছেন ভিটামিন ‘পি’ আবার কী জিনিস! চলুন, ধাপে ধাপে জেনে নেওয়া যাক কী এই ভিটামিন পি, কোথায় পাব অর্থাৎ এর উৎস ও এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে।

ভিটামিন ‘পি’ কী

ভিটামিন ‘পি’ মূলত বায়োফ্ল্যাভোনয়েডস নামক একটি রাসায়নিক গ্রুপকে নির্দেশ করে। বায়োফ্ল্যাভোনয়েডস হলো একধরনের পুষ্টি উপাদান,  যেগুলো বিভিন্নরূপে উদ্ভিজ্জ খাবারে পাওয়া যায়। প্রকৃতিতে হাজার হাজার বায়োফ্ল্যাভোনয়েডস রয়েছে। বিশেষ করে রঙিন শাকসবজি, ফলমূল, কোকো, চা ইত্যাদিতে পাওয়া যায় এই বায়োফ্ল্যাভোনয়েডস গ্রুপের পুষ্টি উপাদান। অর্থাৎ নাম শুনে অপরিচিত লাগলেও আপনি প্রতিনিয়তই গ্রহণ করছেন ভিটামিন পি।  

বিজ্ঞাপন

১। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাগুণ

বায়োফ্ল্যাভোনয়েডসের একটি প্রধান গুণ হলো এর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট গুণ। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকায় এটি মানবদেহের কোষগুলোর ক্ষয়পূরণে ভূমিকা পালন করে। কোষ গঠনের কার্যকরী উপাদান হিসেবেও কাজ করে তা। পাশাপাশি হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস এমনকি ক্যানসারের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

২। প্রদাহরোধে ভূমিকা

আর্থ্রাইটিসের ব্যথা, পেশিতে ব্যথাসহ বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা ও লাল হয়ে থাকা প্রতিরোধে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহরোধী ওষুধ ব্যবহার করা হয়। শরীরের এসব প্রদাহ নিরাময়ে কাজ করে বিভিন্ন ধরনের বায়োফ্ল্যাভোনয়েডস। সহজ ভাষায়, ভিটামিন পি ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে৷

৩। হৃদ্‌তন্ত্রের স্বাস্থ্যরক্ষা

গবেষণায় দেখা গেছে, বায়োফ্ল্যাভোনয়েডস-এর কোয়ারসেটিন নামের যৌগটি রক্তনালির কার্যকারিতা উন্নত করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে,  মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে কোলেস্টেরল বিপাকে সাহায্য করে। ভিটামিন পি–সমৃদ্ধ খাবার খেলে তাই হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমে যায়।  

বিজ্ঞাপন

৪। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি

প্রাচীনকাল থেকেই রোগ প্রতিরোধে আমরা ফলমূল খেয়ে থাকি। এটা খুব নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হলেও এর বৈজ্ঞানিক কারণ আছে। ফলমূলে থাকা বায়োফ্ল্যাভোনয়েডস আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায় এবং শরীরকে নানা সংক্রমণ থেকে বাঁচায়।  

৫। অ্যালার্জি প্রতিরোধ

যাঁরা অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় কাবু, তাঁদের বন্ধু হতে পারে ভিটামিন পি। বায়োফ্ল্যাভোনয়েডসের কোয়ারসেটিন যৌগটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, অ্যালার্জি উৎপাদনকারী কোষগুলোকে স্থিতিশীল করা। আপেল, পেঁয়াজ, চায়ে থাকে এই বায়োফ্ল্যাভোনয়েডস।

৬। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ

বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিবেদন অনুযায়ী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ভিটামিন পি। বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ রক্তের গ্লুকোজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।  সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে, প্রাকৃতিক বায়োফ্ল্যাভোনয়েডস যকৃতের গ্লুকোনিওজেনেসিসকে ত্বরান্বিত করে। ফলে রক্তে সুগার লেভেল সঠিক রাখতে সাহায্য করে ভিটামিন পি।

কোন ধরনের খাবারে রয়েছে ভিটামিন পি

এর উপকারিতা তো জানা গেল। এবার জেনে নেওয়া যাক এসব উপকারিতা পেতে কোন ধরনের খাবার আপনাকে সাহায্য করতে পারে। সাইট্রাস ফলগুলো ভিটামিন পি অর্থাৎ বায়োফ্ল্যাভোনয়েডসের ভালো উৎস। সাইট্রাইস ফল মানে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কমলা, মাল্টা, লেবু  ইত্যাদি। বিভিন্ন রকম বেরিজাতীয় ফল, সবুজ শাকসবজি, রঙিন ফলমূলে থাকে বায়োফ্ল্যাভোনয়েডস। তা ছাড়া গ্রিন টি, ডার্ক চকলেটেও পর্যাপ্ত ভিটামিন পি পাওয়া যায়। তবে সব সময় মাথায় রাখতে হবে, অতিরিক্ত কোনো খাবারই শরীরের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়। প্রতিদিনের আহারে পরিমিত পরিমাণে এসব খাবার খেলে তুলনামূলক বেশি সুফল পাওয়া যায়।

ছবি: পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৪, ০২: ৪০
বিজ্ঞাপন