আমরা এখন এমন একটি জীবন যাপন করি, যা খুব ফাস্ট, সবকিছুতেই তাড়াহুড়া করি। খাওয়ার বেলায় আমরা দ্রুত খাই। খাবারের গুণগত মানের চেয়ে দ্রুত খাওয়াটা জরুরি মনে করি। তার জন্য ফাস্ট ফুড খুব জনপ্রিয়। অথচ ফাস্ট ফুডের দোকানে অনেক সময় ব্যয় করি, কিন্তু খাই দ্রুত। আমাদের এই আধুনিক জীবনে ফাস্ট লাইফে ফাস্ট ফুডে অভ্যস্ত।
তবে আমাদের শরীর কিন্তু এমন ফাস্ট নয়। বিশেষ করে আমাদের হজমপ্রক্রিয়া থেকে শুরু করে খাদ্যরস, তার পাচনক্রিয়া—সবই স্লো। খাবার খাওয়ার পর আমাদের শরীরে এটা খাদ্যরস মিশিয়ে পেটে দীর্ঘ সময় এটা ভাঙার কাজ করে তারপর আমাদের ইন্টেস্টাইনে দীর্ঘ সময় পাচনক্রিয়া করেই খাদ্য উপাদানগুলো যথাস্থানে পৌঁছেই কাজটা শেষ করে। এতে ধীরগতিতে কাজগুলো সম্পাদন হয়।
কিন্তু আমরা যখন দ্রুত খাই, তখন এ প্রক্রিয়া আরও ধীর হয়ে যায়। এ কারণে আমাদের শারীরিক সমস্যাগুলোও অল্প বয়সেই ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেশার, থাইরয়েড, হার্টের সমস্যা, ইউরিনের সমস্যা, হজমের সমস্যা হয়ে যাচ্ছে, যা এটি নিত্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমাদের এই ফাস্ট লাইফে স্লো ফুড আছে, এটা তৈরি করতে ফাস্ট ফুডের চেয়ে কম সময় লাগে এবং দ্রুতই খাওয়া যায়। এর জন্য এই ফাস্ট লাইফে ফাস্ট ফুডের চেয়ে স্লো ফুড খাওয়ার অভ্যাস করা খুব জরুরি। স্লো ফুড অনেক আছে, তার মধ্যে আমাদের কাছে সবচেয়ে কাছের যে ফুডটি পরিচিত, সেটা হলো ছাতু!
ছাতু এমন এক খাবার, যার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, যাকে লো জিআই বলা হয়। এটি ধীরে ধীরে হজম হয় এবং অনেকক্ষণ পেটে থাকে। এ জন্যই এটি স্লো ফুড। শরীরে মেটাবলিজমে চাপ তৈরি করে না, তাই ছাতু স্লো ফুড। যখন আপনার শরীরে কোনো খাদ্য ধীরে হজম হবে, তা আপনার জন্য ভালো। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। ছাতুতে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম থাকে। এ কারণে নানা স্বাস্থ্যসুবিধা আমরা পেতে পারি। মিশ্রণে নানা উপাদান যোগ করে একে আরও শক্তিশালী করা যায়। এখানে যেভাবে বলা হয়েছে, তাতে ওমেগা-৩ ও ক্যালসিয়াম যোগ হয়ে খাবারটা আরও সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হয়ে ওঠে।
• ধীরে হজম হওয়ার কারণে খাদ্যচাহিদা কমে আসে। এতে ওজন কমে এবং হজমক্ষমতারও উন্নতি ঘটে।
• লো জিআই হওয়ার জন্য রক্তচাপ ও কোলেস্টরেল অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
• প্রোটিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট—এই দুটি উপাদান ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
• পুষ্টির সুষমতার কারণে এনার্জির মাত্রা বাড়তে শুরু করে, কম খেয়েও শরীরে সবলতা থাকে, বয়সকালীন রোগ শরীরে বাসা বাঁধার কোনো সুযোগই পায় না।
• গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে, সুগার বাড়ার কোনো চাপ থাকে না। আপনি কার্ব খেয়েও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
• যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাঁরা এ খাবার নিয়মিত খেলে উপকার পাবেন।
• যবে ডায়টারি ফাইবার বেশি হওয়ার দরুন কনস্টিপেশন কমার কাজ করবে, সেই সঙ্গে হার্ট ভালো থাকবে।
মূলত যব হচ্ছে ছাতুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যব পেট ঠান্ডা রাখে। সেই সঙ্গে সাদা তিল (ক্যালসিয়ামের ভান্ডার), তিসি (ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর) ও চিনাবাদাম মিশিয়ে নিলে আরও ভালো।
ছাতু আপনি এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে গুলিয়ে খেতে পারেন। স্লো ফুড কিন্তু ফাস্ট খেতে পারবেন। এতে গুড় বা মধু মেশাতে পারেন যদি ডায়াবেটিস না থাকে। রুটি বানিয়ে খেতে পারেন, চাপড়ি বানিয়ে খেতে পারেন। এ নিয়ে অনেক ধরনের রেসিপি রয়েছে, যা জেনে নিতে পারবেন।
তাই প্রতিদিন সকালে নাশতায় কিংবা বিকেলে নাশতায় খেতে পারেন। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগী, কিডনি সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য চমৎকার পথ্য এটি। বাচ্চাদের জন্য এটা খুবই উপকারী। যবে ডায়টারি ফাইবার বেশি থাকার কারণে বাচ্চাদের কনস্টিপেশনের সমস্যা থেকেও মুক্তি দিতে পারে।
তাই ফাস্ট ফুড নয়, স্লো ফুডে দিন শুরু করি।
লেখক: প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
ছবি: সংগৃহীত