ফারসি ও পশতু ভাষায় একে 'আনার' বলা হয়। আমাদের দেশে আমরা বলি ডালিম। 'আতা গাছে তোতা পাখি, ডালিম গাছে মৌ' বলে ছড়া কাটে নি এমন কেউ নেই এদেশে। বাংলাদেশের সব জায়গায়ই কম বেশি ডালিম পাওয়া যায়। লাল টুকটুকে রুবি পাথরের মতো দানায় ঠাসা এই ফলকে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে সুপারফুড বলা হয়। আপনি কি জানেন ডালিম আসলে কতটা উপকারী?
ডালিম ভিটামিন, খনিজ আর অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর। একটি মাঝারি সাইজের ডালিমে মেলে ২৩৪ ক্যালোরি, ৩.৩ গ্রাম চর্বি, ১১.৩ গ্রাম ফাইবার আর ৪.৭ গ্রাম প্রোটিন। তাছাড়া ডালিমের দানা চিবিয়ে খেলে পাবেন নানা ধরনের রোগ থেকে মুক্তি। প্রতিদিন ডালিম খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। চলুন এই ফলের ১০টি উপকারিতা জেনে নিই।
১. ডালিম অ্যান্টি অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ
ডালিম শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ও পলিফেনলিক যৌগের সমৃদ্ধ উৎস। এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুণ গ্রিনটি-র থেকে প্রায় ৩ গুণ বেশি। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে এবং বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে ধীর করতে সাহায্য করে।
২. হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
ডালিমের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রক্ত প্রবাহের ধারা ঠিক রেখে হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ধমনীতে অতিপ্রবাহ কমায় এবং রক্তচাপ হ্রাস করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তাই আয়ূর্বেদে ডালিমের রস পান করতে দেওয়া হয় হার্টের রোগীদেরকে।
৩. হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়
ডালিমের বীজ ও পাল্পে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা নিয়মিত পেট পরিষ্কার করতে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে হজমে সাহায্য করে।
৪. প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে
ডালিমের অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বা প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্য আছে। সেই সঙ্গে এতে পাওয়া যায় এলাজিটানিন নামক এক ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি আর্থ্রাইটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য উপকারী।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ভিটামিন সি আর অন্যন্য রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন যৌগে ঠাসা এই ফল। ডালিম রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং শরীরকে আরও কার্যকরভবে সংক্রমণ ও রোগের সঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে।
৬. ত্বক সুস্থ রাখে
ত্বক সুস্থ রাখতে ডালিম অনেক উপকারী। পমোগ্র্যানেট অয়েল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ভালো কাজ করে ও ত্বকের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। ডালিমের উচ্চ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পরিবেশগত কারণে ইউভি রশ্মি দূষণ আর ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
৭. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
ডালিম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে সিস্টোলিক চাপ। এটি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে যারা রয়েছে, তাদের জন্য উপকারী বেশ।
৮. স্মৃতিশক্তি উন্নত করে
গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত ডালিম খাওয়া মস্তিষ্কের কার্যকরিতা আর স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে৷ এর পেছনে ভূমিকা রাখে ফলটিতে উচ্চ পরিমাণে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।
৯. হাড় ভালো রাখতে সহায়তা করে
ডালিমে রয়েছে পটাসিয়াম ও পলিফেনল যা কার্টিলেজ নামের হাড়ের রোগ প্রতিরোধ করার জন্য খুবই উপকারী। ডালিমের আরো কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা হাড়ের জোড়ে ব্যথা আর আর্থ্রাইটিসের লক্ষণগুলো কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া বয়সকালে জোড়ের ক্ষতি করে এমন এনজাইমগুলোকে বাধা দেয় ডালিম।
১০. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
ডালিম কম ক্যালরিযুক্ত ও ফাইবারসমৃদ্ধ ফল। এলাগিটানিন থাকায় এটি আমাদের খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করা চর্বির অক্সিডেশন বাড়ায়, যা ওজন কমাতে প্রভাব রাখতে পারে।
সূত্র: হেলথ শটস
ছবি: পেকজেলস ডট কম ও উইকিমিডিয়া কমন্স