একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের দিনে আসলে কত ধাপ বা স্টেপ হাঁটা উচিত, সেটার সঠিক হিসাব নিয়ে অনেকের মনেই কৌতূহল আছে। এখনকার ফিটনেস ট্রেন্ড অনুযায়ী শোনা যায়, প্রতিদিন ১০ হাজার কদম বা স্টেপ হাঁটাকে আদর্শ ধরা হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এটি কি আসলে প্রশ্নাতীতভাবে সঠিক, নাকি অন্যান্য বিষয়ও রয়েছে এখানে?
দৈনন্দিন কাজে, বাজার করতে, অফিসে যেতে কিংবা লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ির ব্যবহার—প্রতিটি স্টেপই কিন্তু এই ১০ হাজার কদমের মধ্যে গণনায় চলে আসে। আর আমরা এই ভেবে সন্তুষ্ট থাকি যে যথেষ্ট হাঁটা হয়ে গেছে। তবে বিশেষজ্ঞদের রয়েছে অন্য রকম অভিমত। হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিদিন ১০ হাজার পদক্ষেপকে এক জাদুকরী সংখ্যা বলা হলেও দিনে অন্তত সাড়ে ৭ হাজার সত্যিকারের কার্যকর স্টেপকে বরং এ ক্ষেত্রে আদর্শ বলা যেতে পারে। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আসলে সাড়ে সাত হাজার কার্যকরী স্টেপই সবচেয়ে ফলপ্রসূ।
গবেষণা বলছে, স্ট্রাভা-নাইকি পেডোমিটার, অ্যাপল ওয়াচ বা স্টেপ কাউন্ট করার বিভিন্ন অ্যাপ মূলত ১০ হাজার স্টেপকে আদর্শ বললেও বা প্রচারের মাধ্যমে জনপ্রিয় করে তুললেও এর আদতে তেমন কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়ামবিজ্ঞানের অধ্যক্ষ ইলোরি এগুয়ের এ প্রসঙ্গে বলেন, এই ১০ হাজার স্টেপ বিষয়টা আসলে লোকমুখে প্রচলিত। মূলত সারা দিনে একজন মানুষ যে ধরনের দৈনন্দিন কাজ করে, তাতে এমনিতেই ছয় হাজার স্টেপ হয়ে যায়। এটাকে আরও অর্থপূর্ণ ও আরেকটু কার্যকরী করতেই ১০ হাজার স্টেপ কথাটা প্রচলিত হয়ে যায়।
এদিকে জাপানিজ ওয়াকিং ক্লাব নতুন এক স্টেপ কাউন্টিং ডিভাইস এনেছে, যার স্লোগান হচ্ছে ‘চলুন, রোজ ১০ হাজার স্টেপ হাঁটি’। এ ছাড়া গবেষণায় দেখা যায়, যাঁরা রোজ মাত্র ৪ হাজার ৫০০ স্টেপ হাঁটেন, তাঁদের মৃত্যুহার রোজ ১০ হাজার পদক্ষেপ হাঁটা ব্যক্তিদের চেয়ে বেশি। যাঁরা নিয়মিত অন্তত ৬ থেকে ৯ হাজার স্টেপ হাঁটেন, তাঁদের হৃদ্রোগের ঝুঁকিও কমে যায়। যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা যায়, অন্তত ১৫ হাজার পদক্ষেপ হাঁটলে তা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা উচ্চমাত্রার পরিশ্রম হয়, এমন ব্যায়াম খুবই কার্যকর। প্রতিটি মানুষের লাইফস্টাইল বা জীবনযাপনের ধরন আলাদা। তাই সে অনুযায়ী ব্যায়াম করলে বা হাঁটলেই কেবল তা আমাদের সুস্থ রাখতে পারে।
হৃদ্রোগ বা ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায় নিয়মিত হাঁটার মাধ্যমে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, হাঁটার সঙ্গে অন্যান্য কার্যকর ব্যায়ামের সমন্বয় আপনাকে আরও বেশি ভালো ফলাফল দিতে পারে। আপনি যদি আসলেই পরিবর্তন দেখতে চান, তবে ধীরে ধীরে এর পরিমাণ বাড়াতে পারেন নিজের সহনশীলতা অনুযায়ী। প্রথমে চার হাজার স্টেপ দিয়ে শুরু করে আস্তে আস্তে বাড়ানোই বেশি ফলপ্রসূ হবে সবার জন্য। আপনি যতটুকুই হাঁটেন না কেন, সেটা প্রতিদিন যদি করেন, তা বেশি কাজে দেয়।
ধরা যাক, আপনি দুই-তিন দিন হাঁটলেন, তারপর চার-পাঁচ দিন বিরতি দিলেন—এতে হিতে বিপরীত হয়। এমন করলে আপনার মস্তিষ্ক সিগনাল পেয়ে ব্যায়ামের বিষয়টা আত্মস্থ করতে যে সময় নিচ্ছিল, সেটা আবার আগের জায়গায় চলে যাবে। তাই আবার আপনাকে নতুন করে শুরু করতে হবে। এ জন্য কত পদক্ষেপ হাঁটবেন, সেটা ঠিক করে নিয়ে একে নিয়মিত রুটিনের একটা অংশ বানিয়ে ফেলুন। তাহলে সেটা আপনার জন্য অনেক বেশি সহজ হবে। তাই শুধু ১০ হাজার স্টেপের লক্ষ্য না রেখে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর টার্গেট দিতে হবে নিজেকে। প্রয়োজন হলে অবশ্যই একজন ফিটনেস–বিশেষজ্ঞকে জিজ্ঞাসা করে নিয়েই হাঁটার লক্ষ্য ঠিক করুন।
তথ্যসূত্রঃ ভেরি ওয়েল ফিট
ছবিঃ পেকজেলস ডটকম