আমরা এমন একটি সমাজে বাস করি যেখানে এখনো পিরিয়ড, মাসিক বা ঋতুস্রাব অনেকটা ট্যাবুর পর্যায়ে। এসব কথা শুনলে সবাই অস্বস্তিতে পড়ে যান। সবার বোঝা দরকার যে এটা লজ্জার কোনো বিষয় নয়, বরং নারীর শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ট্যাবুর জন্যই পিরিয়ডের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা নিয়ে আলোচনা কম হয়ে থাকে। এ সময় অপরিচ্ছন্ন থাকলে নানা রকম রোগ হতে পারে। তাই সবার উচিত পিরিয়ডের সময়ের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা।
এখন স্যানিটেশনের অনেক পদ্ধতি পাওয়া যাচ্ছে। স্যানিটারি ন্যাপকিন তো সব সময় ছিল। নতুন করে যুক্ত হয়েছে ট্যাম্পন আর তারপর মেনস্ট্রুয়াল কাপ। অবশ্য এ দেশের বেশির ভাগ মহিলা এখনো স্যানিটারি ন্যাপকিনেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এ ক্ষেত্রে নিজের পছন্দ অনুযায়ী ভালো মানের ন্যাপকিন বাছাই করতে হবে। আর সংবেদনশীল ত্বকের অধিকারী যাঁরা, তাঁরা অবশ্যই প্লাস্টিক লাইনিং আছে এমন স্যানিটারি ন্যাপকিন এড়িয়ে চলবেন। কারণ, এগুলো চামড়ার সঙ্গে ঘষা লেগে র্যাশ ও চুলকানির মতো অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
যে স্যানিটেশনপদ্ধতিই ব্যবহার করা হোক না কেন, তা চার ঘণ্টা পরপর পরিবর্তন করতে হবে। অনেকের পিরিয়ড শুরুর প্রথম দিন আর শেষের দিনগুলোয় প্রবাহ কম থাকে। সে ক্ষেত্রেও একটি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পন পাঁচ ঘণ্টার বেশি রাখা যাবে না। আর যাঁদের বেশি প্রবাহ হয়, তাঁদের জন্য এই সময় তিন ঘণ্টা। এর বেশি সময় ধরে রাখলে ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যাবে। তবে মেনস্ট্রুয়াল কাপ ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা ব্যবহার করা যায়। আবার অনেকে পিরিয়ডের সময় এক প্যান্টি অনেক লম্বা সময় ধরে পরে থাকেন। এটা করা ঠিক নয়। এতে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে। এ জন্য ডা. নাইমা তাহসিন পিরিয়ডের সাত দিনের জন্য সাতটা প্যান্টি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। ব্যবহারের পর প্যান্টি গরম পানি ও সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
পিরিয়ডের সময় যোনিপথের আশপাশে রক্ত লেগে যাওয়াটা খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। এভাবে কিন্তু যোনিপথের বাইরের অংশে এবং চামড়ার ভাঁজে রক্ত লেগে ঘামের সঙ্গে মিশে জীবাণু আটকে যায়। এ জন্য এসব জায়গা কুসুম গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। বাইরে থাকলে টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলতে হবে।
যোনিপথের আশপাশে সাবান বা ভ্যাজাইনাল হাইজিন প্রোডাক্ট ব্যবহার করা যাবে না
যোনির নিজস্ব পরিষ্কারব্যবস্থা রয়েছে, যা ভালো ও খারাপ ব্যাকটেরিয়াকে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যের মধ্যে রাখে। এটি সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেললে ভালো ব্যাকটেরিয়া মরে গিয়ে সংক্রমণের সৃষ্টি হতে পারে। যোনি ও এর আশপাশের জায়গা ধুয়ে ফেলা প্রয়োজন কিন্তু তা করতে হবে কেবল কুসুম গরম পানি দিয়ে। এখন বাজারে অনেক জীবাণুনাশক ভ্যাজাইনাল হাইজিন প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। এই একই কারণে এড়িয়ে চলতে হবে এগুলোও।
আমাদের দেশে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিন যত্রতত্র ফেলে দেন। কেউ কেউ তো টয়লেটে ফ্ল্যাশ করেন। আবার কেউ কেউ একদম খোলা অবস্থায় ডাস্টবিনে ফেলে দেন। ন্যাপকিন, ট্যাম্পন সব সময় কাগজে মুড়ে ফেলতে হবে। তা না হলে জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সংক্রমিত হতে পারেন যে কেউ। এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে বলেছেন ডা. নাইমা তাহসিন।
ভারী রক্তপাতের সময় অনেকের প্যাড র্যাশ দেখা দেয়। এ সময় অনেকক্ষণ প্যাড ভিজে থাকলে এবং চামড়ার সঙ্গে ঘর্ষণে এমনটি হয়ে থাকে। এটি প্রতিরোধের একমাত্র উপায় প্যাড বা ন্যাপকিন যথাসময়ে পরিবর্তন করা এবং যোনিপথের আশপাশের জায়গা শুকনা রাখা। আর র্যাশ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিসেপটিক অয়েন্টমেন্ট লাগাতে হবে গোসলের পর এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে।
এ সময় যেহেতু শরীর থেকে রক্ত বেরিয়ে যায়, তাই আমাদের দুর্বলতাজনিত অসুস্থতার প্রবণতা বাড়ে। হরমোনের ভারসাম্য এদিক–ওদিক হলেও অত্যন্ত অসুস্থ বোধ হয়। তাই সবকিছুর সঙ্গে ডায়েটের দিকেও বিশেষ মনোযোগ দিতে বলেছেন ডা. নাইমা তাহসিন। এ সময় বেশি বেশি স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। বাইরের খাবার খাওয়া যাবে না। দিনে দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে।
ছবি: হাল ফ্যাশন ও পেকজেলসডটকম