ওভার ইটিং বা অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের অভ্যাসের কারণে বেড়ে যেতে পারে শরীরের ওজন, দেখা দিতে পারে অন্যান্য শারীরিক সমস্যা। অলস সময় বা পরিস্থিতির কারণে এমন হলে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে খাদ্যাভ্যাস। কী করে ওভার ইটিং সমস্যা থেকে সহজে মুক্তি পেতে পারেন, সেটাই বরং যেনে নেওয়া যাক।
যদি আপনি মনে করেন, প্রতিদিন নিয়মের চেয়ে বেশি এবং অতিরিক্ত খাচ্ছেন, আর একটু একটু করে ওজন বেড়েই চলছে, মুটিয়েও যাচ্ছেন। তাহলে এমনটা কেন হচ্ছে, তা খোঁজার চেষ্টা করুন প্রথমে। সাধারণত মানসিক অবস্থাভেদে আমাদের খাওয়ার পরিমাণ কমে–বাড়ে। কর্মহীনতা, অতিরিক্ত ব্যস্ততা, অবসাদে ভোগা কিংবা অতি আনন্দে থাকলেও আমাদের খাওয়ার মাত্রা বেড়ে যায় কিংবা অতিরিক্ত খাই আমরা। নিজের সঙ্গে কথা বলুন, মনের অবস্থা যাচাই করুন। স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে স্বাভাবিক খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস করুন।
ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ ও ডিনার, অর্থ্যাৎ সকাল, দুপুর ও রাতের খাদ্য গ্রহণের নির্দিষ্ট সময় যেন ঠিক থাকে। সকালের নাস্তা দুপুরের আগে, দুপুরের খাবার বিকেলে এবং রাতের খাবার যেন গভীর রাতে চলে না যায়। এমন নিয়মে অভ্যস্ত না হলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খাবার গ্রহণ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। শরীর সময়মতো খাবার না পেলে নিজেই অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি করে রাখে, ফলে খাবার সামনে এলে আপনি মানসিকভাবেও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে বেশি খেতে চাইবেন। ফলে প্রতিদিন ঠিক সময় মেনে খাবার খেতে হবে।
আমরা সাধারণত খাওয়ায় মনোযোগী হই না। অধিকাংশ সময় দেখা যায়, কম্পিউটার-ল্যাপটপে কোনো কাজ করতে করতে, টিভি দেখতে দেখতে বা মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে খাই। এমনটা কোনো মতেই কাম্য নয়। ওভার ইটিং সমস্যার অন্যতম কারণ, খাদ্য গ্রহণে অমনোযোগী হওয়া। খাওয়ায় মন না দিয়ে বেশি সময় ব্যয় করে যখন খাবেন, তখন বেশিই খেতে মন চাইবে। আর আমরাও তা–ই করি। ফলে নির্দিষ্ট টেবিলে বা জায়গায় বসে মন দিয়ে সময় নিয়ে খেতে হবে।
আমরা সাধারণত যে খাবার পছন্দ করি বা খেতে ভালোবাসি, সেটাই একটু বেশি খাই। ওভার ইটিং সমস্যার সমাধানে অতিরিক্ত পছন্দের খাবার নির্বাচন করুন। খাবারগুলোর একটি তালিকা করুন। সেটা হতে পারে আইসক্রিম, বার্গার, পিৎজা, কোনো পিঠা, চকোলেট বা অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত কোনো খাবার। বাসায় বা ফ্রিজে এসব খাবার রাখা বন্ধ করুন কিংবা একেবারে বন্ধ করা না গেলে কম অথবা স্বল্প পরিমাণে খান।
প্রোটিন ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার আপনার দেহ ও মনকে রাখবে সতেজ ও শক্তিশালী। ডিম, ফল, শাকসবজি, মুরগির মাংস, মাছ ইত্যাদি খাবার যোগ করুন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। এসব খাবার আপনার রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে যেমন করবে শক্তিশালী, তেমনি আপনার সুগার লেভেলকে ঠিক রাখবে। খাদ্য হজমে সহায়তা করবে। ফলে উদ্যমহীনতা বা ক্লান্তির কারণে শরীর আপনার থেকে বেশি খাবার চাইবে না, আপনিও প্রয়োজনের বেশি খাওয়া থেকে মুক্তি পাবেন।
চিনিযুক্ত কোমল পানীয়র প্রতি ভালোবাসা কার না আছে। বাজারে পাওয়া যায়, এমন হাজারো পানীয়। খাওয়ার সময় কোমল পানীয় গ্রহণের অভ্যাস থাকলে তা বাদ দিতে হবে। কোমল পানীয়র জায়গায় গ্রহণ করুন পানি। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, স্বাভাবিক বয়সের দুজন ব্যক্তি, একজন খাওয়ার সময় কোমল পানীয় গ্রহণ করছেন এবং আরেকজন পানি পান করছেন। কোমল পানীয় পান করা ব্যক্তিটি পানি পান করা ব্যক্তির চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ খাবার বেশি গ্রহণ করছেন। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত এই কোমল পানীয় দীর্ঘমেয়াদে আপনার শরীরের জন্যও ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।
শরীরের ওজন বেড়ে যাচ্ছে বলে নিজে নিজেই প্রায় সবই খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে ‘ডায়েট’ নামের চর্চা শুরু করলেন তো বিপদ ঘরে ডেকে আনলেন। কারণ, ওভার ইটিং সমস্যা থেকে মুক্তির পথ হলো ব্যালেন্স ডায়েট। নিয়মিত ও পরিমিত আহারই হলো ব্যালেন্স ডায়েটের মূল কথা। সুতরাং সব খাবার বাদ না দিয়ে বরং প্রয়োজনীয় খাবারগুলো চাহিদার অতিরিক্ত না খেলেই হলো। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয়, নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে বরং একজন পুষ্টিবিদের শরণাপন্ন হন, তিনিই বাতলে দিতে পারেন সহজ ব্যালেন্স ডায়েটের পদ্ধতি। আর আপনিও বাঁচবেন ওভার ইটিং নামের সমস্যা থেকে।
ছবি: পেকজেলসডটকম