রসুই ঘরের কড়াইয়ে রসুনের ফোঁড়ন দিলে ঘ্রাণ যেমন নাকে এসে লাগে, তেমনই খাবারের স্বাদও যেন জিবে লেগে থাকে। আবার ঠান্ডা লাগলে শর্ষের তেলের সঙ্গে এক কোয়া রসুন গরম করে খেয়ে নিলে শ্বাসটাও আরামে নেওয়া যায়। কিন্তু রসুনের কাজ কি শুধু এটুকুই? একদমই নয়! খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি থেকে শুরু করে শরীর সুস্থ রাখার দাওয়াই হিসেবে রসুন হয়ে উঠেছে জনপ্রিয় ও ঘরোয়া এক পথ্য। বলা হয়, দুপুরে খাওয়ার আগে তিন কোয়া করে রসুন নিয়মিত খেলে সুফল পাওয়া যাবে।
রসুনকে বলা হয় হৃদ্যন্ত্রের বন্ধু। নিয়মিত এটি খেলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। রসুনে থাকা সালফার ব্লাড প্রেশার কমাতে এবং কোলেস্টেরল লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এতে হার্ট ভালো থাকে।
আমাদের শরীরে ক্যানসার সেলের বৃদ্ধির জন্য ফ্রি র্যাডিকেল অনেকাংশে দায়ী। এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে রসুনে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। প্রতিদিনের ডায়েটে রসুন রাখলে ক্যানসার প্রতিরোধ করা অনেকটাই সহজ হয়।
রসুনকে বলা হয় ন্যাচারাল অ্যান্টি–বায়োটিক। এতে থাকা অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টিজ বিভিন্ন ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত রসুন খেলে ঠান্ডা লাগার প্রবণতা কমে যায় এবং অন্যান্য ইনফেকশন হওয়ার হাত থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
যদি কেউ আর্থ্রাইটিসে ভোগেন, তাহলে রসুন হতে পারে ন্যাচারাল একটি রেমেডি। এর অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টিজ ব্যথা কমাতে খুব ভালো কাজ করে এবং আর্থ্রাইটিসের অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে। খাবার তালিকায় রসুন থাকলে হাড়ের জয়েন্ট ভালো থাকে। যার কারণে ব্যথা কম হয়।
হজমশক্তি বাড়াতে রসুনের কার্যকারিতা অনেক বেশি। এটি নিয়মিত খেলে ডাইজেস্টিভ এনজাইমের প্রোডাকশন বাড়ে। রসুন ডাইজেস্টিভ সিস্টেম ডিটক্সিফাই করতে খুব ভালো কাজ করে, পুষ্টি গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়ায় এবং পুরো হজমপ্রক্রিয়াকে ভালো রাখে।
ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করার জন্য যে ভিটামিন ও মিনারেলের প্রয়োজন, তার প্রায় অনেকটাই রয়েছে রসুনে। খাবারের আগে রসুন খেলে শরীর অসুস্থতা ও ইনফেকশনের হাত থেকে সুরক্ষা পায়।
হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্যও রসুনকে পথ্য হিসেবে মানা হয়। এটি সেসব পুষ্টি জোগাতে সক্ষম, যা হাড়ের স্থায়িত্ব ও শক্তি বাড়ায়, অস্টিওপোরসিসের মতো হাড়সংক্রান্ত অসুখের ঝুঁকি অনেকতাই কমিয়ে দেয়।
রসুন শুধু অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যই নয়, ত্বকের জন্যও খুব উপকারী। এর অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট প্রোপার্টিজ ত্বকের সংক্রমণ দূর করে ত্বক পরিষ্কার রাখে এবং ত্বকে ফিরিয়ে আনে হারানো উজ্জ্বলতা।
হজম বাড়াতে ও বেশি খাওয়ার ইচ্ছা কমাতে রসুন খুব ভালো কাজ করে বলে ওজন কমে সহজে। এটি ব্লাড সুগার লেভেল কন্ট্রোল করে বলে ওজন থাকে নিয়ন্ত্রণে।
রসুনকে পুষ্টিঘর বললেও ভুল হবে না। কারণ, এতে আছে ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, সেলেনিয়াম, ফাইবার। শরীরের নানা সমস্যা সমাধানে এই উপাদানগুলোর বেশ প্রয়োজন রয়েছে।
ছবি: পেকজেলসডটকম