একসময় বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন যে শুধু একটি বি ভিটামিন আছে। আজ আমরা জানি যে ভিটামিন বি আছে আটটি। প্রতিটির বিশেষ কার্যকারিতা রয়েছে, যা আপনার শরীরকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এই আটটির একটি ভিটামিন বি৩; যেটা নিয়াসিন নামেও পরিচিত। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে নিয়াসিন থাকা সাধারণ সুস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । কারণ, আপনার শরীর এটি ব্যবহার করে খাবারকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে। আপনার স্নায়ুতন্ত্র, পাচনতন্ত্র এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্যও বি৩ অপরিহার্য।
আমরা সাধারণত লাল মাংস, মুরগি, মাছ, বাদামি চাল, বাদাম, বীজ, ডাল, কলাসহ যেসব খাবার খাই, তা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে নিয়াসিন পাই। কোলেস্টেরলের মাত্রা উন্নত করতে, নির্দিষ্ট ধরনের হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে এবং এমনকি স্মৃতিশক্তি হ্রাস আর ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করার জন্য খাদ্যতালিকা যোগ করতে পারেন এই ভিটামিন। বিশেষ ক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে নিয়াসিন সুপারিশ করা হয়। তবে অতিরিক্ত নিয়াসিন শরীরে ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে।
ভিটামিন বি৩-এর উপকারিতা
• শক্তি উৎপাদন: ভিটামিন বি৩ খাবার থেকে শক্তি তৈরি করতে সাহায্য করে।
• কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: এটি রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
• হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়: এটি হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
• ত্বকের স্বাস্থ্য: এটি ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
• স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা: এটি স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন বি৩-এর উৎস
ভিটামিন বি৩ অনেক খাবারে পাওয়া যায়, যেমন:
• মাংস: মুরগি, মাছ, গরুর মাংস
• শস্য: বাদাম, বীজ, শস্যদানা
• সবজি: মাশরুম, আলু, মটরশুঁটি
• ফল: অ্যাভোকাডো, কলা
প্রতিদিন কতটুকু ভিটামিন বি৩ প্রয়োজন
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন প্রায় ১৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৩ প্রয়োজন। তবে গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে নারীদের বেশি পরিমাণে ভিটামিন বি৩ প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন বি৩-এর অভাব
ভিটামিন বি৩-এর অভাবে পেলেগ্রা নামক রোগ হতে পারে। এই রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, ত্বকের সমস্যা এবং মানসিক বিভ্রান্তি।
ভিটামিন বি৩ অতিরিক্ত গ্রহণ করলে কী হয়
অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন বি৩ গ্রহণ করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন:
• ত্বক লাল হয়ে যাওয়া
• বমি বমি ভাব
• ডায়রিয়া
• লিভারের সমস্যা
সাধারণত ভিটামিন বি৩-এর অভাব দেখা যায় না, কারণ এটি অনেক খাবারে পাওয়া যায়। তবে যদি আপনার ভিটামিন বি৩-এর অভাবের ঝুঁকি থাকে, তাহলে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।
ভিটামিন বি৩ নিয়ে প্রচলিত মিথ
মিথ ১: ভিটামিন বি৩ বেশি খেলে কোলেস্টেরল কমে।
বাস্তবতা: ভিটামিন বি৩ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে, তবে এর জন্য উচ্চ মাত্রার ডোজ প্রয়োজন, যা স্বাস্থ্যকর নয়। অতিরিক্ত ভিটামিন বি৩ গ্রহণের ফলে লিভারের সমস্যা, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া এবং অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
মিথ ২: ভিটামিন বি৩ শুধু মাংস এবং ডিম থেকে পাওয়া যায়।
বাস্তবতা: ভিটামিন বি৩ অনেক উদ্ভিজ্জ খাবারেও পাওয়া যায়; যেমন বাদাম, বীজ, মটরশুঁটি এবং কিছু সবজি। নিরামিষাশীরাও সঠিক খাবার গ্রহণের মাধ্যমে তাঁদের ভিটামিন বি৩-এর চাহিদা পূরণ করতে পারেন।
মিথ ৩: ভিটামিন বি৩-এর অভাব খুব সাধারণ একটি সমস্যা।
বাস্তবতা: উন্নত দেশগুলোয় ভিটামিন বি৩-এর অভাব খুব একটা দেখা যায় না। কারণ, বেশির ভাগ খাবারেই ভিটামিন বি৩ থাকে। তবে অপুষ্টিতে ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যে এর অভাব দেখা যেতে পারে।
মিথ ৪: ভিটামিন বি৩ বেশি খেলে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
বাস্তবতা: ভিটামিন বি৩ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে তা ক্ষতিকর হতে পারে। এর ফলে লিভারের সমস্যা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া এবং অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে।
মিথ ৫: ভিটামিন বি৩ সাপ্লিমেন্ট সবার জন্য নিরাপদ।
বাস্তবতা: ভিটামিন বি৩ সাপ্লিমেন্ট সবার জন্য নিরাপদ নয়। বিশেষ করে লিভারের সমস্যা, আলসার বা রক্তপাতের সমস্যা থাকলে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ভিটামিন বি৩ বা নিয়াসিন আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। যদিও আপনি সাধারণত আপনার খাওয়া খাবার থেকে নিয়াসিন পেয়ে যাবেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে না খাওয়ায় গুরুতর অবস্থার কারণ হতে পারে। ভিটামিন বি৩ কোলেস্টেরল কমাতে এবং নির্দিষ্ট ধরনের হৃদ্রোগের ঝুঁকি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি উচ্চ রক্তচাপের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। তবে আপনি ওভার দ্য কাউন্টার বা প্রেসক্রিপশন নিয়াসিন অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করতে যাবেন না। গবেষণায় বলা হচ্ছে, শরীরে অতিরিক্ত নিয়াসিন হৃদ্রোগের কারণ হতে পারে। পরিমিত ভালো
লেখক: খাদ্য ও পথ্যবিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র