শুধু পোশাকে নয়, খাবারেও আসুক বসন্ত
শেয়ার করুন
ফলো করুন

বসন্তে মেতে ওঠে প্রকৃতি। ছড়ায় নানা রং—গাঢ় লাল, কমলা, হলুদ, বেগুনি ইত্যাদি। ফুল, ফল, শাক, সবজি—সর্বত্রই রঙের উপস্থিতি বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। ফল ও সবজিতে উপস্থিত রঞ্জক আমাদের দেহে ভিটামিনের মতোই অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। এ ছাড়া শাকসবজি ও ফলমূলে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন এ, বি ও সি, ফলিক এসিড এবং কিছু খনিজ লবণ থাকে। এই সব রঙের উপকারিতা নিয়ে আলোকপাত করা যাক।

লাল: ক্যারটিনয়েড লাইকোপিনের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় লাল রঙের ফল ও সবজিতে। যেমন টমেটো, বিট, স্ট্রবেরি, তরমুজ, আপেল, লাল আঙুর, লাল ক্যাপসিকাম, লালশাক, লাল ড্রাগন ফল, বেদানা ইত্যাদি। লাল ফাইটোকেমিক্যাল প্রোস্টেট ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, হৃদ্‌রোগ, ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

হলুদ ও কমলা: ক্রিপ্টোথ্যানজিন, ক্যারোটিন নামক রঞ্জক পদার্থের উপস্থিতির কারণে কমলা ও হলুদ বর্ণ ধারণ করে। পাকা পেঁপে, গাজর, হলুদ ক্যাপসিকাম, মাল্টা, কমলা, মিষ্টিকুমড়া, আনারস ইত্যাদি হলুদ ও কমলা বর্ণের ভালো উৎস; যা হৃদ্‌রোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়, দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে, ত্বকে আর্দ্রতা জোগায়, ত্বক উজ্জ্বল ও কোমল করে, ঠান্ডাজনিত সমস্যা প্রতিরোধ করে।

বিজ্ঞাপন

বেগুনি ও নীল: এতে এন্থোসায়ানিন নামক রঞ্জক পদার্থ থাকে যা ক্যানসার, হৃদরোগ, আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং অ্যান্টি–এজিং হিসেবে কাজ করে। কালো আঙুর, বেগুনি বাঁধাকপি, জাম, বেগুন ইত্যাদি এর ভালো উৎস।

সবুজ: আইসোসায়ানেট, ইনডোল, সালফোরাফেন প্রভৃতি সবুজ রঙের প্রাকৃতিক রাসায়নিক কণিকা শক্তিশালী ডিটক্স, তাই দেহে ক্যানসার সৃষ্টিতে সহায়ক উপাদানকে প্রতিরোধ করে। শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে, স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে এবং ডায়াবেটিস রোগীর ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে। এ ছাড়া সবুজ পাতায় উপস্থিত লুটেন অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। এসব রঞ্জক পদার্থের ভালো উৎস হলো ব্রকলি, সবুজ ক্যাপসিকাম, পালং শাক, ধনেপাতা, পুদিনা পাতা, পেঁয়াজ পাতা, লেটুস, বাঁধাকপি, শিম, মটরশুঁটি, পেয়ারা ইত্যাদি।

সাদা: সাদা ফল ও সবজিতে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াবিরোধী ক্ষমতা আছে। রসুন, পেঁয়াজ, আদা, মূলা, আলু, মাশরুম, কলা, বাদাম, নাশপাতি, নারিকেল, ফুলকপি, সাদা ড্রাগন ইত্যাদি সাদা ফাইটোকেমিক্যালের ভালো উৎস। পেঁয়াজ, রসুনে অ্যালিসিন নামক শক্তিশালী রঞ্জক কণিকা থাকে, যা দেহে নির্বিষকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোলন, প্রস্টেট ও স্তন ক্যানসার, টিউমার প্রতিরোধে কাজ করে। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়।

ফাইটোকেমিক্যালগুলো বিষণ্নতা, অবসাদ, অস্থিরতা, কিছু মানসিক সমস্যা নিরসনেও ফলপ্রসূ। বাজার করার সময় বিভিন্ন বর্ণের শাকসবজি কিনুন। ফল কেনার সময় অল্প করে বিভিন্ন রং নির্বাচন করুন। প্রতিদিন যেন তিন-চার রকম রং খাবারে থাকে।

তাই এখন থেকে শুধু পোশাকে নয়, খাবারেও বসন্ত আসুক।

কিছু নির্দেশনা

• স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তাজা, মৌসুমি, পরিপক্ব ফল ও শাকসবজি কেনা ভালো।
• পুষ্টিমান বজায় রাখার জন্য ফল ও শাকসবজি কাটার আগে ধুয়ে নিতে হবে।
• শাকসবজি খুব বেশি সেদ্ধ না করা ভালো, ঢাকনাযুক্ত পাত্রে রান্না করতে হবে।
• প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একাধিক রঙের শাকসবজি ও ফল রাখার চেষ্টা করতে হবে। কেননা এসব উপাদান দেহে জমা থাকে না।

বি দ্র:
কিডনিতে সমস্যা বা রক্তে ক্রিয়েটিনিন ও পটাসিয়াম বেশি থাকলে রঙিন শাকসবজি বা ফল গ্রহণের ক্ষেত্রে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক: আয়শা আনিকা নাজনীন, পুষ্টিবিদ, প্রত্যয় মেডিকেল ক্লিনিক

ছবি: পেকজেলসডটকম

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪: ০১
বিজ্ঞাপন