ঘুমের ওষুধ যখন রং-তুলি
শেয়ার করুন
ফলো করুন

লোকমুখে একটি কথা অনেকবার শোনা যায়, তা হলো যিনি ভালোমতো ঘুমাতে পারেন, তিনিই নাকি সুখী। মানুষ আরও বলে থাকে যে ঘুম হলো বিধাতার একটি অনেক বড় আশীর্বাদ, যা বর্তমান সময়ে বিজ্ঞানীরাও প্রমাণ পেয়েছেন। বিজ্ঞানীদের মতে, ঘুম হলো অনেক রোগের মহৌষধ।

এখন প্রশ্ন হলো, নির্ঘুম জীবন আমরা কেউ চাই না, তবু নির্ঘুম রাত কেন কাটাতে হয়? এ প্রশ্নের উত্তরে বিজ্ঞানীরা গবেষণায় অনেক কারণ বের করেছেন, তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণালব্ধ কারণ হলো ঘুমের আগে নেতিবাচক চিন্তা, কল্পনা বা টেনশন। তাই ঘুমানোর আগে নেতিবাচক চিন্তা বা কল্পনা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি বিকল্প কৌশল অনুশীলন করার কথা আর্ট থেরাপিস্টরা বলে থাকেন; আর তা হলো ঘুমের আগে নিজের কল্পনার রঙে আঁকা ছবি দেখা ও তা অনুভব করার মাধ্যমে ঘুমানোর অনুশীলন করা।

বিজ্ঞাপন

এই কৌশল আট বছর বা এর বেশি বয়সী ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য।
উপকরণ: পছন্দের যেকোনো রং বা মাধ্যম ও কাগজ
এই কৌশল দুটি ধাপে সম্পন্ন হবে।

ধাপ ১: নিজের কল্পনাকে কাগজে চিত্রায়িত করা।
• প্রথমে আর্ট পেপার বা কাগজ ও রং প্রস্তুত করতে হবে।
• তারপর নিজের মতো করে একটি দৃশ্য বা কোনো ছবি মনে করতে হবে, যা ঘুমানোর আগে অনেক সময় ধরে দেখলে ও কল্পনা করলে অনেক ভালো অনুভব হবে।
• নির্ধারিত দৃশ্যটি রঙিন কাগজে রঙিন উপকরণ বা রং দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, নিজে যেভাবে পারা যায়, সেভাবেই দৃশ্যটি ফুটিয়ে তুলতে হবে। এ জন্য একজন শিল্পীর মতো করে আঁকতে বা রং করতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। শুধু নিজে বুঝতে পারলেই হবে।
• আঁকা শেষ হলে ছবিটি ঘুমের সময় এমন কোনো জায়গায় রাখতে হবে, যেখানে চোখ যেতে পারে। তবে অনেকে শোবার ঘরে বিছানার সামনের দেয়ালে বা বিছানার পাশের টেবিলে রাখে, যাতে ছবিটি ঘুমানোর আগে সহজে চোখে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

ধাপ ২: ঘুমের আগে কৌশলটি যেভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
• ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার শরীর ও মন শান্ত করতে ও বাইরের জগৎ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে চোখ বন্ধ করে গভীরভাবে কয়েকবার শ্বাস নেবেন ও ছাড়বেন। যখন দেখবেন আপনার শরীর ও মন স্থির হয়েছে এবং জাগতিক জগৎ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পেরেছেন, তখন নিজের আঁকা ছবিটির দিকে তাকাবেন ও মনোযোগ দেবেন।

• ছবিটি দেখতে দেখতে ভাবতে হবে যে আপনি স্বস্তি ও নিরাপদ বোধ করছেন।
• এই ছবি কী বা কোন জায়গা অথবা এটি কোথায়, তা ভাবতে কয়েক মুহূর্ত সময় নিতে হবে।
• কল্পনা করতে হবে যে ওই জায়গা বা ছবিটি যা কল্পনা করতে বলছে, আপনি সেখানে পৌঁছেছেন। এখন কেমন অনুভব করছেন, তাতে মনোযোগ দিতে হবে এবং চোখ বন্ধ করে কিছু শুনতে ও গন্ধ অনুভব করার চেষ্টা করতে হবে।
• নিজেকে ইতিবাচক বার্তা দিতে হবে, যেমন ‘আমি এখানে নিরাপদ’ বা ‘আমি এখানে স্বস্তি বোধ করছি’।
• যতক্ষণ না আপনি ঘুমিয়ে পড়ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত এভাবে অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে।
• প্রতি রাতে রুটিন অনুযায়ী চর্চা করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, আমাদের কল্পনাশক্তি অনেক শক্তিশালী, যদি তা না হতো তাহলে আমরা স্বপ্নকে ঘুমের সময় বাস্তব মনে করতাম না। তাই ঘুমোনোর আগে নেতিবাচক চিন্তা ও টেনশন দূর করতে আঁকা ছবির কল্পনা বাস্তবে ফুটিয়ে তুলে নিজের নেতিবাচক চিন্তা ও টেনশন দূরে রেখে নির্মল ঘুম হোক আপনার প্রতিদিনের সঙ্গী। এই শুভকামনা রইল।

ছবি: পেকজেলডটকম ও লেখক

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৬: ০০
বিজ্ঞাপন