এই গরমে সুস্থ থাকতে হাইড্রেটেড থাকার কোনো বিকল্প নেই। ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচতে আমরা বেশি বেশি পানি পান করি। তবে শুধু পানি পান করেই কি হাইড্রেটেড থাকা সম্ভব? মোটেই নয়। কারণ হাইড্রেটেড থাকতে পানি দেহের কোষগুলোর অভ্যন্তরে পৌঁছানো জরুরি। আর পানি কোষে পৌঁছাতে সাহায্য করে ইলেক্ট্রোলাইটস। পানি একা এই কাজ করতে পারে না। ইলেক্ট্রোলাইটস হলো শরীরের জন্য আবশ্যক এমন কিছু খনিজ পদার্থ, যা পানি ও কোষের মধ্যে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখে। এগুলো শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন পেশি সংকোচন, স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম ও কোষের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখা। ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর ইলেক্ট্রোলাইট বের হয়ে যায়। তাই শুধু পানি পান করলে এই ঘাটতি পূরণ হয় না।
ইলেক্ট্রোলাইটস কীভাবে কাজ করে
ইলেক্ট্রোলাইটস সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্লোরাইড এবং ফসফেটের মতো খনিজ পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। এগুলো কোষের ভেতরে ও বাইরে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখে। শরীরের স্নায়ুতন্ত্রে বৈদ্যুতিক সংকেত প্রেরণে সাহায্য করে। এর ফলে পেশি সঠিকভাবে কাজ করে। এভাবে শরীরের শক্তি বজায় থাকে এবং কোষগুলো হাইড্রেটেড থাকে।
যখন শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর ইলেক্ট্রোলাইট বেরিয়ে যায়, তখন পেশিতে টান পড়া, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা ও পানিশূন্যতার মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়।
কীভাবে ইলেক্ট্রোলাইটসের ঘাটতি মেটাবেন
পানি পানের পাশাপাশি ইলেক্ট্রোলাইটস সমৃদ্ধ খাবার এবং পানীয় গ্রহণ করে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটসের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। জেনে নিন, কোন খাবারগুলো থেকে ইলেক্ট্রোলাইটসের চাহিদা পূরণ করবেন।
১. ফলমূল ও সবজি
ইলেক্ট্রোলাইটসের ঘাটতি পূরণে ফলমূল ও সবজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কলা: পটাসিয়ামের অসাধারণ একটি উৎস।পটাসিয়ামের চাহিদা পূরণে প্রতিদিন একটি করে কলা খাওয়াই যথেষ্ট।
আলু: বিশেষভাব খোসাসহ আলু পটাসিয়ামের আরেকটি চমৎকার উৎস।
কমলালেবু ও লেবু: সোডিয়াম ও পটাসিয়ামের ঘাটতি পূরণে এই দুটি ফল বেশ কার্যকর।
তরমুজ ও শসা: তরমুজে ও শসায় প্রচুর পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট রয়েছে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।
২. ডাবের পানি
প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইটস পানীয় হিসেবে নারকেলের পানির কোনো বিকল্প নেই। এতে রয়েছে পটাসিয়াম, সোডিয়াম এবং সামান্য পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, যা শরীরকে দ্রুত হাইড্রেটেড করতে সাহায্য করে।
৩. দুধ ও দই
দুধ এবং দই ক্যালসিয়াম ও পটাসিয়ামের জন্য খুবই ভালো একটি উৎস। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দুধ বা দই রাখলে ইলেক্ট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণ হয়।
৪. ড্রাই ফ্রুটস
কাঠবাদাম, কাজুবাদাম এবং কিশমিশে রয়েছে পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। এগুলো নিয়মিত খেলে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটসের ভারসাম্য বজায় থাকে।
৫. ইলেক্ট্রোলাইটযুক্ত পানীয়
অতিরিক্ত ঘাম হলে ওরস্যালাইন বা ইলেক্ট্রোলাইটযুক্ত পানীয় দ্রুত ইলেক্ট্রোলাইট ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। বিশেষ করে গরমের দিনে বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত ঘেমে গেলে বা শারীরিক পরিশ্রমের পর এগুলো পান করতে পারেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বাজারের কমার্শিয়াল সব ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস যখন তখন পান করলে ঘটতে পারে বিপদ।
৬. সামুদ্রিক খাবার
মাছ ও সামুদ্রিক খাবারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম। এগুলো শরীরের পুষ্টি সরবরাহ করার পাশাপাশি ইলেক্ট্রোলাইটসের চাহিদাও মেটায়।
হাইড্রেটেড থাকতে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় এমন ফলমূল ও সবজি অন্তর্ভুক্ত করুন, যা ইলেক্ট্রোলাইটসের ঘাটতি মেটায়। শুধু পানি পান করে এমন গরমে হাইড্রেটেড থাকা মোটেই সম্ভব নয়। পানি শরীরে সঠিকভাবে কাজ করতে ইলেক্ট্রোলাইটস প্রয়োজন। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পানীয়ের মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণ করলে শরীর সুস্থ ও সক্রিয় থাকবে। তাই হাইড্রেটেড থাকার জন্য পানির পাশাপাশি ইলেক্ট্রোলাইটসকেও গুরুত্ব দিন।
সূত্র: হেলথলাইন
ছবি: হাল ফ্যাশন, পেকজেলস ও নাজনীন নিহার ইন্সটাগ্রাম।