সবজি চাপাতি! নামটা শুনে হয়তো আপনার কাছে নতুন লাগতে পারে, কিন্তু এটা এখন খাদ্যসচেতন মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরা যে গমের রুটি খাই, সেই রুটির সঙ্গে সবজি ও সবজির রস মিশিয়ে যে রুটি বানানো হয়, সেটাই সবজি চাপাতি। বিশেষ করে ভারতে নানা আয়ুর্বেদ আশ্রমে এই রুটি খাওয়ার প্রচলন করায় বিশ্বব্যাপী সবজি চাপাতি খাওয়ার প্রতি মানুষ ঝুঁকছেন।
সবজি চাপাতির বিশেষত্ব হলো বেশ কিছু খাদ্যগুণ একসঙ্গে করে খাওয়া। বিশেষ করে গমের বর্তমান যে ধরন এবং আমরা যেভাবে ফিনিশ প্রোডাক্ট হিসেবে আটা–ময়দা পাই, তাতে ফাইবার, জিঙ্কসহ অনেক মিনারেল সঠিক মাত্রায় থাকে না বলে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা অভিযোগ করে থাকেন। সবজি চাপাতি এই ঘাটতি পূরণ করতে সহয়তা করবে।
সবজি চাপাতি গাজর, টমেটো, বিট, ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি দিয়ে বানানো যায়; সেই সঙ্গে শাক–পাতা দিয়েও করা যায়। বিশেষ করে শীতে পালংশাক, বেথো শাক, লালশাক দিয়ে সবজি চাপাতি খুব জনপ্রিয়।
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা এই সবজি চাপাতি পথ্য হিসেবে খেতে পারবেন, হার্টের রোগীদের এই সবজি চাপাতি খাওয়াই উচিত। ডায়বেটিক রোগীরা এই রুটি খেয়ে দেখুন, খাওয়ার পরে যেভাবে সুগার লেবেল বাড়ত, এই সবজি চাপাতি খেলে তেমন বাড়বে না।
বাসায় থাকা শিশুরা শাকসবজি খেতেই চায় না, শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য একটি স্বাভাবিক সমস্যা হয়ে গেছে। এসব শিশুদের জন্য সবজি চাপাতি হতে পারে চমৎকার সমাধান। শিশুরা আনন্দের সঙ্গে সবজি চাপাতি খাবে। আর শাকসবজির রংয়ের জন্য এই রুটি বর্ণিল হয়ে ওঠে, তাই টেবিলে দেখতেও ভালো লাগবে।
শীতের সবজি অনেক ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের একটি চমৎকার উৎস। রংয়ের কারণে কিছু মিনারেল ভিন্ন হলেও কমন ভিটামিন–মিনারেল যোগ হবে সবজি চাপাতিতে।
• ভিটামিন এ: গাজর, বিট, পালংশাক, লালশাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিনয়েড থাকে, যা ভিটামিন এ-তে পরিণত করতে পারে।
• ভিটামিন সি: এই ভিটামিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় শীতের সবজিতে থাকা এই অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট।
• ভিটামিন কে–ওয়ান: এই ভিটামিন রক্ত জমাট বাঁধার জন্য অপরিহার্য। উল্লেখ্য, এটি পালংশাক, বিট, গাজর, ফুলকপিতে পাবেন, যা আপনার দৈনন্দিন চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি পারিমাণে থাকে।
• ফলিক অ্যাসিড: ফোলেট আবার ভিটামিন বি নাইন নামেও পরিচিত। এই যৌগ গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যাবশ্যক এবং স্বাভাবিক কোষের কার্যকারিতা এবং টিস্যু বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। শীতের সবজিগুলোতে এটি পাবেন। বিশেষ করে মিষ্টিকুমড়ায় আছে প্রচুর পরিমাণে।
• আয়রন: শাক আয়রনের চমৎকার উৎস। হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে আয়রন, যা আপনার শরীরের টিস্যুতে অক্সিজেন সরবরাহে সহায়তা করে। গমে আয়রন থাকে সঙ্গে ব্রকলি ও গাঢ় সবুজ শাকে প্রচুর আয়রণ থাকে।
• ক্যালসিয়াম: এই খনিজ হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য এবং আপনার স্নায়ুতন্ত্র, হৃদ্যন্ত্র এবং পেশির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত অণু। গাঢ় সবুজ শাক ক্যালসিয়ামের ভান্ডার।
আটা বা ময়দা গোলানোর সময় পানি দেওয়ার বদলে শাকসবজির জুস দেবেন। তারপর কাই করে রেখে দেবেন আধা ঘণ্টা। এরপর রুটি বানিয়ে পরিবেশন করুন রংবেরঙের সবজি চাপাতি। অথবা আটা–ময়দা গোলানোর সময় শাকসবজি কুচি কুচি করে কেটে মিশিয়ে দিন। তারপর রুটি বানিয়ে পরিবেশন করুন।
সবজি চাপাতি বানাতে আটা বা ময়দার সঙ্গে যেসব শাকসবজি যোগ করবেন, সেগুলোতে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল যোগ হয়ে খাওয়ার জন্য একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার হয়ে উঠবে। শীতের এই সময় শাকসবজির সমারোহ থাকে, তাই এটিই সবজি চাপাতি খাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
লেখক: খাদ্য ও পথ্যবিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র।
ছবি: লেখক