চিকিৎসকের মতে, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০। অন্যদিকে রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ বা এর আশপাশে থাকে তাহলে লো ব্লাডপ্রেশার হিসেবে ধরা হয়। প্রেশার যদি অতিরিক্ত নেমে যায় তাহলে মস্তিষ্ক, কিডনি ও হৃৎপিণ্ডে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে না। তখন হাইপোটেনশন দেখা দেয়। আবার অতিরিক্ত পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা, ভয় ও স্নায়ুর দুর্বলতা থেকেও লো ব্লাডপ্রেশার হতে পারে।
সাধারণত প্রেশার লো হলে মাথা ঘোরানো, ক্লান্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, বুক ধড়ফড় করা, অবসাদ, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা ও স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। অতিরিক্ত ঘাম, ডায়রিয়া বা অত্যধিক বমি হওয়া, দেহের ভেতরে কোনো কারণে রক্তক্ষরণ হলে, শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত বা দুর্ঘটনার ফলে রক্তপাত ঘটলে এবং অপুষ্টিজনিত কারণেও লো ব্লাডপ্রেশার দেখা দিতে পারে।
আবার গর্ভবতী মায়েদের গর্ভের প্রথম ছয় মাস হরমোনের প্রভাবে লো প্রেশার হতে পারে। এ সময় মাথা ঘোরানো বা মাথা হালকা অনুভূত হওয়া, মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বসা বা শোয়া থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘোরা বা ভারসাম্যহীনতা, চোখে অন্ধকার দেখা, ঘন ঘন শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, খুব বেশি তৃষ্ণা অনুভূত হওয়া, অস্বাভাবিক দ্রুত হৃদ্কম্পন, নাড়ি বা পালসের গতি বেড়ে যায়।
লো ব্লাডপ্রেশার বা নিম্ন রক্তচাপ নিয়ে অনেকেই চিন্তায় থাকেন। তবে বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, এটা উচ্চ রক্তচাপের চেয়ে কম ক্ষতিকর ও স্বল্পমেয়াদি সমস্যা। আর প্রেশার লো হলে বাড়িতেই প্রাথমিক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
১. লবণ-পানি:
লবণ রক্তচাপ বাড়ায়। কারণ, এতে সোডিয়াম আছে। তবে পানিতে বেশি লবণ না দেওয়াই ভালো। সবচেয়ে ভালো হয়, এক গ্লাস পানিতে দুই চা-চামচ চিনি ও এক-দুই চা-চামচ লবণ মিশিয়ে খেলে। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের চিনি বর্জন করাই ভালো।
২. কফি-হট চকলেট:
হঠাৎ করে লো প্রেশার দেখা দিলে এক কাপ কফি খেতে পারেন। স্ট্রং কফি, হট চকলেট, কোমল পানীয়সহ যেকোনো ক্যাফেইন–সমৃদ্ধ পানীয় দ্রুত ব্লাডপ্রেশার বাড়াতে সাহায্য করে। আর যাঁরা অনেক দিন ধরে এ সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা সকালে ভারী নাশতার পর এক কাপ কফি খেতে পারেন।
৩. বিটের রস:
বিটের রস হাই ও লো প্রেশার দুটোর জন্য সমান উপকারী। এটি রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এভাবে এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।
৪. বাদাম:
লো প্রেশার হলে ৫টি কাঠবাদাম ও ১৫ থেকে ২০টি চিনাবাদাম খেতে পারেন। এটা প্রেশার বাড়াতে সহায়তা করে।
৫. পুদিনা:
ভিটামিন ‘সি’, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও প্যান্টোথেনিক উপাদান, যা দ্রুত ব্লাডপ্রেশার বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মানসিক অবসাদও দূর করে পুদিনাপাতা। এর পাতা বেটে নিয়ে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন।
৬. যষ্টিমধু:
আদিকাল থেকেই যষ্টিমধু বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এক কাপ পানিতে এক টেবিল চামচ যষ্টিমধু দিয়ে রেখে দিন। ২-৩ ঘণ্টা পর পান করুন। এ ছাড়া দুধে মধু দিয়ে খেলেও উপকার পাবেন।
৭. স্যালাইন:
শরীরে পানিশূন্যতা ও ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতার কারণে নিম্ন রক্তচাপ হলে শুধু খাওয়ার স্যালাইন খেলেই প্রেশার বেড়ে যায়। লো ব্লাডপ্রেশারে খাওয়ার স্যালাইন সবচেয়ে উপযোগী এবং তাৎক্ষণিক ফলদায়ক। তবে যেসব ওষুধে রক্তচাপ কমে বা লো প্রেশার হতে পারে, সেসব ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
যারা দীর্ঘমেয়াদি নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন, তাঁরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকেরা নিম্ন রক্তচাপের কারণ শনাক্ত করে তারপর ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। লো ব্লাডপ্রেশারে খাওয়ার স্যালাইনের পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেট ও গ্লুকোজ খেলেও কিন্তু ভালো উপকার পাওয়া যায়।
এ ছাড়া লো প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সময়মতো পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
ছবি: পেকজেলসডটকম